1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে ছাত্র রাজনীতির চরিত্র

৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

স্বাধীনতা পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গ দেখেছে ছাত্র রাজনীতির আগুন৷ সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বেও ছাত্র রাজনীতি টলিয়ে দিয়েছে তিন দশকের বাম সরকারকে৷ কিন্তু বর্তমানে শিক্ষক পেটানোর ছাত্র রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গের এক নতুন ‘ট্রেন্ড’৷

https://p.dw.com/p/2s4L1
ছবি: DW/P. Samanta

‘টাটার গোলামি মনসবদারি, ভুলিয়ে দেবে নকশালবাড়ি'

২০০৭৷ রাজনীতির আগুনে টগবগ করে ফুটছে পশ্চিমবঙ্গ৷ অভিযোগ, রাজ্যের তিন দশকের বাম সরকার মানুষের কথা আর ভাবছে না৷ সিঙ্গুরে জোর করে জমি নিয়ে তারা টাটা-কে দিতে চাইছে কারখানা গড়ার জন্য৷ অন্যদিকে, নন্দীগ্রামে একই কারণে পুলিশ গুলি চালিয়েছে৷ মৃত্যু হয়েছে ১৪ জন সাধারণ মানুষের৷ রাজ্যের বিরোধীনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মতলার মোড়ে অনশনে বসেছেন৷ কিন্তু এ সবের সঙ্গে নকশালবাড়ির সম্পর্ক কী?

নেই৷ আবার আছেও৷ কারণ, পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র রাজনীতির কথা বলতে গেলে নকশালবাড়ি আজও প্রাসঙ্গিক৷ ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজের দেওয়াল লিখনে তাই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের প্রতিবাদেও নকশালবাড়ির প্রসঙ্গ উঠে আসে৷ যে ছাত্ররা সেই দেওয়াল লিখেছিলেন, আগামীর ইতিহাসে তাঁদের অনেককেই দেখা যাবে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়তে৷ এবং আরও পরে তাঁরা অভিযোগ করবেন, নকশালপন্থিদের আন্দোলন তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘হাইজ্যাক' করে নিয়েছেন৷ 

স্বাধীনতার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রফ্রন্টে রাজনীতি নিয়ে একটু বেশিই হইচই৷ এবং বরাবরই সেখানে বাম রাজনীতির দাপট৷ পরবর্তীকালে যে বামনেতারা পশ্চিমবঙ্গ শাসন করবেন ৩৪ বছর ধরে, তাঁদের প্রায় সকলেই ছাত্র আন্দোলনের ফসল৷ জ্যোতি বসু থেকে শুরু করে বিমান বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে সূর্যকান্ত মিশ্র, সকলেই ছাত্র রাজনীতি করে এসেছেন কংগ্রেস আমলে৷ ১ পয়সা ট্রাম ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে একসময় তাঁরাই অবরুদ্ধ করেছেন কলকাতার রাজপথ৷ বাস জ্বলেছে, ট্রাম জ্বলেছে৷ প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস৷ বাম রাজনীতির ঢেউ আছড়ে পড়েছিল শহরের আনাচকানাচে৷ ষাটের দশকে সিটি, সুরেন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর কলেজের কংগ্রেসি ছাত্রদের সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম ছাত্রদের সংঘর্ষ নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল৷

সেই বাম রাজনীতি আরও জোড়ালো হয় ষাটের দশকের শেষ পর্ব থেকে৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম ছাত্রদের সংসদ নীতিগত এবং আদর্শগত অবস্থান থেকে দু'ভাগে ভেঙে যায়৷ একদল থেকে যান পুরনো মতাদর্শ নিয়ে৷ অন্য দলের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ‘নকশাল' নামে৷ বস্তুত, উত্তরবঙ্গের নকশালবাড়ি নামক একটি ছোট্ট গ্রামের কৃষক আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই অতি বাম এই ছাত্রেরা নকশাল নামে পরিচিত হন৷ তাত্ত্বিকভাবে যাঁরা চীনপন্থি বামপন্থায় বিশ্বাসী৷

সত্তর এবং আশির দশকের কলকাতা দেখেছে নকশালপন্থি ছাত্রদের হিংসাত্মক আন্দোলন৷ একদিকে যেমন তাঁরা হিংসার আশ্রয় নিয়েছে, অন্যদিকে বহু পুরনো বস্তাপচা সিলেবাস বদলে নতুন সিলেবাস তৈরির আন্দোলনও তাঁরা করেছে৷ বস্তুত, আন্দোলনের জেরে সত্তর সালে তৈরি হওয়া সেই সিলেবাসই এখনো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়৷ কিন্তু শুধুমাত্র সিলেবাস আন্দোলনেই আটকে থাকেনি সত্তরের নকশাল আন্দোলন৷ বহু ছাত্র সেই সময় কলেজের নিয়মমাফিক পঠনপাঠন ছেড়ে গ্রামে গিয়ে কৃষক এবং শ্রমিকদের মধ্যে আন্দোলন গড়ে তোলার সংকল্পে ব্রতী হন৷ বহু মেধাবী ছাত্র তখন এই কাজে নেমেছিলেন৷ অধিকাংশই সফল হননি৷ বোমা-গুলির রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে অনেকেই পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত হন৷ কেউ কেউ পালাতে বাধ্য হন ভিনদেশে৷ কেউ আবার মূলস্রোতে ফিরে আসেন রাজনীতির সঙ্গে সমস্ত সংস্রব ত্যাগ করার মুচলেকা দিয়ে৷ ষাট-সত্তর দশকের অন্যতম নকশালনেত্রী জয়া মিত্র কথা বলেছেন ডয়চে ভেলের সঙ্গে৷ শুনিয়েছেন, কেন এবং কীভাবে ছাত্রবয়সে নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন তাঁরা৷ জয়া বলেছেন, কোনো দলীয় স্বার্থে বা ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়, তাঁরা নকশাল আন্দোলন শুরু করেছিলেন সময়ের প্রয়োজনে৷ সমাজ বদলের লক্ষ্যে৷ হয়তো সেই আন্দোলন শেষপর্যন্ত সফল হয়নি কিন্তু তার অভিঘাত পরবর্তীকালে থেকে গিয়েছে সমাজ ব্যবস্থায়৷ শুধু তাই নয়, ছাত্ররা যে মূলস্রোতের রাজনীতির হাওয়া ঘুরিয়ে দিতে পারে, রাষ্ট্র সেই সময়ে তা টের পেয়েছিল৷

জয়া মিত্র, নকশাল আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী

ঘটেছে অনেক কিছুই৷ সত্তর-আশির কলকাতা ভরে থেকেছে বারুদের গন্ধে৷ দেওয়াল রেঙেছে ‘চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান' মন্ত্রে৷ শুনেছে, ‘বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস' স্লোগান৷ বরানগর ম্যাসাকারে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য ছাত্রের৷ কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য বাম ছাত্রের৷ বিশেষত, জরুরি অবস্থার সময়ে কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেল ভরে গিয়েছে নকশালপন্থি ছাত্রে৷ সাহিত্যও রচনা হয়েছে৷ সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষদের কবিতা ধ্বনিত হয়েছে মিছিলে, স্লোগানে৷ পোস্টারে লেখা হয়েছে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ফ্যাসিবাদ বিরোধী সেই বিখ্যাত কবিতা, ‘প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য, ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা' কিংবা শঙ্খ ঘোষের কবিতা ‘লাইনেই তো ছিলাম বাবা'৷

মাও সে তুং য়ের কথা কীভাবে সে সময়ের ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করেছিল, স্মৃতিচারণে সে কথা শুনিয়েছেন বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী দীপেশ চক্রবর্তী৷ বলেছেন, শহরের ছাত্রদের গ্রামে যাওয়ার অভিজ্ঞতা৷ এবং কীভাবে সেখানে গিয়ে তাঁরা বুঝতে পারতেন, গ্রামের মানুষ তাঁদের অন্য চোখে দেখছেন৷ শুধু তাই নয়, গ্রামে গিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে পেট খারাপ করে শহরে ফিরে আসার গল্পও শুনিয়েছেন দীপেশ৷ তবে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ছাত্রদের সেই সংগ্রামের আদর্শ ছিল বিপ্লব এবং ত্যাগ৷ এখনকার মতো স্বার্থ গুছিয়ে নেওয়ার নয়৷

৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসে৷ জেল থেকে মুক্তি পান বহু নকশালপন্থি ছাত্র৷ কেউ কেউ মিশে যান মূলস্রোতের বাম রাজনীতিতে৷ অধিকাংশই রাজনীতি থেকে সরে যান৷ এই সময়পর্বেই পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র রাজনীতির ধারাও খানিক বদলে যায়৷ এতদিন যারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন, বামপন্থি সেই ছাত্রেরা ক্ষমতার গন্ধ পান৷ রাতারাতি পশ্চিমবঙ্গের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কার্যত বিনা বাধায় বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলি সংসদ তৈরি করতে শুরু করে৷ কংগ্রেসের ছাত্র সংসদ টিকে থাকে হাতে গোনা কিছু কলেজে৷ ছাত্র আন্দোলনের আগুনে খানিক স্তিমিত হয়৷

নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে পরিস্থিতি আবার ঘুরতে শুরু করে৷ ততদিনে দু'দশকের বাম শাসন দেখে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গ৷ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন কার্যত হয় না বললেই চলে৷ প্রেসিডেন্সি কিংবা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিবাম বা নকশালপন্থি ছাত্রদের ছোট ছোট ইউনিট থাকলেও অধিকাংশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় তখন সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর দখলে৷ নির্বাচন হয় না, মনোনয়ন হয়৷ ইংরেজিতে যাকে বলে সিলেকশন৷ যাদবপুর, প্রেসিডেন্সির চিত্রটা অবশ্য ভিন্ন৷ বরাবরই প্রতিষ্ঠানবিরোধী রাজনীতির মঞ্চ হিসেবে পরিচিত এই দুই প্রতিষ্ঠানে তখনো নির্বাচন হচ্ছে৷ সংসদ তৈরি করছে নকশালপন্থি অতিবাম ছাত্রেরা৷ কিন্তু সার্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তাদের কোনো জায়গা নেই৷ সরকারপন্থি ছাত্রদের তখন পরিচিত সমালোচনা ছিল, প্রেসিডেন্সির বাইরে ট্রামলাইনের ওপারে অতিবামদের কোনো জায়গা নেই৷

দীপেশ চক্রবর্তী, সমাজবিজ্ঞানী

সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ফের পশ্চিমবঙ্গে নকশালপন্থি ছাত্রদের আগুন জ্বলে ওঠে৷ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে আন্দোলন৷ মেধা পাটকরের মতো বামপন্থি অ্যাক্টিভিস্টরা সমর্থন দেন নকশালপন্থি ছাত্রছাত্রীদের৷ তথ্য ঘাঁটলে দেখা যাবে, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রথম পর্বে তৃণমূল নেতারা নন, গ্রেফতার হচ্ছিলেন নকশালপন্থি ছাত্রছাত্রীরাই৷ আটক ছাত্রদের পুলিশ হেডকোয়ার্টার লালবাজার থেকে মুক্ত করতে পৌঁছে গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট মানুষেরা৷ অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ, শঙ্খ ঘোষেরা মিছিল করে পৌঁছে গিয়েছিলেন লালবাজারে৷ প্রথম পর্বের সেই আন্দোলনে নকশালপন্থি ছাত্ররা প্রভূত সমর্থন পেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবী এবং নাগরিক সমাজের কাছ থেকে৷ অভিযোগ, আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্বে তৃণমূল ছাত্রদের আন্দোলন ‘হাইজ্যাক' করে৷ এবং লড়াইটা হয়ে দাঁড়ায় সিপিএম-তৃণমূলের৷ যার ফলাফল, ২০১১ সালে তৃণমূলের জয় এবং সিপিএম-এর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়া৷

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সেই বাম আমল থেকেই ছাত্র আন্দোলনের ধারা ক্রমশ বদলে গেছে পশ্চিমবঙ্গে৷ মূলস্রোতের রাজনৈতিক দলগুলি চেষ্টা করেছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ভবিষ্যতের নেতা তৈরির কারখানা হিসেবে গড়ে তুলতে৷ ছাত্রছাত্রীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লোভ দেখানো হয়েছে৷ ফলে অধিকাংশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরোধী দল তৈরিই হতে পারেনি৷ যেখানে হয়েছে, সেখানে সংঘর্ষ হয়েছে৷ অধ্যক্ষ ঘেরাও হয়েছেন ছাত্র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে৷ সিপিএম-এর সদর দফতর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কথায় ওঠাবসা করেছেন ছাত্রনেতারা৷

‘পরিবর্তন'-এর পরেও সেই একই ছবি৷ আগে কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ দখলে রাখত বামপন্থি ছাত্ররা৷ এখন সেই সমস্ত সংসদই তৃণমূলের ছাত্রদের দখলে৷ আগের মতোই এখনো নির্বাচন হয় না অধিকাংশ জায়গায়৷ বিরোধীদের তৈরিই হতে দেওয়া হয় না৷ পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে, কারণ, ছাত্ররা এখন শিক্ষকদেরও ছাড়ছে না৷ শিক্ষক নিগ্রহ, অধ্যক্ষকে পেটানোর মতো ঘটনাও ঘটছে প্রায় প্রতিদিন৷ যদিও প্রেসিডেন্সি, যাদবপুরের ক্যাম্পাসগুলিতে এখনো সে ঘটনা ঘটেনি৷ এখনো সেখানে নির্বাচন হয়৷ এখনো তাদের বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা রয়েছে৷ তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ‘হোক কলরব' আন্দোলন হয়েছে যাদবপুরে৷

Indien Berühmte 'Hok Kolorob'-Bewegung der Studenten der Universitäten in Kalkutta 2014
হোক কলরবের ছবিছবি: Ronny Sen

স্বাধীনতার আগে এক বিশিষ্ট রাজনীতিক বলেছিলেন, ‘‘বাংলা আজ যা ভাবে, বাকি ভারত তা ভাবে আগামিকাল৷'' ছাত্র রাজনীতির ক্ষেত্রে এখনো সে ধারা খানিক অটুট৷ ভারতের অন্যান্য প্রদেশের বিখ্যাত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রাজনীতি এখনো অনেকটাই বাংলা নিয়ন্ত্রণ করে৷ জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় বা জেএনইউ-এর বামপন্থি ছাত্রদের একটা বড় অংশই এখনো বাঙালি৷ সম্প্রতি কানহাইয়া কুমারদের আন্দোলনে তাই জেএনইউ পৌঁছে গিয়েছিলেন যাদবপুর, প্রেসিডেন্সির ছাত্ররাও৷ বিজেপির বিরুদ্ধে রীতিমতো একটা ফ্রন্ট তৈরি হয়ে গিয়েছিল জেএনইউ-এর আন্দোলনকে ঘিরে৷ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারাও খানিক সেরকম৷ সেখানেও বামপন্থি রাজনীতির নিয়ন্ত্রক বাঙালিরা৷ তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও সেখানে চরম৷ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণপন্থি রাজনীতির চেহারাও নেহাত হালকা নয়৷ প্রতিবছর ছাত্র নির্বাচনে লড়াই হয় সমানে সমানে৷

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের প্রেক্ষিতেও ছাত্র আন্দোলনের চেহারা অনেকটাই বদলেছে৷ মূলস্রোতের রাজনৈতিক দলগুলিই এখন ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে৷ তাই পঞ্চাশ, ষাট, সত্তর, আশির দশকের মতো দুনিয়া বদলে দেওয়ার আদর্শবাদী স্লোগান আর শোনা যায় না ছাত্রদের মুখে৷ অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, আদৌ ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে৷ কেউ কেউ বলছেন, রাজনীতি থাক, কিন্তু বদলাক তার চরিত্র৷ মূলস্রোতের রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হোক ছাত্র রাজনীতি৷ ছাত্ররা নিজেদের কথা বলুক৷ একসময় যা বলেছে৷ তৈরি হোক ছাত্র রাজনীতির একটা নতুন ধারা৷ ক্যাম্পাসগুলোতে মূলস্রোতের রাজনীতির কারখানা বন্ধ হোক৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷