পর্যাপ্ত ইলিশ না পেয়ে হতাশ বাংলাদেশের উপকূলের জেলেরা
৭ জুলাই ২০২২বাংলাদেশের উপকূল থেকে ফিরে আরো জানাচ্ছেন যুবায়ের আহমেদ৷
বাংলাদেশের মাছের যোগানের একটা বড় অংশ আসে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে৷ কিন্তু মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনার জেলেরা অভিযোগ করছেন যে তারা আগের মত মাছ পাচ্ছেন না৷
৫০ বছর বয়সি মোহাম্মদ বাবুল তাদের একজন৷ তিনি মোহনায় জাতীয় মাছ ইলিশ ধরেন৷ দেশটির মাছ উৎপাদনের বড় অংশের যোগান আসে ইলিশ থেকে৷
তিনি বলেন, ‘‘আগে ঠিকমতো মাছ পেতাম৷ কিন্তু গেল তিন মৌসুম ধরে মাছ পাচ্ছি না৷ আগে বছরে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার মাছ পেতাম৷ এখন দুই লাখ টাকার মাছ পেতেই খবর হয়ে যায়৷ কারণ গাঙে মাছ নেই৷''
এর কারণ জিজ্ঞেস করলে বাবুল ডয়চে ভেলেকে নিয়ে যান বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা নতুন এক চরে৷ স্থানীয় এক জেলের নামানুসারে তারা এই চর ডাকেন ‘বশিরের চর' বলে৷ তার ধারণা, এই চরের কারণেই মাছ চলাচল করে নদীর দিকে আসতে পারছে না৷ বলেন, বঙ্গোপসাগরের মোহনায় এমন বেশ কয়েকটি চর জেগেছে৷
‘‘এই চরগুলো একেবারে বাঁধের মতো জেগে উঠেছে৷ তাই মাছ সমুদ্র থেকে আমাদের এলাকার দিকে আসতে পারছে না৷ তাই আমরা খুব কম মাছ পাই৷ গেল কয়েক বছরে এই চরগুলো একেবারে এলোমেলোভাবে জেগে উঠেছে,'' বলেন বাবুল৷
নদীমাত্রিক দেশটি এখন বছরে ৪৫ লাখ টন মাছ উৎপাদন করে৷ এর অর্ধেকেরও বেশি আসে চাষ থেকে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি উপকূলে মাছের যোগানে ভাটা পড়েছে, বিশেষ করে ইলিশের মত পরিযায়ী মাছের৷ ওয়ার্ল্ড ফিশের হিসেবে, ২০১৯ সাল থেকে ইলিশ উৎপাদনের হার কমছে৷ এ সময় লক্ষ্য ছিল ছয় লাখ টন ইলিশ উৎপাদনের৷ কিন্তু তা সাড়ে পাঁচ লাখ টনের বেশি হচ্ছে না৷
‘‘অনেকগুলো ছোট চর জেগে উঠেছে৷ এগুলো সাময়িক হবার কথা থাকলেও, ইদানিং আমরা দেখছি চরগুলো গড়ছেই বেশি, ভাঙছে কম৷ মাছের গতিপথ ছোট হয়ে আসছে৷ নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে আসছে,'' বলেন ওয়ার্ল্ড ফিশের বিশ্লেষক ড. আবদুল ওয়াহাব৷
তিনি বলেন, ইদানিং মাছের অভিপ্রয়ানের সময় নদীর তাপমাত্রাও বেশি হচ্ছে৷ তবে এসব ফ্যাক্টর নিয়ে আরো গবেষণার দরকার আছে বলে মনে করেন তিনি৷
এদিকে, সমুদ্রের মাঝে মাছের খোঁজে থাকা বাবুল এসব বিজ্ঞান বোঝেন না৷ যেটা বোঝেন তা হলো, হয়তো আজও তাকে অল্প শিকারেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে৷
২০১৫ সালের গ্যালারিটি দেখুন :