ড্রেসডেনে পেগিডা-র সমাবেশ
১৩ জানুয়ারি ২০১৫পেগিডা কথাটি যে ক'টি শব্দের আদ্যক্ষর নিয়ে গঠিত, সেগুলির অর্থ দাঁড়ায়: প্রতীচ্যের ইসলামীকরণের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমী ইউরোপীয়দের জোট৷ গত দশ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জার্মানির পূর্বাঞ্চলে স্যাক্সনি রাজ্যের রাজধানী ড্রেসডেনে প্রতি সোমবার পেগিডা সমর্থকরা তাদের সমাবেশ করে আসছেন৷
প্যারিসের শার্লি এব্দো হত্যাকাণ্ডের ফলে যে জার্মানিতেও ইসলাম বিরোধী মনোভাব খোরাক পাবে, সেটা জানাই ছিল৷ বলতে কি, এই সোমবার ড্রেসডেনে যে পুলিশের হিসেবে পঁচিশ হাজার – অথবা উদ্যোক্তাদের হিসেবে চল্লিশ হাজার – পেগিডা সমর্থক জড়ো হয়, তাতে চমকে যাবার কিছু নেই৷ যুগপৎ পুবের লাইপসিশ শহরে ত্রিশ হাজার মানুষ পেগিডা-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান, গোটা জার্মানিতে পেগিডা বিরোধী আন্দোলনকারীদের সংখ্যা ছিল এক লাখ৷
পেগিডা-কে সাবেক পূর্ব জার্মানির একটা আঞ্চলিক বিকাশধারা ভাবার যথেষ্ট কারণ থাকলেও, তাকে উড়িয়ে দেওয়ার মতো ভুল করা উচিত নয় – বলছেন বিশ্লেষকরা৷ প্রথমত, পেগিডা আন্দোলনের ছত্রছায়ায় শুধু ইসলাম বিরোধী এবং বহিরাগত বিদ্বেষী মনোবৃত্তির মানুষরাই একত্রিত হননি, সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জার্মান রাজনীতি ও রাজনীতিকদের প্রতি অনাস্থা, জার্মান প্রেস ও মিডিয়ার প্রতি বৈরিতা৷
কাজেই সোমবার ড্রেসডেনে কী ঘটেছে এবং বলা হয়েছে, তা জানার প্রয়োজন আছে৷ পেগিডা-র প্রতিষ্ঠাতা লুৎস বাখমান এদিন তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, ‘‘পেগিডা-র অস্তিত্বের যৌক্তিকতার সর্বশেষ প্রমাণ পাওয়া গেল প্যারিসের আক্রমণে৷'' এর পর তিনি সমবেত জনতাকে প্যারিসে নিহত ১৭ জন মানুষের স্মরণে এক মিনিটের নীরবতা পালন করতে অনুরোধ করেন৷
‘‘সংবাদমাধ্যম আমাদের একটি ভুল ভাবমূর্তি তুলে ধরা সত্ত্বেও, এখানে যে সব সাংবাদিক আছেন, তাঁদের আমরা স্বাগত জানাচ্ছি,'' বলেন বাখমান৷ উপস্থিত জনতা শিষ ও টিটকারি দিয়ে এই ব্যঙ্গকে স্বাগত জানায়৷ বস্তুত তারা ‘‘ল্যুগেনপ্রেসে'' বা ‘‘মিথ্যেবাদী সংবাদমাধ্যম'' ধ্বনি দেয়, যা কিনা অনেককে নাৎসি আমলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে৷
পেগিডা আন্দোলনকারীদের হাতের শালু, নিশান ও পতাকাতেও তাদের মনোভাব স্পষ্টভাবে ব্যক্ত হয়েছে৷ ‘‘আমরা জার্মানিতে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা হওয়া রোধ করেছি,'' বড়াই করেছেন বাখমান৷ সমর্থকরা হাতের শালু-তে খোদ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-কে দেখানো হয়েছে হিজাব পরা অবস্থায়৷ আরেকটি শালুতে লেখা: ‘‘সরকার ও বিচার বিভাগ ইসলামের খোশামুদি করছেন৷''
পেগিডা-র আরেকটি বিশেষত্ব হল, সমর্থকদের মনোভাব সাধারণভাবে পশ্চিম বিরোধী – এমনকি পুটিনের প্রতি সহানুভূতিরও কোনো অভাব নেই৷ তাজিকিস্তান থেকে আগত কোনো বহিরাগত মহিলা; জার্মান, স্যাক্সন এবং ফরাসি পতাকার সঙ্গে রুশ পতাকা ও শালুতে লেখা রুশ স্লোগান, এ সব মিলিয়েই পেগিডা, অর্থাৎ ড্রেসডেনের পেগিডা – যা বাকি জার্মানির ক্ষেত্রে স্বভাবতই প্রযোজ্য নয়, অন্তত শতকরা একশো ভাগ নয়৷ যে কারণে পশ্চিমে কোলোন কিংবা দক্ষিণে মিউনিখে গেলেই বোঝা যাবে, হাজার হাজার মানুষ তাঁদের স্বদেশে বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষদের সহাবস্থানই কামনা করেন৷
এসি/এসবি (ডিপিএ, এএফপি)