1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে থেকে ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক, মন্তব্যে বিতর্ক

৪ আগস্ট ২০১৯

শতবর্ষে কলকাতার ঐতিহ্যশালী ফুটবল ক্লাব ইস্টবেঙ্গল৷ এই ক্লাবের নামেই রয়েছে পূর্ববঙ্গ৷ পশ্চিমবঙ্গের একটি ক্লাবে কি থাকতে পারে ওপার বাংলার উল্লেখ? একটি মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷

https://p.dw.com/p/3NJJr
Dekoration von ostbengalischen Unterstützern auf einem Bahnhof
ছবি: DW/P. Samanta

১৯২০ সালের ১ আগস্ট কলকাতায় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রতিষ্ঠা৷ বৃহস্পতিবার তার শতবর্ষ পালনের উৎসব শুরু হল৷ শুধু রাজধানী শহর নয়, জেলায় জেলায় প্রিয় ক্লাবের শতবর্ষ ঘিরে সমর্থকরা উদ্বেল৷ চির প্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান ক্লাবও শুভেচ্ছা জানিয়েছে লাল-হলুদকে৷ ঠিক সেই সময় বেসুরো মন্তব্য করেছেন মেঘালয়ের রাজ্যপাল, প্রাক্তন বিজেপি নেতা তথাগত রায়৷ তিনি বহু পুরনো একটি বক্তব্য তুলে ধরেছেন৷ তাঁর মতো পশ্চিমবঙ্গের কোটি কোটি মানুষের শিকড় পূর্ববঙ্গ তথা এখনকার স্বাধীন বাংলাদেশে৷ সেই প্রসঙ্গ টেনে তথাগত টুইটারে লেখেন, ‘‘যদি আমি পাঁচ মিনিট ঠাণ্ডা মাথায় ভাবি, ওয়েস্ট বেঙ্গলে থেকে কেন আমি ইস্টবেঙ্গল সমর্থক, তাহলে সত্যটা বেরিয়ে আসবে৷ আমার বাড়ি ছিল পূর্ব বাংলায়, সেখানে আমার যাবার অধিকার নেই৷ ধর্মের কারণে আমরা বিতাড়িত হয়েছিলাম৷ আমার বক্তব্য, এই কথাটা যেন আমরা বাঙালরা কখনো ভুলে না যাই৷''

তথাগত এই মন্তব্যের জন্য কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে ভেসে গিয়েছেন৷ ট্যুইটে তিনি ক্ষোভ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি৷ বৃহস্পতিবার ইস্টবেঙ্গলের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেঘালয়ের রাজ্যপালের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন৷ তিনি কারো নাম উল্লেখ না করে বলেন, আমি এই বঙ্গে জন্মেছি বলে ইস্টবেঙ্গলকে সমর্থন করতে পারব না, এটা হতে পারে না৷ ইস্টবেঙ্গলকে ছোট করা হচ্ছে৷ ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের মতো ক্লাবকে ভৌগোলিক সীমায় বেঁধে রাখা যায় না৷ ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর ভাষায়, আমি এ কথা শুনে অত্যন্ত লজ্জিত হয়েছি৷ ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ও মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে নিয়ে আমরা গর্ব করি৷ তিনটি ক্লাবের সমর্থকদের আমরা সম্মান করি৷

ইস্টবেঙ্গলে সারা পৃথিবীর ফুটবলাররা খেলেন: পবিত্র সরকার

দেশভাগের সময় যাঁরা ছিন্নমূল হয়ে এপার বাংলায় এসেছেন, তাঁরাও তথাগতের সঙ্গে একমত নন৷ দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা নির্মলেন্দু রায়ের বাড়ি ছিল শ্রীহট্টে৷ তিনি ঘোরতর ইস্টবেঙ্গল সমর্থক৷ তাঁর বক্তব্য, প্রচারের আলোয় থাকার জন্য এ ধরনের মন্তব্য৷ ক্লাবের নামের সঙ্গে শিকড়ের যোগ আছে বলেই তো ইতিহাস ভোলা সম্ভব নয়৷ পূর্ববঙ্গ বলে কোনো জায়গা এখন নেই, কিন্তু ইস্টবেঙ্গল নামটা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে৷ শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার এক সুরে বলেন, কোনো বঞ্চনা থেকে ক্লাবের উৎপত্তি হতেই পারে৷  কিন্তু, সেই ইতিহাস সমর্থকেরাই মনে রাখেন না৷ এখন ইস্টবেঙ্গলে সারা পৃথিবীর ফুটবলাররা খেলেন৷  এখানে প্রাদেশিকতার কোনো জায়গাই নেই৷

দেশভাগের অনেক আগে ইস্টবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠা৷  ১৯৪৭ সাল থেকে ঘরছাড়া মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছে এই ক্লাব৷  জড়িয়ে গিয়েছে ছিন্নমূল জনতার জীবন সংগ্রামের সঙ্গে৷  নদিয়ার কল্যাণীর বাসিন্দা শেখর দাসের পূর্বপুরুষরা ছিলেন বরিশালে৷  তিনি বলেন, ‘‘আমরা অনেকেই পৈর্তৃক ভিটে দেখিনি৷  সুচিত্রা সেন থেকে জ্যোতি বসুর আদি বাড়ি ওই বাংলাতেই আছে৷  ইস্টবেঙ্গল নামটাই আমাকে আমার পূর্বপুরুষের লড়াই, যন্ত্রণা বয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে৷'' 

পশ্চিমবঙ্গের পুরনো বাসিন্দা বা ঘটি এবং পূর্ববঙ্গ থেকে আসা মানুষ বা বাঙালদের মধ্যে টানাপোড়েনের কেন্দ্রে রয়েছে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের ময়দানি লড়াই৷ তাই প্রাক্তন ফুটবলার থেকে ক্লাবের কর্মকর্তা কিংবা সমর্থক, সবার কাছেই ইতিহাসের থেকে গুরুত্বপূর্ণ ফুটবল৷  তথাগত রায়ের মন্তব্য নিয়ে তাই বিজেপি নেতারা মুখ খোলেননি৷ কে কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক, তার থেকে বেশি আবেগের, কে কোন ফুটবল ক্লাবের সমর্থক৷  পবিত্র সরকারের কাছে তথাগতের মতামত অবান্তর ও ছেলেমানুষি৷  তিনি বলেন, এখন আর বাঙাল-ঘটি বিভাজন নেই৷  পশ্চিমবঙ্গের আদি বাসিন্দারা ইস্টবেঙ্গলকে সমর্থন করেন৷  সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো পূর্ববঙ্গের কত ফুটবলপ্রেমী মোহনবাগানের সমর্থক৷  খেলা ধর্ম, রাজনীতি, ইতিহাস সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে৷

 

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷