‘হাতে বানানো ব্লগ’
৩ মে ২০১২আলোকচিত্র জগতে সেই ১৯৮৬ সাল থেকে বিচারক হিসেবে কাজ করছেন বাংলাদেশের ফোটোগ্রাফি জগতের মাইলফলক ‘দৃক' ও দক্ষিণ এশিয়া ফোটোগ্রাফি ইনস্টিটিউট ‘পাঠশালা'-র প্রতিষ্ঠাতা ড. শহিদুল আলম৷ কিন্তু ওনার নিজের কথায় সে কাজ ভিন্ন৷ তার মাপকাঠিও আলাদা৷ তার ওপর নিজে ব্লগিং করলেও, এর আগে ব্লগের বিচারক হিসেবে নিজেকে কখনও মনে করেন নি শহিদুল৷ তাঁর নিজের কথায়, ‘‘যদিও অল্প কয়েকটা ব্লগ পুরস্কার পেলো, আমি কিন্তু মনোনীত ব্লগগুলি থেকে নিজে নিজেই একটা তালিকা তৈরি করেছি৷ এমন কিছু ব্লগ সে তালিকায় আছে, যা আমাকে অনু্প্রাণিত করেছে৷ এই যেমন, উইলম্যাপ বলে যে জার্মান ব্লগটি সামাজিক সচেতনতায় প্রযুক্তি বিভাগে লড়ছিল, বা সেরা ব্লগ ক্যাটেগরির সেই পোর্তুগিজ ব্লগটি, যেখানে একদম বস্তির থেকে বেরিয়ে এসে একটি ছেলে জনমানুষের সহায়তায় শক্তিশালী একটি আন্দোলন গড়ে তুলেছে – এ ধরণের ব্লগগুলির সঙ্গে পরিচিত হওয়া আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷''
শুধু এটাই নয়, বার্লিনে অসাধারণ এক বিচারকমণ্ডলীর সঙ্গে পরিচিত হওয়াকেও একটা বড় পাওয়া হিসেবে দেখছেন শহিদুল৷ তবে তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ছিল বাংলা ভাষায় একটি ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড' নিশ্চিত করা৷ প্রতিযোগিতার শুরুর দিকে কি মনে হয়েছিল তাঁর? শহিদুল জানান, ‘‘সত্যিকার অর্থে আমরা এতোদূর যাবো ভাবি নি৷ কারণ, সারা পৃথিবীর একটা প্রতিযোগিতা৷ সেখানে প্রযুক্তিগতভাবে আমাদের কিছু দুর্বলতা রয়েছে৷ দেশে তেমন ব্যান্ডউইথ নেই৷ সেখানে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা একা একাই কাজ করছেন৷ তাঁরা যে অন্য কোনো ধরণের সহায়তা পাচ্ছেন, তাও না৷ তাছাড়া বিদেশি ব্লগগুলির মধ্যে বিভিন্ন ধরণের নতুন নতুন প্রযুক্তি অনেকে ব্যবহার করেছেন৷ তাই একটা ভয় ছিল৷ যদি না পারে?''
কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে কারণে বাংলা ব্লগগুলি টিঁকে গেছে, সেটাই আসল কারণ বলে মনে করেন ড. আলম৷ তিনি বলেন, ‘‘যে আন্তরিকতা নিয়ে, যে সাহস নিয়ে, যে উদ্দীপনা নিয়ে এবং যে কারণে এই ব্লগগুলো করা হয়েছে, সেগুলোর জোরেই এটা টিঁকে গেছে৷ এবং এক অর্থে আমি বলব, পাশ্চাত্যের ঐ পোছপাছওয়ালা, ঝকঝকে ব্লগের চাইতে আমাদের এই হাতে বানানো ব্লগগুলোই হয়তো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷''
অবশ্য রিপোর্টার্স উইথাউট বর্ডার্স অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার পাওয়া আবু সুফিয়ানের ব্লগ সম্পর্কেও প্রশংসায় পঞ্চমুখ শহিদুল আলম৷ এক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আবু সুফিয়ান এক সময়ে ক্রসফায়ারের ব্যাপারে অনুসন্ধানী কাজ করেছে৷ এবং একটা সময় তাঁর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল৷ তারপরও তিনি থেমে যান নি৷ তিনি লড়ে গেছেন৷ আর সম্প্রতি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার-মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিটি আঁকড়ে ধরে রেখেছেন, সেটাকে রাজপথে নিয়ে গেছেন৷ কাজেই এ সবগুলি মিলিয়ে তাঁর ব্লগটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে আমাদের দেশে৷ আসলে একটা আন্দোলন যখন শুরু হয়, লোকে যখন রাজপথে নামে, তখন কিন্তু অনেকগুলি রাস্তা খুলে যায়৷ তাই সরকার, সে যে সরকারই হোক, আবু সুফিয়ানের মতো মানুষ থাকার কারণে এতো সহজে আর আমাদের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিতে পারবে না৷''
প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ
সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম