ফুটবলারদের মানসিক বিষাদ
৩ জানুয়ারি ২০১৩২০০৯ সালে চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন জার্মান জাতীয় একাদশের গোলরক্ষক রবার্ট এনকে৷ পরে প্রকাশ পায়, তাঁর মানসিক বিষাদের সূচনা ২০০৩ সালে, যখন তিনি বার্সেলোনার হয়ে খেলছিলেন৷ এরপর ২০০৬ সালে আসে একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি: এনকের শিশু কন্যাসন্তান একটি মারাত্মক অসুখে মারা যায়৷ এনকে তলিয়ে যান বিষাদের অতলে৷
আশ্চর্যের কথা এই যে, খেলার মাঠে কিন্তু এনকের এই অসুখের কোনো চিহ্ন দেখেনি কেউ৷ বরং তিনি যেন খেলা থেকে খেলায় ক্রমেই আরো দুর্ধর্ষ হচ্ছিলেন৷
২০১১ সালে ইংল্যান্ডের গ্যারি স্পিড গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে ঠিক একই রকম বিমূঢ়তার সৃষ্টি করেন৷ স্পিড ছিলেন এভার্টন, নিউক্যাসল ইউনাইটেড এবং ওয়েল্স-এর প্রাক্তন প্লেয়ার৷ মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা আগেও কিন্তু স্পিড বিবিসি'র ফুটবল ফোকাস অনুষ্ঠানে খোশমেজাজে কথাবার্তা বলেছেন৷
মানসিক বিষাদে সাধারণ মানুষেরাও যেমন ভোগে, তেমনই ভোগেন ফুটবলের আপাতদৃষ্টিতে সফল এবং আর্থিক বিচারে অতীব স্বচ্ছল পেশাদাররা৷ কিন্তু ফুটবল খেলা এবং খেলোয়াড়দের যে পুরুষ, এমনকি বীরপুরুষসুলভ ভাবমূর্তি আছে, তার সঙ্গে মানসিক বিষাদের ছবিটা বিশেষ মেলে না, বিশেষ করে যদি ফুটবল ফ্যানদের কথা ভাবা যায়৷
অথচ একজন পেশাদারি ফুটবল খেলোয়াড়কে অতি কম বয়সে এক ধরণের বিরাট দায়িত্ব এবং প্রত্যাশার চাপ সহ্য করতে হয়; তাঁর সংক্ষিপ্ত খেলোয়াড়ি জীবনে ভবিষ্যতের সংস্থান করে নেওয়ার চাপ যুক্ত হয় সেই সঙ্গে৷ এছাড়া থাকে প্রতি সপ্তাহান্তে মাঠে প্রতিপক্ষ এবং ফ্যানদের সঙ্গে মোলাকাত, সুউচ্চ সাফল্যের আশা এবং সুগভীর ব্যর্থতার আশঙ্কা৷ এ সব মিলিয়ে – যত সঙ্গোপনেই হোক না কেন – মানসিক বিষাদের মেঘ ঘনিয়ে আসাটা কিছু আশ্চর্যের নয়৷
এতদিনে লিভারপুলের প্রাক্তন স্ট্রাইকার স্ট্যান কলিমোর-এর মতো ফুটবলাররা ডিপ্রেশন বা মানসিক বিষাদ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে শুরু করেছেন৷ মাঠে একজন ভীত, সন্ত্রস্ত তরুণ ফুটবলারের দৃষ্টিকোণ থেকে ফুটবলের টেস্টেস্টেরন-পরিপূর্ণ জগৎটাকে দেখাতে শুরু করেছেন৷ পারফর্ম না করতে পারার শঙ্কা, মারমুখী ফ্যানদের আতঙ্ক৷ এমন একটা জগৎ, যেখানে কোচই একমাত্র ভরসা৷
কাজেই সৈন্যদের ক্ষেত্রে ‘পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজর্ডার'-কে স্বীকৃতি দিতে যেমন বহুদিন সময় লেগেছে, ফুটবলের ক্ষেত্রে ডিপ্রেশনেরও স্বীকৃতি পেতে সম্ভবত ঠিক ততটাই সময় লাগবে৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স, গার্ডিয়ান, সিএনএন)