পুতিনের প্রতিদ্বন্দ্বী নাভালনি!
পুতিন বিরোধী আন্দোলনে রাশিয়ার অন্যতম আলোচিত চরিত্র বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনি৷ ২০১৮ সালে দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে পুতিনের বিরোধিতা করতে বাধা দেয়া হয় তাঁকে৷
রাজনীতিবিদের মুখ
ছিলেন আইনজীবী৷ হয়েছেন সক্রিয় রাজনীতিক৷ চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিনকে৷ ২০০৮ সালের কথা৷ রাশিয়ার রাজনীতি আর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর অপকর্ম নিয়ে ব্লগ লিখে রাতারাতি আলোচনায় আসেন নাভালনি৷ তাঁর লেখা ব্লগের কারণে অনেকেই পদত্যাগ পর্যন্ত করতে বাধ্য হন৷ যা ছিল রাশিয়ার রাজনীতির বিরল দিক৷
বিতর্কিত সংসদীয় নির্বাচন
২০১১ সালে প্রথম কারাগারে গেলেন নাভালনি৷ ছিলেন ১৫ দিন৷ অভিযোগ, মস্কোর স্টেট ডুমায় সরকার বিরোধী মিছিল-সমাবেশ৷ পুতিনের ‘ইউনাইটেড রাশিয়া’ নির্বাচনে জয় পায়৷ কিন্তু ভোট কারচুপির অভিযোগ আনা হয় পুতিনের বিরুদ্ধে৷ কারাগারে রেখেও দমানো যায়নি নাভালনিকে৷ বের হয়ে এসে আবারো চাঙ্গা করেন পুতিন বিরোধী আন্দোলন৷
কারাগের দ্বিতীয় সাময়িক
২০১২ সালে পুননির্বাচিত হলেন পুতিন৷ রাশিয়ার তদন্ত কমিটিকে নির্দেশ দিলেন নাভালনির অতীত খুঁজে বের করতে৷ দ্বিতীয় দফায় কারাগারে গেলেন নাভালনি৷ আত্মসাতের অভিযোগ মাথায় নিয়ে জেল খাটলেন পাঁচ বছর৷ উচ্চ আদালতে শেষ পর্যন্ত মুক্তি দেয় তাঁকে৷
ক্রেমলিন বিরোধী মঞ্চ
আইনি কিছু ঝামেলায় পড়েও, মস্কোর মেয়র পদে নির্বাচনে অনুমতি পান তিনি৷ ২০১৩ সালের ওই নির্বাচনে নাভালনিকে হার মানতে হয়৷ কারণ, পুতিনের মিত্র সের্গেই সোবানিয়ান বিপুল ভোটে জয় পায়৷ আর বিরোধী রাজনীতি আবারো চাপা পড়ে যায় পুতিন জোয়ারে৷
রাজনীতিকের সামাজিক যোগাযোগ
ক্রেমিলন বিরোধী আন্দোলনের কারণে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে নিষিদ্ধ হন নাভালনি৷ ফলে, নিজের রাজনৈতিক বার্তা ছড়িয়ে দিতে বেছে নিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ব্লগ৷ গুছিয়ে বলতে পারা, ভাষার ব্যবহার, পুতিনকে নিয়ে হাস্যরসত্মাক কথা আর বিনয়-সবমিলিয়ে তরুণদের কাছে তিনি হয়ে যান নতুন কান্ডারি৷
রাষ্ট্রপতির হওয়ার আকাঙ্ক্ষা
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ঘোষণা দিলেন প্রেসিডন্ট পদে লড়তে চান তিনি৷ ২০১৮ সালের মার্চকে সামনে রেখে শুরু করলেন প্রচারণা৷ এবার দুর্নীতির অভিযোগে পারলেন না কাঙ্ক্ষিত পদে দৌড়াতে৷ যদিও বলা হয়, রাজনৈতিক হয়রানি শিকার হয়েছেন তিনি৷
দুর্নীতির দায়
২০১৬ সাল৷ ইউরোপিয়ান মানবাধিকার আদালত এক রুলে জানায়, কিরভ মামলায় সুবিচার বঞ্চিত হয়েছে নাভালনি৷ রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্টও নাভালনির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বাতিল করে৷ নথি পাঠিয়ে দেয়া হয় কিরভ আদালতে৷ ২০১৭ সালে আবার তাঁর কারাদণ্ড বাতিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়৷
অর্ধযুগে মস্কোর বড় বিক্ষোভ
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি৷ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভের বিলিয়ন-ইউরোর সাম্রাজ্য নিয়ে রিপোর্ট লিখেন নাভালনি৷ সেই ঘটনাকে ঘিরে রাশিয়ার অন্তত ১২টি শহরে শুরু হয় দুর্নীতি বিরোধী মিছিল-সমাবেশ৷ নাভালনিসহ অন্তত হাজারো রাজনৈতিক কর্মীকে সেদিন গ্রেপ্তার করা হয়৷ ২০১১ সালের পর এতো বড় বিক্ষোভ আর দেখেনি মস্কোবাসী৷ ১৫ দিন কারাবাসের পর মুক্তি পায় নাভালনি৷
শারীরিক লাঞ্চনা
দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের দুই মাস পর হাসপাতাল ঠিকানা হয় তাঁর৷ নাভালনির মুখে ছোঁড়া হয় সবুজ রঙের রাসায়নিক৷ ডান চোখের কর্নিয়া তাতে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়৷ চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে দেয়া হয়নি তাঁকে৷ কারণ তখনও দুর্নীতির অভিযোগ ঝুলছিল তাঁর গলায়৷ পরে ক্রেমলিনের মানবাধিকার কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে চোখের অপারেশনের জন্য স্পেন যাওয়ার অনুমতি পান নাভালনি৷
গ্রেপ্তার এবং গ্রেপ্তার
গেল বছরের গোড়ার দিকে এক মাস জেল খেটেছেন নাভালনি৷ তার কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবারো গ্রেপ্তার হন তিনি৷ গেল সেপ্টেম্বরে জামিন পান৷ এ বছরের এপ্রিলে, তাঁর পক্ষে রুল জারি করে ইউরোপের মানবাধিকার কোর্ট৷ বলা হয়, কিরভ মামলায় ২০১৪ সাল থেকে এক প্রকার গৃহবন্দি রেখে নাভালনির অধিকার হরণ করেছে রাশিয়া৷
এবার বিষক্রিয়া
১০ দিন জেল খেটে বের হবার পর, সাতদিনও কাটেনি৷ এ বছরের জুলাইতে আবারো গ্রেপ্তার হন তিনি৷ রাশিয়ার কঠোর প্রতিবাদ আইন ভঙ্গের অভিযোগে আবারো ৩০দিনের জন্য জেলে ঢুকলেন তিনি৷ কারাগারে তাঁর শরীরে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ তুলেছেন পুতিন বিরোধী এই রাজনীতিবিদ৷