1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরীমনির জন্য পুলিশের ম্যাজিক, অন্যদের জন্য কী?

১৭ জুন ২০২১

চিত্র নায়িকা পরীমনির একটি কথা এখন বেশ আলোচনায়। আর তা হলো," পুলিশ ম্যাজিকের মত কাজ করেছে।” কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে অন্যদের জন্যও কি পুলিশ ম্যাজিকের মত কাজ করছে?

https://p.dw.com/p/3v6eO
Indien PK Schauspielerin Shamsunnahar Smriti
ছবি: bdnews24.com

অতি সম্প্রতি কলেজ ছাত্রী মুনিয়ার আত্মহত্যায় প্ররোচণার ঘটনায় কিন্তু সেই ম্যাজিক দেখা যায়নি।

পরীমনি ধর্ষণ এবং হত্যাচেষ্টার মামলাটি দায়ের করা হয় সোমবার( ১৪ জুন) সকালে সাভার থানায় আর ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদসহ পাঁচ জনকে আটক করা হয় ওই দিন দুপুরেই উত্তরা এলাকা থেকে। তাদের গ্রেপ্তারে সাভার থানা পুলিশের জন্য অপেক্ষা করা হয়নি। ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দিয়ে রিমান্ডে নেয়। এখনো মূল মামলায় সাভার থানা পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেনি। গোয়েন্দা বিভাগ ওই মামলার তদন্তকারী না হলেও তারা ধর্ষণ এবং হত্যাচেষ্টার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তবে এখনো নিশ্চিত নয় পরীমনির মামলায় তদন্ত কোন দিকে যায়। কারণ এরইমধ্যে পরীমনির বিরুদ্ধে গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগে জিডি করা হয়েছে। তারও তদন্ত শুরু হয়েছে।

এই সময়ে আরেকটি অলোচিত ঘটনা কলেজ ছাত্রী মোশারাত জাহান মুনিয়ার আত্মহত্যা। গত ২৭ এপ্রিল গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজ ছাত্রী মোশারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে গুলশান থানায় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পুলিশ শুরুতে প্ররোচণার প্রমাণ পাওয়ার কথা বললেও এখন চুপসে গেছে। দেড় মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও আসামিকে আইনের আওতায় আনা হয়নি।

নূর খান

গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেছেন, গুলশান থানা যদি লিখিত অনুরোধ জানায় তাহলে মুনিয়ার ঘটনায় আসামিকে তারা গ্রেপ্তার করবে। পরীমনির ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তারে তিনি নেতৃত্ব দেন।  কিন্তু গুলশান জোনের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী এর আগে বলেছেন," আমরা প্ররোচনার বিষয়ে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহে এখনো কাজ করছি। আইনে গ্রেপ্তারে কোনো বাধা না থাকলেও নিশ্চিত হয়েই গ্রেপ্তার করতে চাই।”

আর বহুল আলোচিত সাগর-রুনি সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকান্ডে জড়িতদের  সাড়ে নয় বছরেও চিহ্নিত করা যায়নি। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বাসায় তাদের হত্যা করা হয়। এপর্যন্ত র‌্যাব ৮০ বার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার তারিখ পিছিয়েছে।

রুনির ভাই নওশের রোমান বলেন," আমাদের পরিবারের সদস্যরাও বছরের পর বছর কেঁদেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এখানে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে না। চলে কারো ইচ্ছায়৷ যখন তারা চায় তখন পুলিশ ম্যাজিকের মত কাজ করে। যখন চায় না তখন কিছুই হয় না। সাগর-রুনির হত্যাকারীরা আইনের আওতায় আসুক তা হয়তো একটি প্রভাবশালী মহল চায় না। তাই এখানে কিছু হচ্ছে না।”

"আবু ত্ব-হা আদনানের স্ত্রীও তো কাঁদছেন। তাকে তো উদ্ধার করা যাচ্ছে না,'' বলেন নওশের রোমান।

এরকম আরো বহু উদাহরণ দেয়া যাবে যেখানে পুলিশ ম্যাজিক তো দূরের কথা লজিক অনুযায়ীও কাজ করেনা। ‘আসামি গ্রেপ্তার হচেছ না, বাদিকে হুমকি” এটা লিখে গুগলে সার্চ দিলে প্রায় চার হাজার প্রতিবেদন পাওয়া যায়। আর সেগুলো মনযোগ দিয়ে দেখলে দেখা যাবে বাংলাদেশের এমন কোনো এলাকা নাই যেখানে আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ার অভিযোগ নাই।

মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন," পরীমনি একটা চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে মা সম্বোধন করে ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলন করে বিচার চেয়েছেন। সংবাদমাধ্যম তা ফলাও করে প্রচার করেছে। তাই হয়তো পুলিশ ম্যাজিকের মত কাজ করেছে। কিন্তু বাস্তবে এই রকম ম্যাজিকের ঘটনা খুবই কম। পুলিশের ওপর চাপ না পড়লে ম্যাজিক দেখা যায় না। আর পরীমনি নিজেও একজন প্রভাবশালী নায়িকা। কিন্তু কলেজ ছাত্রী মুনিয়ার ক্ষেত্রে আমরা সেরকম হতে দেখিনি। ফলে যেটা বোঝা যায় পুলিশ নিজে থেকে তৎপর হয় না। এট কে আইনের শাসন বলা যায়না। আইনে শাসনে পুলিশ চাপ ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করে।”

নওশের রোমান

অবশ্য মানবাধিকার কর্মী নূর খানের রয়েছে ভিন্ন মত। তিনি বলেন," পুলিশ আসলে শুরুতে ম্যাজিকের মত কাজ করেনি পরীমনির ঘটনায়। ঘটনার পর চার-পাঁচ দিন কিন্তু তিনি প্রতিকার পেতে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন কিন্তু কাজ হয়নি। ঘটনার রাতেই তিনি থানায় গিয়েছিলেন কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। কিন্তু পুলিশ যখন চাপের মুখে পড়ে তখন ম্যাজিকের মত কাজ করেছে। তার আগে কিন্তু নয়।”

বর্তমানে পুলিশের সার্বিক নিস্ক্রিয়তা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান সৈয়দ বজলুল করিম। তিনি বলেন," পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা হওয়ায় আমাদের পরিচিত অনেকেই বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে পুলিশের সহায়তা চায়। আমিও পুলিশকে ফোন করি, বলি। কিন্তু কোনো কাজ হয় না। আমি হতাশ। শুধু প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব হলেই কাজ হয়। পরীমনি সেটা পেরেছেন বলেই পুলিশ ম্যাজিকের মত কাজ করেছে। এখন প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কিছু হয় না। সবাই তার মুখাপেক্ষী। কিন্তু সবাই কি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন?”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য