1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবেশ রক্ষায় ইকো-ইসলাম

আতিফ তৌকির
১ নভেম্বর ২০১৯

কয়েক সপ্তাহ আগে বনে পরিবেশ রক্ষা এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবেলায় বিক্ষোভ হলো৷ এসব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপের দাবিতে জড়ো হন জাতিসংঘ কার্যালয়ের সামনে৷ বিশ্বজুড়ে চলা জলবায়ু ধর্মঘটের অংশ হিসেবেই এ আন্দোলন৷

https://p.dw.com/p/3SLKT
ছবি: DW/A. Tauqeer

গত কয়েক বছরে সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা টুনব্যার্গ ও তার ফ্রাইডে ফর ফিউচার আন্দোলন বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছে৷ আন্দোলনকারীরা মনে করেন, বিশ্বনেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছেন না৷ এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে

পাকিস্তানের একটি মুসলিম পরিবারে আমার জন্ম৷ জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছি করাচিতে৷ আমাকে শেখানো হয়েছিল, পৃথিবী স্রষ্টার অনন্য এক উপহার, ফলে তাকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে৷ কিন্তু সামাজিক কাঠামো এবং চর্চা ছিল ঠিক তার উলটো৷ শুধু বায়ু দূষণ নয়, প্লাস্টিকের ব্যবহার, পানি দূষণ, পানির অপচয়, বন ধ্বংস জীববৈচিত্র্যের মূল চ্যালেঞ্জগুলোর কয়েকটি৷ শিল্পকারখানায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতেও নেই পরিবেশবান্ধব কোনো পন্থা৷ বিধিবিধান থাকলেও তা মানে না কেউ, সেটা দেখারও কারো গরজ নেই৷

কিন্তু এ বছরের জলবায়ু ধর্মঘটে পাকিস্তানেও হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তুলে ধরেছেন জলবায়ু নিয়ে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে তাদের অসন্তুষ্টির কথা৷

জলবায়ু পরিবর্তন কোনো দেশের একক সংকট নয় এবং সব দেশ একসঙ্গে কাজ না করলে একলা কোনো দেশের তা মোকাবেলার সামর্থ্যও নেই৷ এজন্য সবাইকেই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে৷ বিশ্বনেতাদের এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয়তা হয়তো আমাদের জন্য খারাপ, কিন্তু কিছু সুসংবাদও রয়েছে৷ জলবায়ু রক্ষায় আরো বেশি সাধারণ মানুষ এখন সোচ্চার হচ্ছেন, সক্রিয় ভূমিকা রাখতে রাজপথে নামছেন৷

কয়েক সপ্তাহ আগে জার্মানির লিন্ডাউ শহরে বিভিন্ন ধর্মের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ সেখানে নানা দেশ থেকে আসা নানা ধর্মের মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় ও কথা হয়৷ নানা বিষয়ে ভিন্নমত ও বিশ্বাস থাকলেও যখনই পরিবেশ নিয়ে কথা হয়েছে, খ্রিস্টান, হিন্দু, ইহুদি, মুসলিম, শিখ, বৌদ্ধ,  সবাই কথা বলেছেন এক সুরে৷ সবাই এ নিয়ে জানিয়েছেন একইরকম উদ্বেগ৷

বিশ্বের যে দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার এর মধ্যে বেশ কয়টিই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ৷ পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং অন্য অনেক দেশ এরই মধ্যে এমন পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করছে৷  পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করার আগেই দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন৷ আমাদের কোনো প্ল্যান বি নেই, কারণ আমাদের কোনো প্ল্যানেট বি নেই৷

Atif Tauqeer
আতিফ তৌকির, ডয়চে ভেলেছবি: DW/A. Tauqeer

ডয়চে ভেলের ‘মুকালামা' প্রকল্প শান্তি, আন্তধর্ম সংলাপ এবং জলবায়ু ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে৷ এই প্রকল্পে ছয় মাসের বেশি সময় কাজ করার ফলে আমাদের  দলটি বুঝতে পেরেছে, সব ধর্ম-মত নির্বিশেষে একসঙ্গে কাজ করতে না পারলে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কোনোভাবেই সম্ভব নয়৷ ফলে ডয়চে ভেলের মুকালামা প্রকল্পও মুসলিম স্কলার ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে মিলে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও পরিবেশের গুরুত্ব তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ আর সেটিরই একটি সার্থক প্রতিফলন ঘটলো ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায়৷

বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়া৷ জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি বেশ ভালোভাবেই টের পাচ্ছে দেশটি৷ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় অনেক দ্বীপ হারাতে বসেছে অস্তিত্ব, পাল্টে যাচ্ছে আবহাওয়াও৷

ডয়চে ভেলের ইকো-ইসলাম সম্মেলনের জন্য জাকার্তা নেমেই আমি বুঝতে পারলাম, করাচির সঙ্গে শহরটির কতো মিল৷ নেমেই নাকে লাগলো বায়ু দূষণের ধাক্কা৷ রাস্তা জুড়ে থাকা হাজার হাজার গাড়ি এর কারণটাও বুঝিয়ে দিলো সঙ্গে সঙ্গেই৷

আবহাওয়া কি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পালটে গেছে? এমন প্রশ্নের উত্তর জাকার্তার সবার কাছেই- ‘হ্যাঁ'৷ এই প্রশ্নের একই উত্তর মিলবে করাচি বা ঢাকাতেও৷ জলবায়ু পরিবর্তন এখন কেবল ধারণা নয়, দৃশ্যমান বাস্তবতা৷

তরুণেরা পরিস্থিতি বিষয়ে সচেতন এবং তাদের ভবিষ্যত নিয়ে তারা চিন্তিত৷ তবে আশার বিষয়, তরুণেরা এ নিয়ে রাস্তায় নেমে আসছেন এবং দাবি তুলছেন সুস্থ পরিবেশে বেঁচে থাকা তাদের মৌলিক অধিকার৷

পৃথিবী, পরিবেশ, জলবায়ু বাঁচলেই আমরা বাঁচবো৷ ফলে হাতে হাত ধরে পৃথিবীকে বাঁচানোর এই প্রক্রিয়ায় সামিল হতে চায় ডয়চে ভেলে, সম্পৃক্ত করতে চায় সবাইকে৷