পেট চালাতে সেনেগালের মৎস্যজীবীরা স্পেনে
২২ মার্চ ২০২৪সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সালকেই দেশে পর্যাপ্ত মাছ না থাকার জন্য দায়ী করছেন মৎস্যজীবী খলিফা এনদৌর৷ বাধ্য হয়ে উত্তরপূর্ব স্পেনে কৃষি খাতে সহকারির কাজ খুঁজছেন তিনি৷
সেনেগালে তার অপেক্ষায় স্ত্রী, মারিয়াতো এমবোদজে৷ রাজধানী ডাকারের দক্ষিণের শহর বারগনিতে থাকেন তিনি ও তাদের তিন সন্তান৷ মাছ প্রক্রিয়াকরণের কাজ জানা এই নারীও কাজ পাচ্ছেন না৷ দিন রাত স্বামীর কাজের অনুমতি পাবার খবর শোনার আশায় থাকেন মারিয়াতো৷
খলিফার মতো আফ্রিকার হাজারো সাবেক মৎস্যজীবীরা ছোট পালতোলা নৌকা বা ডিঙিতে চেপে বিপজ্জনক যাত্রায় পাড়ি দেন, কারণ পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় নজরে পড়ছে মাছের অভাব৷
খলিফার মতো বহু মানুষেরই অভিযোগ সরকারের দিকে, কারণ দেশের পানিতে মাছ চাষের অনুমতি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বা চীনের মতো শক্তির হাতে তুলে দিয়েছে সরকার৷ রোববার সেনেগালে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে নির্বাচন৷ সেখানেও বড় ইস্যু হয়ে সামনে আসছে মাছের অভাবের দিকটি৷
এনদৌরের মতে, ‘‘সেনেগালের সাগর মরে গেছে৷ কারণ ম্যাকি সাল সব পানিই বেচে দিয়েছে৷''
ম্যাকি সাল ২০১২ সাল থেকে সেনেগালকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন৷ তার সরকারের মৎস্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের তরফে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি৷ এই ম্যাকি সালের নেতৃত্বেই ইইউ'র সাথে একটি চুক্তি করে সেনেগাল৷ দশ হাজার টন টুনা মাছ চাষ করার জন্য ২০১৪ সাল থেকে ইইউ সেনেগালকে ১৭ লাখ ইউরো দিয়েছে৷ এছাড়া, জাহাজের মালিকদেরও বছরে ১৩ লাখ ৫০ হাজার ইউরো দিতে হয় বলে জানাচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন৷
বেসরকারী সংস্থাদের মতে, বিদেশি ট্রলারগুলিই এই অঞ্চলে মাছ কমে যাবার পেছনে রয়েছে৷ এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস ফাউন্ডেশন (ইজেএফ) ২০২৩ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, ২০১২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে অবাণিজ্যিক বা পরিবারভিত্তিক মৎস্যজীবীদের ধরা মাছের পরিমাণ ৫৮ শতাংশ কমেছে৷
যে সাগরে নেই কাজ
পাঁচ বছর আগের তুলনায় বর্তমানে মৎস্যজীবীরা তাদের পরিবারের ভরনপোষণ ঠিকমতো করতে পারছেন না, বলে জানান ইজেএফকে সাক্ষাৎকার দেওয়া মৎস্যজীবীদের ৭৮ শতাংশ৷
২০ বছর বয়সি এনগোম এনদৌরের সাথে রওয়ানা দিয়ে এসে পৌঁছায় কাটালুনিয়ার গুইসোনা শহরে৷ একটি বাজারে হাঁটতে হাঁটতে তিনি বলেন, ‘‘আগের মতো ১০০ শতাংশ কর্মক্ষম নেই এই সাগর৷ তাই আমরা নৌকা করে এখানে এসেছি৷''
রোববারের নির্বাচনে লড়ছেন আনতা বাবাকার৷ জয়ী হলে ইইউর সাথে করা চুক্তিকে পুনর্বিবেচনা করবেন বলে জানান তিনি৷ সেনেগালিজ প্রেস এজেন্সিকে তিনি বলেন যে এই চুক্তির কারণেই সেনেগালের তরুণরা মাছের অভাবে নৌকায় চেপে ইউরোপের দিকে রওয়ানা দিচ্ছেন৷
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ক্যানারি দ্বীপে এসে পৌঁছায় রেকর্ড সংখ্যক মানুষ, ৩৯ হাজার ৯১০জন৷ এই সংখ্যা আরো বাড়ছে বলে জানায় তারা৷ অভিবাসী অধিকার সংস্থা ওয়াকিং বর্ডার্সের মতে, এই পথে আসতে গিয়ে গত বছর ছয় হাজার সাতজন প্রাণ হারিয়েছেন৷
ক্যানির দ্বীপে পৌঁছে এনদৌর ও এনগোম গুইসোনার দিকে যান৷ যদিও মৎস্যজীবীর কাজই তাদের প্রথম পছন্দ, কিন্তু সেই কাজের অভাবে কৃষিকাজে সহকারীর কাজে তাদের আপত্তি নেই৷ বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি পেতে তাদের তিন বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে৷
এনগোমের দাদা সুলেমানে ফায়েও একজন সাবেক মৎস্যজীবী৷ তার নাতি সেনেগাল ছাড়ায় তিনি খুশি, কালন পরিবার চালানোর আর কোনো উপায় ছিল না৷ সমুদ্রতটে দাঁড়িয়ে দূর থেকে আসা মৎস্যজীবীদের দেখেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘এই যে দেখুন, তারা মাছ ধরে এসেছে৷ বাক্সগুলি দেখুন, একদম খালি, কিছুই নেই৷''
এসএস/এসিবি (রয়টার্স)