1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুজোয় অনুদান বৃদ্ধিতে বিতর্ক

২৭ জুলাই ২০২৪

দুর্গাপুজোর জন্য কমিটিগুলোর অনুদান আরো বাড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্লাব কর্তৃপক্ষ থেকে শিল্পীরা একে স্বাগত জানিয়েছেন। বিরোধীদের দাবি, সরকারি টাকায় খয়রাতি করছে তৃণমূল।

https://p.dw.com/p/4iovi
দুর্গাপুজো, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব
মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, আগামী বছর আরো ১৫ হাজার টাকা বেড়ে পুজোর অনুদান গিয়ে দাঁড়াবে এক লক্ষ টাকায়।ছবি: Prabhakar Mani Tewari/DW

আড়াই মাস পরে, অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। এই পুজো আয়োজনের জন্য প্রতি বছর রাজ্য সরকার অনুদান দেয় ক্লাবগুলিকে। এবার অনুদানের অঙ্ক ১৫ হাজার টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গতবারের ৭০ হাজারের জায়গায় এবার ৮৫ হাজার টাকা পাবে প্রতিটি ক্লাব।

পুজোর অনুদান

২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকে ক্লাবগুলিকে অনুদান দেয়ার শুরু।গত বছর তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০১৮ সাল থেকে দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে আর্থিক অনুদান দেয়া শুরু হয়।

প্রথম বছর ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছিল প্রতিটি পুজো কমিটিকে। সেবার বিদ্যুতের বিলে ২৫ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা ছিল। ২০১৯ সালে অনুদানের অঙ্ক ২৫ হাজার টাকা এবং করোনার সময়ে দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়।

চলতি সপ্তাহে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, গতবারের তুলনায় এবার অনুদান বাড়বে। এরই সঙ্গে পুজোর বিদ্যুতের বিলে ছাড় বৃদ্ধি পেয়ে হচ্ছে ৭৫ শতাংশ। এর পাশাপাশি ফায়ার লাইসেন্স সহ অন্যান্য অনুমতি বিনামূল্যেই পাবেন পুজো আয়োজকরা। গত বছর ৭০ হাজার টাকা অনুদানের পাশাপাশি বিদ্যুতের বিলে প্রায় ৬৭ শতাংশ ছাড় পেয়েছিলেন উদ্যোক্তারা।

আগামী বছর ক্লাবগুলোর জন্য যে সুখবর রয়েছে, সেটা এবারই ঘোষণা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে পুজো উদ্যোক্তারা দাবি তোলেন, তাদের অনুদান বাড়িয়ে এক লক্ষ টাকা করা হোক। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, আগামী বছর আরো ১৫ হাজার টাকা বেড়ে অনুদান গিয়ে দাঁড়াবে এক লক্ষ টাকায়।

করোনা অতিমারীর পর ২০২২ ও ২০২৩ সালে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান বাড়ে। ২০২২ সালে ছিল ৬০ হাজার, ২০২৩ সালে ৭০ হাজার টাকা।

পশ্চিমবঙ্গে ৪৩ হাজার ছোট-বড় পুজো কমিটি এবার অনুদান পাবে। এর মধ্যে কলকাতার পুজোর সংখ্যা ২ হাজার ৭৯৩। এ বছর পুজোর অনুদান বাবদ রাজ্য সরকারের খরচ হবে প্রায় ৩৬৬ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছরের বর্ধিত হারে যদি সমসংখ্যক কমিটিকে অনুদান দিতে হয়, তাহলে খরচ বেড়ে দাঁড়াবে ৪৩০ কোটি টাকা।

বিরোধীদের সমালোচনা

পশ্চিমবঙ্গের উপর বিপুল ঋণের বোঝা রয়েছে। নবান্নের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের প্রাপ্য টাকা না দেয়ায় সরকারি প্রকল্প চালাতে সমস্যা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পুজোর অনুদান বেড়ে যাওয়ায় মমতা সরকারের সমালোচনা করেছে বিরোধীরা।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, "মাথার উপর ঋণের বোঝা। তারা আমার আপনার টাকায় পুজো কমিটিগুলোকে হাতে রাখছে। পুজোর বিদ্যুৎ বিলে রাজ্য ছাড় দিল, গৃহস্থের বিলের কী হবে? সিইএসসি ও রাজ্য বিদ্যুৎবণ্টন সংস্থা সাধারণ মানুষকে লুটে নিচ্ছে। সিইএসসি রাজস্থানে কম পয়সায় বিদ্যুৎ দেয় কী করে?"

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, "এই রাজ্য সরকারের কোনো রোজগার নেই। রাজ্যে কোনো শিল্প নেই। তা সত্ত্বেও জনগণের অনুমতি ছাড়া তাদের করের টাকা বিলি করছে। তৃণমূল ক্লাবগুলোকে হাতে রাখতে চাইছে, যাতে ভোটের সময় এরা তৃণমূলের বাক্স ভরিয়ে দেয়।" ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হবে।

কমিটির বক্তব্য

অন্যান্য বারের মতোই পুজো উদ্যোক্তারা রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেন, "এই অনুদান আমাদের খুবই প্রয়োজন। পুজোর খরচ প্রতি বছর বাড়ছে। এবছর নিরাপত্তার জন্য বাড়তি নজর দিতে বলা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক, সিসিটিভির ব্যবস্থা করতে অনেক খরচ। অনেক ছোট কমিটির কাছে এই টাকা বিরাট ব্যাপার, তাদের খরচের ২৫ শতাংশ হবে এই অনুদান। এই টাকা বাজারে খাটবে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাজেই লাগবে।"

দুর্গাপুজো কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি রাজ্যের সবচেয়ে বড় সংস্কৃতির প্রদর্শনীও বটে। শহর থেকে জেলা, অসংখ্য শিল্পী-কারিগর এই মহাযজ্ঞে সামিল হন। উদ্যোক্তাদের দাবি, রাজ্য সরকারের টাকা শিল্পীদের একাংশের হাতে যায়।

শিল্পী অনির্বাণ দাস বলেন, "এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বহু মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয়। আমার সঙ্গে সাড়ে ৩০০ র বেশি সহশিল্পী আছেন। এই শিল্পীরা টাকা পাবেন। ক্লাবগুলোকে অনুদান দেয়ার ফলে টাকা ঘুরবে ছোট ব্যবসায়ীদের হাতে। দুর্গাপুজো এখন একটা শিল্প হয়ে উঠেছে। শিল্প ও জীবিকা এক জায়গায় মিলেছে।"

'অন্য ক্ষেত্রে ঘাটতি সত্ত্বেও অনুদান দেয়া উচিত নয়'

খরচের নথি পেশ

১০ বছর ধরে পূজোর আয়োজন করছে এমন কোনো কমিটি অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারে। যদিও রাজ্য সরকারের দেয়া অনুদান প্রতিমা নির্মাণ কিংবা পুজোর সামগ্রী কেনায় খরচ করা যায় না বিধি অনুযায়ী। জনস্বার্থবাহী কোনো কাজে এই টাকা পুজো কমিটিকে খরচ করতে হয়। এই সংক্রান্ত খরচের নথিও জমা দিতে হয়। পুজো কমিটিগুলিকে এর উপর নির্ভর করে পরের বছরের অনুদান দেয়া হয়।

তবে অতিমারীর সময় মাস্ক, স্যানিটাইজার সহ বিভিন্ন জিনিস কেনা ও বিতরণের কাজে কমিটিগুলির টাকা খরচের অবকাশ ছিল। এখন সেই অবকাশ ততটা নেই। কমিটি সূত্রের খবর, নথি হিসেবে জমা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিল বিভিন্ন কমিটিকে জোগাড় করতে হয়।

রাজ্য সরকারের এই অনুদানের বিরুদ্ধে একাধিকবার কলকাতা হাইকোর্টে একাধিক মামলা হয়েছে। মামলাকারীদের মধ্যে ছিল রাজ্য সরকারি কর্মীদের পক্ষে আন্দোলনকারী মঞ্চ। আদালত অনুদানের উপর নানা শর্ত চাপিয়েছে খরচের হিসাব দেয়া বাধ্যতামূলক করেছে।

রাজ্য সরকারি কর্মীদের প্রশ্ন, নবান্ন পুজোর অনুদান দিতে পারলে তাদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিচ্ছে না কেন? সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, "রাজ্য সরকার ডিএ বাকি রাখছে, শূন্যপদ পূরণ করছে না। কিন্তু ক্লাবগুলিকে টাকা দিচ্ছে। অনুদান দেয়ায় আপত্তি কিছু নেই। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে টাকার ঘাটতি সত্ত্বেও এভাবে অনুদান দেয়া উচিত নয়। দেশের অন্য রাজ্যে এমনটা হয় না।"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷