পশ্চিমবঙ্গের নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩কলেজে শিক্ষক নেই, স্কুলে শিক্ষাকর্মী নেই, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই শুনছে পশ্চিমবঙ্গ। এবার সেই নেইয়ের তালিকায় নতুন সংযোজন উপাচার্য। সম্প্রতি রাজ্যের উচ্চ শিক্ষাপর্ষদ জানতে পেরেছে, কলকাতা, উত্তরবঙ্গ-সহ রাজ্যের নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো উপাচার্য নেই। শুধু তা-ই নয়, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব যাদের দেওয়া হয়েছিল, তারাও অবসর নিয়েছেন। ফলে কার্যত মাথাহীন অবস্থায় পড়ে আছে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়। যার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু প্রশাসনিক কাজ বন্ধ হয়ে আছে। এমনকি, পরীক্ষা নিতেও অসুবিধা হচ্ছে।
উপাচার্য না থাকায় কাজের কী সমস্যা হচ্ছে তা জানিয়ে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ উচ্চশিক্ষা পর্ষদে চিঠি পাঠিয়েছেন। তবে বিষয়টি এবার মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরেও পৌঁছেছে। মুখ্যসচিব এবিষয়ে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
কলকাতা, উত্তরবঙ্গ, আলিপুরদুয়ার, বিদ্যাসাগর, সাধু রামচাঁদ মুর্মু ঝাড়গ্রাম, বিশ্ববাংলা, হরিচাঁদ গুরুচাঁদ, মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় স্থায়ী বা অস্থায়ী কোনোরকম উপাচার্যই নেই। বস্তুত, কিছুদিন আগে এবিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে খবর যায় বলে জানা গেছে। এরপরেই মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কাছে চিঠি দিয়ে সমস্যার কথা জানতে চাওয়া হয়েছে। উচ্চশিক্ষা দপ্তর যে রিপোর্ট তৈরি করছে, তা-ও মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে যাবে বলে জানা গেছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক উচ্চশিক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, উপাচার্যপদ ফাঁকা হওয়ার আগেই এবিষয়ে রাজ্যপালকে জানানো হয়েছিল। বস্তুত, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য রাজ্যপাল। তার পদটি আলংকারিক। রাজ্যপালের দপ্তরে যে সুপারিশ পাঠানো হয়, তার ভিত্তিতে রাজভবন উপাচার্যদের নিয়োগপত্র দেয়। উচ্চশিক্ষা পর্ষদের বক্তব্য, উত্তরবঙ্গের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মনোনীত উপাচার্যদের নাম রাজ্যপালের কাছে পাঠানোও হয়েছিল। রাজ্যপাল তাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত রাজভবন থেকে কিছু জানানো হয়নি।
বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য এবং ভারপ্রাপ্ত নিয়োগের কাজ শুরু হয়ে গেছে বলে উচ্চশিক্ষা পর্ষদের দাবি। যদিও, রাজ্যের শিক্ষামহলের একাংশের প্রশ্ন, এত সময় লাগছে কেন? বস্তুত, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের অভাবে পরীক্ষা নিতেও সমস্যা হচ্ছে। সর্বোচ্চ নির্দেশ দেওয়ার মতো কোনো ব্যক্তি সেখানে নেই। থমকে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির দৈনিক কার্যপ্রণালী।
শিক্ষাবিদদের বক্তব্য, বহু ঘটা করে বছরখানেক আগে দার্জিলিংয়ে হিল ইউনিভার্সিটির কথা ঘোষণা করেছিল সরকার। সেখানে উপাচার্য তো দূরের কথা, রেজিস্ট্রার ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদও ফাঁকা। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ দেড়বছর ধরে সেই দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। এখন উত্তরবঙ্গেও উপাচার্য নেই। বস্তুত, হিল ইউনির্ভাসিটির এতই খারাপ অবস্থা যে, সেখানে অফলাইন ক্লাসও শুরু করা যায়নি। অথচ ছাত্র ভর্তি নেওয়া হয়ে গেছে।
শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''উপাচার্য ছাড়া কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চলারই কথা নয়। বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষার সমস্ত স্তরে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এ তার আরো এক উদাহরণ।'' পবিত্র সরকার একসময় রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন।
রাজ্যের অধ্যাপক সংগঠনের এক সরকারি কর্মী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''বর্তমান সরকারের জমানায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে বড় বড় সমস্যা দেখা গেছে। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষা। কলেজগুলিতে শিক্ষক নেই। স্কুলে শিক্ষক নেই। সরকারি স্কুল বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। আর তারই মধ্যে ব্যাঙের ছাতার মতো বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হচ্ছে।'' বস্তুত, শিক্ষার নিয়োগ নিয়ে ৭০০ দিন ধরে রাজপথে আন্দোলনে বসেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী জেলে। শিক্ষা দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জেলে। সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থা সত্যিই বিশ বাঁও জলে।