পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান দিয়ে তৈরি বার্লিনের ভবন
১১ জানুয়ারি ২০২৩বার্লিনের অন্যতম সেরা ‘কো ওয়ার্কিং স্পেস' হিসেবে পরিচিত ভবনটির বাইরের ও ভেতরের অংশ পুরানো উপাদান দিয়ে তৈরি৷ কাঠ দিয়ে তৈরি এই কাঠামোটি কোনো এক সময়ে বিখ্যাত শিল্পী ইয়োকো ওনোর কফিনের ইনস্টলেশন ছিলো৷ আজ সেখানে নিশ্চিন্তে বসে টেলিফোন ও কাজ করা যায়৷ বার্লিনের ব্যার্গহাইন ক্লাবের এক প্রদর্শনীর উপাদান দিয়ে ভবনের লকারগুলি তৈরি করা হয়েছে৷ একটি অফিস ভবনের ফেলে দেওয়া সোফা সংগ্রহ করে একে অপরের সঙ্গে জুড়ে ‘সোফা ল্যান্ডস্কেপ' সৃষ্টি করা হয়েছে৷ ইন্টিরিয়র ডেকরেটর সাশা স্ট্রেমিং জানালেন, ‘‘আমরা ছুতোর মিস্ত্রীদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে কোথাও কিছু ভাঙা হলে সেখানে গিয়ে পুনর্ব্যবহারের উপযুক্ত জিনিসপত্র খুঁজি৷'
উপরতলায় এখনো নির্মাণের কাজ চলছে৷ বার্লিনের প্রাক্তন ব্রিউয়ারির জমিতে তথাকথিত এই ‘সার্কুলার হাউস' তৈরি হচ্ছে৷ মূলত নির্মাণকাজের বর্জ্যই নতুন ভবনের উপাদান৷ লক্ষ্যমাত্রা ব্যাখ্যা করে সাশা স্ট্রেমিং জানালেন, ‘‘চক্রাকার নির্মাণের স্বপ্ন হাতেনাতে করে দেখানোই সার্কুলার হাউসের মূলমন্ত্র৷ কেউ এর আগে এমন চেষ্টা চালায়নি৷ ঘটনা হলো বিশ্বব্যাপী নির্মাণ ক্ষেত্র কার্বন নির্গমনের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং আবর্জনার প্রায় ৬০ শতাংশের জন্য দায়ী৷ ভবিষ্যতে নির্মাণকাজ যে অন্যভাবেও করা সম্ভব, আমরা এখানে ঠিক সেটাই দেখিয়ে দিতে চাই৷''
২০১৯ সাল থেকে নির্মাণের কাজ চলছে৷ সামাজিক আবাসন ও কর্মক্ষেত্র হিসেবে ভবনটির চূড়ান্ত রূপ পাবার কথা৷ সেই লক্ষ্যে ব্রিউয়ারির পিপার গুদামে আরও তিনটি তলা যোগ করা হচ্ছে৷ একাধিক দপ্তর ও আটটি ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছে৷ যে সব মানুষের বার্লিনের রিয়েল এস্টেট বাজারে ভাড়া নেবার সামর্থ্য নেই, তাদেরকে এই ইউনিটগুলি ভাড়া দেওয়া হবে৷ সাশা স্ট্রেমিং বলেন, ‘‘প্রান্তিক মানুষেরা এখানে থাকার সুযোগ পাবেন৷ অর্থাৎ উৎস, ত্বকের রং অথবা হয়তো বেতনের কারণে যে সব মানুষের বাসা ভাড়া নেওয়ার উপায় বা সামার্থ্য নেই তাদের জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ এমন ডাইভার্সিটি বা বৈচিত্র্যের স্বাদ পাওয়া ও সেই বৈচিত্র্যের জন্য স্পেস সৃষ্টি করাই সবার জন্য বাড়তি পাওনা৷''
ভবিষ্যতে ভবনটি আর কাজে না লাগলে যত বেশি সম্ভব উপাদানকে নতুন ভবন নির্মাণের কাজে ব্যবহার করাও এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ সে কারণে বেশিরভাগ অংশ বসাতে আঠার বদলে স্ক্রু ব্যবহার করা হয়েছে৷ তাছাড়া যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক উপাদান কাজে লাগানো হয়েছে, যেগুলি ব্যবহারের পর প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে পারে৷ সাশা স্ট্রেমিং বলেন, ‘‘আমাদের এখানে সত্যি কাঠের তৈরি সাদামাটা দেওয়াল রয়েছে৷ খড় ঢুকিয়ে প্রাকৃতিক ইনসুলেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ গোটা কাঠামোর উপর কাদামাটি দিয়ে প্লাস্টার করা হয়৷''
রিসাইকেল করা উপাদান দিয়ে একটি বাড়ি তৈরি করতে হলে উপযুক্ত উপাদান সংগ্রহ করার প্রতিও বিশেষ মনোযোগ দিতে হয়৷
‘কনকুলার' নামের স্টার্টআপ কোম্পানি বাড়ি ভাঙার ধ্বংসস্তূপ থেকে উপকরণ সন্ধান, নথিকরণ ও বিক্রির ক্ষেত্রে হাত পাকিয়েছে৷ বাতি থেকে শুরু করে অব্যবহৃত রান্নাঘরের সব অংশ, কাচের দেওয়াল এবং অক্ষত লিফট – সবকিছুই সরবরাহ করতে পারে এই কোম্পানি৷ প্রোজেক্ট ডেভেলপার আনাবেল ফন রয়টার্ন বলেন, ‘‘প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আমরা হয়তো অনেকটা টিন্ডারের মতো৷ চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ‘ম্যাচ-মেকিং' করার মাধ্যমে মানুষ ও উপাদানকে পরস্পরের কাছে নিয়ে আসা হয়৷ অনন্তকালের জন্য নির্মাণ করে অর্থনৈতিক কারণে কখনো দশ বছর পরেই বাড়ি ভেঙে ফেলার আইডিয়া আমার ও আমাদের মতে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়৷''
নির্মাণের ভবিষ্যতের জন্য এমন কনসেপ্ট সহজ মনে হলেও এই শিল্পশাখা উপাদানের চক্রাকার ব্যবহারের পথে যেতে চাইছে না৷ সাশা স্ট্রেমিং মনে করেন, ‘‘সঠিক মানসিকতার অভাব অবশ্যই এর বড় কারণ৷ অন্যদিকে এমনটা করতে হলে আরও অনেক দীর্ঘ পরিকল্পনার প্রক্রিয়া ও একেবারে ভিন্ন লজিস্টিক্সের প্রয়োজন রয়েছে৷ সে ক্ষেত্রে ব্যয়ও অনেক বেড়ে যায়৷''
সার্কুলার হাউসের উদ্যোক্তারা তা সত্ত্বেও এমন আইডিয়ার প্রতি আস্থা রাখেন৷ তাঁদের মতে টেকসই নির্মাণ অবশ্যই সম্ভব এবং প্রয়োজনীয়৷ কারণ মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর সম্পদ কিন্তু সীমিত৷
ক্রিস্টিয়ান ভাইবেসান/এসবি