পশ্চিমবঙ্গে ভোট শেষ, সহিংসতা শুরু
১৪ জুন ২০২৪বিজেপি জানিয়েছে, কলকাতায় বিজেপি অফিসে ও ধর্মশালায় প্রচুর ঘরছাড়া মানুষকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এই সহিংসতা প্রায় প্রতিদিনই হচ্ছে বলে দাবি রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের৷
শুভেন্দুকে আটকালো পুলিশ
রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে সহিংসতার ফলে ঘরছাড়া মানুষদের নিয়ে রাজ্যপাল আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজভবন থেকে এজন্য সময়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগে রাজভবনমুখি সব পথ ব্যারিকেড লাগিয়ে বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
শুভেন্দু রাজভবনে ফোন করে বলেন, সহিংসতার শিকার মানুষদের নিয়ে তাকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু রাজভবন থেকে জানানো হয়, রাজভবনের বাইরের এলাকার উপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সেটা পুলিশের অধীনে।
পুলিশ জানিয়েছে, রাজভবনের সামনে সবসময় ১৪৪ ধারা জারি করা থাকে। সেখানে দুইশ জন মানুষকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন শুভেন্দু। পুলিশ প্রধানের অনুমতি ছাড়া এটা করা যায় না। তাই তাকে আটকে দেয়া হয়েছে।
এরপর শুভেন্দু কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানান। প্রশ্ন করেন, কেন তাকে রাজভবনে যেতে দেয়া হবে না? এভাবে আটকে দেয়া হবে ? বিচারপতি অমৃতা সিনহা তাকে মামলা দায়ের করার অনুমতি দেন। সেই মামলার শুনানি শুরু হয় শুক্রবার বেলা দুটোর পর।
সহিংসতার ঘটনা
ভোটের পর মালদহে একজন কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তাকে আমবাগানে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়। মৃত কংগ্রেস কর্মীর নাম আকমল শেখ। মালদহ দক্ষিণ থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সাংসদ ঈশা খান চৌধুরী বলেছেন, শাসকদলের দুষ্কৃতীরা এই কাজ করেছে।
ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর মালদহে এবং যাদবপুরে সিপিএম ও কংগ্রেসের দলীয় অফিস আক্রমণ করা হয়। এজেন্টদের মারধর করা হয়। অভিযোগের আঙুল তৃণমূলের দিকে।
কাকদ্বীপে তৃণমূলের বিজয় মিছিল থেকে বিজেপি-র বুথ সভাপতি ও প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকের বাড়িতে হামলা করা হয়। তার বৃদ্ধা মা-কে পর্যন্ত হেনস্থা করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বিজয় মিছিল থেকে লোক ওই শিক্ষকের বাড়িতে ঢুকছে। তার জমিও জবরদখল করে তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। বাড়ির জানালার কাচ ভাঙা হয়েছে। তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়েছে, এর সঙ্গে দলের কোনো যোগ নেই। এটা নিছকই জমি সংক্রান্ত বিবাদ।
কলকাতার কসবায় ১০৭ ও ১২০৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক হাঙ্গামা হয়েছে। সাতজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবায় বারণ করা সত্ত্বেও বিজেপি-কে ভোট দেয়ার জন্য জলের পাইপ কেটে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। হুগলির চুঁচুড়ায় বিজেপি-র এসসি মোর্চার নেতাকে চড় মারা হয়েছে।
কোচবিহারে বিজেপি-র পঞ্চায়েত অফিসে তালা মেরে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। জোর করে গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল নেয়া হয়েছিল বলেও নিশীথ প্রামাণিক অভিযোগ করেছেন। তিনি বেশ কয়েকজন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ি গেছেন ও কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের পাথরপ্রতিমায় তৃণমূলের নেতা মহিম মোল্লাকে কোপানোর অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূলের অভিযোগ, আইএসএফ সমর্থকরা এই কাজ করেছে।
রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য
রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি ও কেন্দ্রে মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, তারা একটা ধর্মশালা ভাড়া করে ঘরছাড়া মানুষদের রেখেছেন। তৃণমূলের কর্মীরা বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বাড়ির কাছ থেকে টিউবওয়েল তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, ''দেশে জরুরি অবস্থার সময়েও এরকম ঘটনা ঘটেনি।''
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, ''শুভেন্দু যা করেছেন তা নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়। নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিজেপি নেতারা একে অন্যের সঙ্গে মারামারি করছে। ওখানে কেউ যদি ঘরছাড়া হন, তাহলে সেটা দিলীপ ঘোষ হয়েছেন।''
'সরকার চাইলেই বন্ধ হবে'
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''সরকার না চাইলে সহিংসতা বন্ধ হবে না। আর সরকার যদি চায় তো, একদিনে তা বন্ধ করে দিতে পারে। পুলিশের কাছে স্পষ্ট নির্দেশ দিলেই সব বন্ধ হবে।''
শুভাশিল মনে করছেন, ''মমতা এবার স্লোগান দিয়েছিলেন, শান্তিপূর্ণ বাংলা চাই। এই সহিংসতা সেখানে ধাক্কা দিলো। শহরের মানুষ এটা ভালোভাবে নিচ্ছে না। রাজ্যের অনেক পুরসভায় বিজেপি ভালো ফল করেছে।''
শুভাশিস মনে করেন, ''এই সহিংসতার মধ্যে কোথাও একটা সম্পদের বিষ.য় আছে। শুধু রাজনৈতিক আদর্শের জন্য এটা হয় না।''
সাংবাদিক শরদ গুপ্তাও জানিয়েছেন, ''রাজনৈতিক ইচ্ছা থাকলে যে ভোটকে কেন্দ্র করে সহিংসতা বন্ধ করা যায়, বিহার তার প্রমাণ। ফলে পশ্চিমবঙ্গে সত্যিই চেষ্টা করা হলে এই সহিংসতা বন্ধ হতে বাধ্য।''
জিএইচ/এসিবি(পিটিআই, এএনআই, আনন্দবাজার)