‘পিছু হটেছে’ ইরান, বললেন ট্রাম্প
ইরানের বিভিন্ন গণমাধ্যম মার্কিন ঘাঁটিতে হামলায় ৮০ জন নিহতের তথ্য জানালেও ট্রাম্প বললেন ভিন্ন কথা৷ ভাষণে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এই হামলায় কোনো মার্কিন বা ইরাকি নিহত হননি৷ ট্রাম্পের বক্তব্যের মূল অংশগুলো দেখুন এই ছবিঘরে৷
প্রতীক্ষিত ভাষণ
ইরানের হামলার পরপরই বেশ কিছু দেশ তাদের কোনো সৈন্য নিহত হয়নি জানালেও, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু জানায়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ রাতে টুইট করে ‘সব ঠিক আছে’ বললেও ক্ষতির পরিমাণ অ্যামেরিকার স্থানীয় সময় সকালে জানাবেন বলেও জানান ট্রাম্প৷ ভাষণের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক স্পেনসার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা ছিলেন ট্রাম্পের পাশে৷
‘ইরান পরমাণু অস্ত্র পাবে না’
ভাষণের প্রথম বাক্যেই ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমি যতদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আছি, ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে দেয়া হবে না৷’’ তিনি বলেন, ‘‘পরমাণু বোমার পেছনে ছুটে ইরান ‘সভ্য’ বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে৷ আমরা তা কখনও হতে দেবো না৷’’
হতাহত, ক্ষয়ক্ষতি
ট্রাম্প জানান, ইরানের হামলায় কোনো অ্যামেরিকান বা ইরাকি আঘাতপ্রাপ্ত হননি৷ কেউই হতাহতও হননি৷ সব মার্কিন সৈন্য নিরাপদে আছে এবং সেনা ঘাঁটিতেও খুব সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ পূর্বসতর্কীকরণ ব্যবস্থা, আক্রমণ ঠেকানোর সক্ষমতার জন্য মার্কিন সেনাদের ধন্যবাদও জানান ট্রাম্প৷
‘পিছু হটেছে’ ইরান
মার্কিন সেনাবাহিনীকে ‘মহান’ এবং শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি বলেন, শক্তি থাকলেই তা ব্যবহার করতে হবে তা তিনি মনে করেন না৷ ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ইরান ‘পিছু হটেছে’ বলে মনে করেন ট্রাম্প৷ ইরানের এমন অবস্থান সকল পক্ষ এবং বিশ্বের জন্যেও ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
‘সন্ত্রাসী সোলেইমানি’
ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিকে বিশ্বের ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প৷ তিনি বলেন, হেজবুল্লাহর মতো ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠনকে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, রাস্তার পাশে বোমা পেতে রাখা এবং হাজার হাজার মার্কিন নাগরিককে হত্যা করার অভিযোগ ছিল সোলেইমানির বিরুদ্ধে৷
পরমাণু চুক্তি
ইরানের সঙ্গে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর পরমাণু চুক্তি ‘ছুঁড়ে ফেলার’ আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ ওবামার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চু্ক্তিতে স্বাক্ষর করলেও ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহার করেন৷ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলো- জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও চীনকেও চুক্তি বাতিল করতে আহ্বান জানালেন ট্রাম্প৷ সোলেইমানি হত্যার পর ইরান এ চুক্তি না মানার ঘোষণা দিয়েই রেখেছে৷
‘চুক্তির টাকায় সন্ত্রাস’
ট্রাম্প দাবি করেন, পরমাণু চুক্তির ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে পাওয়া অর্থে মধ্যপ্রাচ্যে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ চালাচ্ছিল ইরানের বর্তমান সরকার৷ তিনি বলেন, এর ফলে ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন, আফগানিস্তান এবং ইরাক ‘নরকে’ পরিণত হয়েছে৷
আরো অবরোধ
ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট৷এই নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি৷ নতুন অবরোধ কেমন হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু উঠে আসেনি তার বক্তব্যে৷ তবে ইরান তার ‘ব্যবহার’ পরিবর্তন করার আগ পর্যন্ত এ অবরোধ জারি থাকবে বলেও জানান তিনি৷
নতুন অস্ত্র আসছে
মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক জোট ন্যাটোকে আরো বেশি সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ নিজের প্রশাসনের অধীনে আড়াই লাখ কোটি ডলার খরচ করে মার্কিন সেনাবাহিনীকে ঢেলে সাজানো হয়েছে বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘মার্কিন সেনাবাহিনী আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী৷ আমাদের বড়, শক্তিশালী, নির্ভুল, প্রাণঘাতি এবং দ্রুতগামী মিসাইল রয়েছে৷ হাইপারসনিক মিসাইল তৈরি হচ্ছে৷’’
ইরানের প্রতি আহ্বান
ভাষণের শেষে ইরানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও এবং জনতাকে সম্বোধন করেন ট্রাম্প৷ তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইরানিদের জন্য ‘দারুণ’ এক স্বপ্নের ভবিষ্যত চান তিনি৷ যারা শান্তি চায়, তাদের পাশে দাঁড়াতে অ্যামেরিকা সর্বদা প্রস্তুত বলেও ভাষণে বলেন ট্রাম্প৷