জঙ্গিদের ড্রেস রিহার্সাল
২ সেপ্টেম্বর ২০১৯গত ২৬ মে মালীবাগে পুলিশের গাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে৷ ওই বিস্ফোরণে পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর রাশেদা খাতুন ও একজন রিকশা চালক আহত হন৷
২৯ এপ্রিল রাতে গুলিস্তান পুলিশ বক্সের কাছে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলা চালানো হয়৷ এই হামলায় ট্রাফিক কনস্টেবল নজরুল ইসলাম, লিটন চৌধুরী ও কমিউনিটি পুলিশ সদস্য মো. আশিক আহত হন৷
আর সবশেষ ৩১ আগস্ট রাতে সায়েন্স ল্যাবরেটরি পুলিশ বক্সের কাছে বোমা হামলায় আহত হন পুলিশের সহকারী উপ পরিদর্শক শাহাবুদ্দিন এবং কনেস্টবল আমিনুল৷ তারা দু'জনই স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের প্রটোকলের দায়িত্বে ছিলেন৷
এই তিন হামলার জন্যই পুলিশ জঙ্গিদের দায়ী করেছে৷ পুলিশকে টার্গেট করেই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন৷ আর হামলায় শক্তিশালী বিস্ফোরক ব্যবহারের কথা জানায় পুলিশ৷
এরমধ্যেই গত ২৩ জুলাই রাতে তেজগাঁর খামার বাড়ি এবং পল্টনের পুলিশ বক্সের কাছ থেকে পেতে রাখা বোমা উদ্ধার করে পুলিশ৷ পুলিশ বোমা উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নাশকতার উদ্দেশ্যে জঙ্গিরা ওই বোমা বিস্ফোরক রেখেছিল বলে জানিয়েছে৷ তিনটি বোমা হামলা এবং দু'টি বোমা পেতে রাখার প্রত্যেকটি ঘটনায় আলাদাভাবে দায় স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক এস্টেট( আইএস)৷
পুলিশ গত ৫ অগাস্ট ঢাকার বসুন্ধরা এলাকা থেকে মোহাম্মদ শিবলী শাহাজাদ ওরফে সাদী , শাহ এম আসাদুল্লাহ মর্তুজা কবীর ওরফে আবাবিল, মাশরিক আহমেদ, মো. আশরাফুল আল আমীন ওরফে তারেক ও এস এম তাসনিম রিফাত নামের পাঁচ তরুণকে আটক করে৷ তাদের কাছ থেকে বিস্ফোরকও উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, এই তরুণেরা জেএমবির নতুন শাখা ‘উলফ প্যাক'-এর সদস্য৷ তারা পুলিশের ওপর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল৷ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের(সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন,‘ হোলি আর্টিজান হামলার পর আমরা জঙ্গিদের মূল নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে পারলেও তারা ছোট ছোট সেলের মাধ্যমে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে৷ তারা সাইবার স্পেস এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করছে পুরো মাত্রায়৷ '
২০ জন বাংলাদেশি বিভিন্ন সময় দেশ ত্যাগ করে সিরিয়া বা অন্যকোনো দেশে গিয়ে আইএস-এ যোগ দিয়েছেন বলে তিনি জানান৷
২০১৬ সালের ১ জুলাই হোলি আর্টিজানের পর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ২২টি অভিযান পারিচালনা করা হয়৷ বিভিন্ন বাহিনীর অভিযানে প্রায় একশ জঙ্গি নিহত হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক হাজারেরও বেশি উগ্রপন্থীকে৷
সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার হামলার ব্যাপারে রমনা জোনের উপ পুলিশ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘এই ঘটনায় মামলা হয়েছে৷ পুলিশের ওপর কেন বার বার হামলা হচ্ছে আমরা তদন্ত করে দেখছি। আর হামলার ঘটনার নেপথ্যে কী আছে তাও আমরা কের করার চেষ্টা করছি৷''
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডোর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী মনে করেন, ‘‘জঙ্গিদের পুলিশের ওপর এই ছোট ছোট হামলা দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য হতে পারে৷ হোলি আর্টিজানের পর ব্যাপকজঙ্গিবিরোধী অভিযানে তারা দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ এখন হয়তো তারা সংগঠিত হতে চায় ৷ তারই প্রাথমিক পদক্ষেপ এটা হতে পারে৷ বড় হামলা যে হবে না তা বলা যায় না৷ আর আইএস পর্যুদস্ত হওয়ার পর তারা নতুন এলাকা খুঁজছে৷ বাংলাদেশও তাদের টার্গেট হতে পারে৷ তবে এখানকার মানুষের জঙ্গিবিরোধী যে মনোভাব তাতে তারা সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হয় না৷
তিনি বলেন, ‘‘সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় পুলিশের ওপর হামলাকে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন বড় হামলার টেষ্ট কেস বা পূর্ব প্রস্তৃতি৷ সেটাও হতে পারে৷''
আর বাংলাদেশ ইন্সটিউট অব পিস এন্ড সিকিউরিটি স্ট্যাডিজ-এর(বিআইপএস) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল(অব.) মনিরুজ্জামান বলেন, ‘‘জঙ্গিরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ঊঠতে চাইছে৷ তবে এবার তারা তাদের হামার কৌশলে পরিবর্তন এনেছে৷ তারা পুলিশ বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে টার্গেট করে হামলা করছে। সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলকায় তারা মন্ত্রীর গাড়ি বহরে হামলা করেছে৷ এর ইমপ্যাক্ট বেশি৷ পাবলিক প্লেস বা সাধারণ মানুষের ওপর হামলার চেয়ে এই হামলার গুরুত্ব বেশি৷''