পাকিস্তান-তালেবান সম্পর্ক ক্রমশ খারাপের পথে
৪ জুন ২০২৩২০২১ সালের অগাস্ট মাসে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে। মার্কিন এবং বিদেশি সেনা তার মধ্যেই কার্যত দেশে ফিরে যায়। তারই মধ্যে সে সময় কাবুলে দেখা গেছিল পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর তৎকালীন প্রধান লেফটন্যান্ট জেনারেল ফৈজ হামিদকে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে তার আলোচনার ছবি ভাইরাল হয়েছিল। পাকিস্তান প্রথম ব্যাক চ্যানেলের মাধ্যমে সদ্যগঠিত তালেবান রাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় গেছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত পাকিস্তানের সেই চেষ্টা বুমেরাং হয়েছে। যত দিন গেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে তালেবান প্রশাসনের সম্পর্ক তত খারাপ হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা এর জন্য বেশ কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। পাকিস্তানে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে তেহরিক-ই-তালেবান-পাকিস্তান। কিন্তু এই গোষ্ঠীকে প্রশাসন নিজেদের বন্ধু বলে মনে করে না। আফগানিস্তানের তালেবান এই গোষ্ঠীকে গুরুত্ব দেয়। গত এক বছরে আফগান তালেবান যোদ্ধাদের প্রায় ১০০ জন পাকিস্তানে এসে এই গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই গোষ্ঠী ইসলামিক অনুশাসনের পাকিস্তান চায়। গত এক বছরে পাকিস্তানে তারা একের পর এক আত্মঘাতী বিস্ফোরণ চালিয়েছে। শখানেক বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তেহরিক-ই-তালেবান-পাকিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানি সরকারের দূরত্ব যত বাড়ছে, আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসনের সঙ্গেও পাকিস্তানের দূরত্ব বাড়ছে।
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের একটি বড় অংশ মনে করে পাকিস্তান সর্বার্থে ইসলামিক রাষ্ট্র নয়। কারণ তার জন্মের ইতিহাস ঔপনিবেশিক। পাকিস্তানের প্রশাসনিক ভিত্তিও ইসলামিক নয়। ফলে এই পাকিস্তানকে তারা কখনোই বন্ধু বলে মনে করে না। অন্যদিকে অ্যামেরিকার সঙ্গে পাকিস্তান সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। যার জেরে বর্তমান তালেবান প্রশাসনের শীর্ষ নেতৃত্বের একটি অংশ দীর্ঘদিন পাকিস্তানের জেলে থেকেছে। তারা পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে চায়। এদিকে পাকিস্তানে দেশের ভিতর গোলযোগ শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তালেবান প্রশাসন পাকিস্তানের কাছ থেকে বিশেষ কোনো সুবিধা পাওয়ারও আশা দেখছে না, এমনই অভিমত ভারতে অবস্থিত আফগান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতের। তিনি তালেবানের শাসন মেনে নেননি।
ব্যাক চ্যানেলের সাহায্যে তালেবান বরং ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে। সম্প্রতি বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে। তালেবান শীর্ষ নেতৃত্ব প্রকাশ্যেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। আফগান বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ারও আবেদন জানানো হয়েছে ভারতের কাছে। ভারতও ব্যাক চ্যানেলেই বিষয়টির মোকাবিলা করছে।
এই পরিস্থিতিতে উপমহাদেশের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলাতে শুরু করেছে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিমত। আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর ভারতের প্রথম আশঙ্কা ছিল, পাকিস্তানের মাধ্যমে তালেবান যোদ্ধারা কাশ্মীরে ঢুকবে। এর আগে আফগানিস্তানে তালেবান শাসন-পর্বে তেমনই ঘটেছিল। ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে বর্তমান তালেবানের সম্পর্ক যাতে তিক্ত হয়, ভারত বরাবর তেমনই চেয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি খানিক তেমনই।
এসজি/জিএইচ