সন্তুষ্ট মার্কিন জোট
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এই কথা জানানো হয়েছে৷ এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অ্যালায়েন্সের এক বছরের কার্যক্রমের পর্যালোচনা নিয়ে সম্প্রতি একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ ঐ বৈঠকে অ্যালায়েন্সের প্রধান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কংগ্রেস সদস্য অ্যালেন টসার বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের উন্নয়নে অ্যালায়েন্স গঠনের পটভূমি তুলে ধরেন৷ এসময় যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর জর্জ মিশেল, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের শ্রমিক নেতাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন৷
বৈঠকে অ্যালেন টসার বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, গত এক বছরে এই জোটের কার্যক্রমে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে৷ তাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, শতভাগ কারখানা (৫৮৭টি সবগুলো) ইতিমধ্যে পরিদর্শন সম্পন্ন হয়েছে৷ এর মধ্যে অর্ধেক কারখানার সংস্কার কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে৷
পরিদর্শনের সময় ঝুঁকি বিবেচনায় ১৪টি কারখানা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ বন্ধ হওয়া কারখানার শ্রমিকদের বেতনের অর্ধেক অংশ অ্যালায়েন্স পরিশোধ করেছে৷
আগের কথা
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের সমালোচনার প্রেক্ষিতে অ্যামেরিকাভিত্তিক ২৬টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত হয় ‘অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি' – সংক্ষেপে যেটা অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত৷ জোট গঠিত হওয়ার এক বছরের মধ্যে জোটের সদস্যদের অর্ডার সরবরাহ করে এমন বাংলাদেশি কারখানা পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত হয়৷ সেই সঙ্গে ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় ৫ বছরের জন্য কারখানা সংস্কারে একটি তহবিলও গঠন করা হয়৷
অ্যালায়েন্সের পাশাপাশি ‘অ্যাকর্ড' নামে ইউরোপভিত্তিক ক্রেতাদের সমন্বয়ে গঠিত আরেকটি জোটও কারখানা পরিদর্শন কার্যক্রম চলমান রেখেছে৷
অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য শুরুতেই প্রতিষ্ঠানগুলো ৫ কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল গঠন করেছিল৷ এর বাইরে কারখানা ভবন সংস্কারে আরো ১০ কোটি ডলার স্বল্প সুদে ঋণ তহবিল এবং সম্প্রতি আরো কয়েকটি কোম্পানি মিলে আরো ২ কোটি ডলারের তহবিল গঠন করেছে৷ এই তহবিল থেকে আগামী ৫ বছর কারখানা ভবন সংস্কারে উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে৷
আরও কারখানা বন্ধের আশঙ্কা
পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য মতে, সাব-কন্ট্রাক্টিং করে এমন কারখানাগুলো ক্রমেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ আসছে ঈদের পরও এমন অনেকগুলো কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ গত বছর রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর প্রায় ৪ শতাধিক ছোট গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে৷
তবে গার্মেন্টস কারখানা বন্ধের বিষয়ে কমপ্লায়েন্স ইস্যুর চেয়ে মালিকরা বাড়তি উৎপাদন খরচ এবং পোশাকের দাম বৃদ্ধি না হওয়ার কারণকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন৷ তাঁদের মতে, কমপ্লায়েন্স করতে যেমন খরচ বাড়ে, তেমনি বর্ধিত মজুরি প্রদান এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজার ধরতে গিয়ে টিকে থাকাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে৷ যে কারণে মালিকদের অনেকেই এদিকে নজর দিচ্ছে না৷ ফলে স্বল্প পুঁজি ও ছোট পরিসরে গড়ে উঠা কারখানাগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না৷
বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ'র এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৩ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া বেশিরভাগ কারখানাই শেয়ারড ভবনে (গার্মেন্টস কারখানার পাশাপাশি অন্য কার্যক্রমও চলে এমন ভবন) এবং সাব-কন্ট্রাক্ট ভিত্তিতে কাজ করত৷ কিন্তু বন্ধ হওয়া এসব কারখানার শ্রমিকদের বেতনভাতাদি অপরিশোধিতই রয়ে যাচ্ছে৷
বিজিএমইএ'র হিসাবে রানা প্লাজা দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে ২০৯টি কারখানা বন্ধ হয়েছে৷ এর বাইরে বিকেএমইএ'র সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোর মধ্য থেকে আরো ১৯৩টি কারখানা বন্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের কর্মকর্তারা৷
শ্রমিক বিক্ষোভ
সম্প্রতি আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার সোনিয়া ফাইন নিট নামে একটি কারখানার শতাধিক শ্রমিক রাজধানীর বিজিএমইএ ভবনের সামনে পাওনা পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন৷ কারখানার মালিক এনায়েত উদ্দিন মাহমুদ কায়সার ডয়চে ভেলেকে বলেন, আইন মেনেই ঐ কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে৷ শ্রমিক এবং ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা অন্যায্যভাবে পিস রেট বাড়ানোর দাবি করছিল৷ কারখানা চালু রাখার বিষয়ে তাদের বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নেই৷ শেষ পর্যায়ে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, শ্রমিকরা সকালে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যাবে আর মাস শেষে তাদের বেতন দিতে হবে৷ এভাবে তো আর কারখানা চালু রাখা যায় না৷