1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‘পুরুষ, তুমি ‘মানুষ' থাকো''

আশীষ চক্রবর্ত্তী২৫ এপ্রিল ২০১৫

বাংলাদেশেও ‘আমার জন্য মরো না'-র মতো গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে৷ গ্রন্থটা কলেবরে যে মহাকাব্যের রূপ নেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ বাংলাদেশের নারীরা তো প্রতিনিয়তই ‘মার' খাচ্ছে!

https://p.dw.com/p/1FDMu
Symbolbild Missbrauch Opfer
ছবি: Fotolia/DW

‘ডোন্ট ডাই ফর মি', অর্থাৎ ‘আমার জন্য মরো না'৷ পেরুতে প্রকাশিত হয়েছে এই নামের একটি গ্রন্থ৷ এ খবরের সঙ্গে বার্তা সংস্থা এএফপি ২০০৫ সালের একটি সমীক্ষার কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও-র সেই সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ১০ বছর আগে পুরুষ সঙ্গীদের প্রহারের শিকার নারীর শতকরা হার পেরুতেই সবচেয়ে বেশি ছিল৷ সে বছর দক্ষিণ আমেরিকার ওই দেশে অন্তত ৬১ ভাগ নারীকে তাদের পুরুষ সঙ্গীরা শারীরিক নির্যাতন করে৷ সমীক্ষা শেষে ১০টি দেশের একটি তালিকা করেছিল ডাব্লিউএইচও৷ বাংলাদেশও ছিল সেই তালিকায় ৷ মেয়েদের পেটানোর মতো জঘন্য কাজে ব্রাজিল, ইথিওপিয়া, জাপান, নামিবিয়া, সামোয়া, সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রো, থাইল্যান্ড এবং তাঞ্জানিয়ার পুরুষরাও ছিল পেরু আর বাংলাদেশের কতিপয় ‘পুরুষ' নামের কলঙ্কদের পাশে৷

গত দশ বছরে বাংলাদেশের নারীদের অবস্থার কি এক্ষেত্রে খুব উন্নতি হয়েছে? হয়নি৷ মাত্র তিন মাস আগে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালের তুলনায় পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৪ সালে নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা ১১ শতাংশ এবং পারিবারিক নির্যাতন ৪৪ শতাংশ বেড়েছে৷শুধু পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে রচিত এ প্রতিবেদন অবশ্যই নারী নির্যাতনের পূর্ণাঙ্গ চিত্র নয়৷ সবাই নির্ভয়ে সব বলতে পারলে ওই ১১ এবং ৪৪ শতাংশ নিশ্চয়ই যথাক্রমে ২২ এবং ৬৫ বা তার বেশি হতো৷

এ অনুমানকে যাচাই করে নিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ওয়েবসাইটে ঢুঁ মেরেছিলাম৷ ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ- এই তিন মাসের পরিসংখ্যান দেখেই আমার চক্ষু চড়কগাছ৷ আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানাচ্ছে, শুধু পত্রিকার খবর অনুযায়ীই জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে বাংলাদেশে ‘ঘরোয়া নির্যাতনে' মারা গেছেন ৯৯ জন নারী৷ এর মধ্যে স্বামীর অত্যাচার সইতে না পেরে মৃত্যুর পথ ধরেছেন ১১জন, স্বামীর প্রহারে মারা গেছেন ৫৮ জন, স্বামীর পরিবারের লোকজনদের অত্যাচারে নিহত ১০ এবং নিজের আত্মীয়দের প্রহারে প্রাণ হারিয়েছেন ৪ জন নারী ৷ হত্যা ৯৯টি, কিন্তু মামলা হয়েছে মাত্র ৪৫টি৷

ওই সময়ে যৌতুকের বলী হয়েছেন ৪৩ জন নারী ৪৩ জনের মধ্যে ৩ জন স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির লোকদের পাশবিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন, বাকি ৪০ জনের ক্ষেত্রে স্বজনদের অভিযোগ, যৌতুক আদায়ের উদ্দেশ্যে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন চালিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে তাঁদের৷

গৃহস্থালি কাজ করতে গিয়ে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার, অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার, ফতোয়া দিয়ে জনসমক্ষে অপমান-নির্যাতন- এসব যোগ করলে তিন মাসের চিত্রটা কেমন হতে পারে?

Deutsche Welle DW Arun Chowdhury
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

ধরা যাক, স্বাধীনতার পরের ৪৩ বছরের একটা হিসেব টানা হলো৷ তারপর শুরু হলো পেরুর নারীদের মতো বাংলাদেশেও নির্যাতনে নিহত এবং আহতদের গল্প সংগ্রহের অভিযান৷ একেবারে শেষে চিঠি, ই-মেল, মোবাইল ফোনের মেসেজ বাছাই করে গ্রন্থ প্রকাশ৷ ২৫টি নাকি, ২৫ শ' হৃদয়স্পর্শী গল্প পাওয়া যাবে – সে বিতর্ক থাক৷ গ্রন্থের নাম, ‘আমার জন্য মরো না'-ই থাকবে? নাকি ‘‘পুরুষ, তুমি ‘মানুষ' থাকো' নামটা বেশি ভালো? প্রেমিক বা প্রেমিকা তো একে অন্যের মৃত্যু কামনা করতে পারেইনা৷ আবেগ-অনুভূতির পাশাপাশি মানুষ যদি বিবেকটাকেও বাঁচিয়ে না রাখে সে তাহলে কেমন প্রেমিক-প্রেমিকা, কেমনইবা মানুষ!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য