শিশুর জন্য ল্যাপটপ
৭ জুলাই ২০১২‘শিশুপ্রতি একটি ল্যাপটপ' নামের এই প্রকল্প বাস্তবে রূপ দিতে পেরুর সরকারকে খরচ করতে হয়েছে প্রায় ২০ কোটি ডলার৷ কিন্তু প্রযুক্তি সম্প্রসারণে এমন বিশাল উদ্যোগের যথার্থ উপযোগিতা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হচ্ছে৷
শিশুদের এই ল্যাপটপ ব্যবহার নিবিড়ভাবে শেখানোর জন্য এখনও ভালোভাবে প্রশিক্ষিত হয়ে উঠেননি গ্রামাঞ্চলের শিক্ষকরা৷ নানা সফটওয়ার চালু এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে জটিলতা এখনও দূর করা সম্ভব হচ্ছে না৷ এমনকি অনেকের জন্যই ল্যাপটপের সাথে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই৷ প্রকল্পের নিয়মের আওতায় অনেক শিশু তাদের ল্যাপটপ নিজ বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেনি৷ আবার অনেক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই৷
পেরুর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পের তদারককারি কর্মকর্তা সান্দ্রো মারকোনি স্বীকার করেছেন যে, প্রকৃতপক্ষে শিক্ষকদের এজন্য প্রস্তুত না করেই তাদের ল্যাপটপগুলো বিতরণের কাজ সম্পন্ন করতে হয়েছে৷
কমদামি এবং শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য উপযোগী ল্যাপটপ বিতরণের কর্মসূচি অবশ্য পেরুতেই প্রথম নয়৷ বরং বিশ্বের বেশ কিছু দেশেই এমন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে৷ ইন্টেল করপোরেশন জানিয়েছে, তারা আর্জেন্টিনার জন্য ৭০ লাখেরও বেশি ল্যাপটপ সরবরাহ করেছে৷ এছাড়া ভেনেজুয়েলা একটি পর্তুগিজ প্রতিষ্ঠানের তৈরি এরকম কমদামি ১৬ লাখ ল্যাপটপ বিতরণ করেছে৷
‘শিশুপ্রতি একটি ল্যাপটপ' নামের এই উদ্যোগের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন এমআইটি মিডিয়া ল্যাব এর প্রতিষ্ঠাতা নিকোলাস নেগরোপোন্তে৷ উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিশুদের দারিদ্র্যের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করতে এটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে উদ্যোক্তারা মনে করেন৷ এ লক্ষ্যে ২০০৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৪৬টি দেশের শিশুদের মাঝে প্রায় ২৫ লাখ ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে নিচের শ্রেণির শিশুদের জন্য সবুজ-সাদা মডেলের এবং বড় শিশুদের জন্য একটু বড় আকারের কি-বোর্ড-ওয়ালা নিল-সাদা মডেলের ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে৷
তবে পেরু যতো বেশি সংখ্যক ল্যাপটপ বিতরণ করেছে, ততো বেশি ল্যাপটপ আর কোন দেশ বিতরণ করেনি৷ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ুয়া সফটওয়ার প্রকৌশলী জেফ পাজের বলেন, ‘‘এটা খুবই চমৎকার উদ্যোগ৷'' ২০১০ সালে পেরুর করদিয়েরা ব্লাঙ্কা অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে ঘুরে ঘুরে ল্যাপটপ চালু ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে সহায়তা করেছেন তিনি৷ পাজের'ও স্বীকার করেন যে, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন কিছু শিক্ষক রয়েছেন যারা যথেষ্ট দক্ষ নয়৷
পেরুর গ্রামাঞ্চলের ৩১৯টি বিদ্যালয় ঘুরে এই প্রকল্পের উপযোগিতা ও কার্যকারিতার উপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন ইন্টার-অ্যামেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের গবেষকরা৷ তাদের মন্তব্য, ‘‘এই কর্মসূচির দৃশ্যমান কার্যকারিতা নেই বললেই চলে৷'' এই গবেষক দলের অন্যতম সদস্য চিলির ইউজেনিও সেভেরিন বলেন, ‘‘শুধুমাত্র প্রযুক্তি অবস্থার পরিবর্তন করে দেবে কিংবা শিক্ষার উন্নতি ঘটাবে এমন ধারণাকে নাকচ করে দিয়েছে এখানকার অবস্থা ও পর্যবেক্ষণ৷''
তাঁদের গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিটি শিশুকে এভাবে ল্যাপটপ দেওয়ার ফলে শিশুদের অঙ্ক কিংবা ভাষা জ্ঞান, শ্রেণিকক্ষের পড়াশোনা, বাড়ির কাজ কিংবা লেখাপড়ার অভ্যাসের ক্ষেত্রে কোন উন্নতি দেখা যায়নি৷ অবশ্য ইতিবাচক দিক হিসেবে লক্ষ্য করা গেছে যে, কম্পিউটারের সাথে শিশুদের পরিচয় ঘটেছে, যুক্তিবিন্যাস, বাক সাবলীলতা এবং তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে তাদের বেশ উন্নতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন সেভেরিন৷
এএইচ / জেডএইচ (এপি)