পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি সই করলেন ওবামা-মেদভেদেভ
৮ এপ্রিল ২০১০চেক রাজধানী প্রাগে বৃহস্পতিবার নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি স্বাক্ষর করে দুই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যুগান্তকারী এই চুক্তি স্নায়ুযুদ্ধকালের দুই শত্রুর মধ্যে নতুন সম্পর্ক সূচনার প্রমাণ এবং একইসঙ্গে তা পরমাণু অস্ত্রধারী কিংবা পরমাণু শক্তিধর হয়ে উঠবার আকাঙ্খাসম্পন্ন দেশগুলোর জন্যও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত৷
প্রাগ দুর্গের সুসজ্জিত হলরুমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং বিপুল সংখ্যক সাংবাদিকের উপস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, ‘‘আজকের দিনটি পরমাণু নিরাপত্তা এবং পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ এবং যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী মাইলফলক৷''
চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রাগ দুর্গকে বেছে নেওয়ার একটি প্রতীকী তাৎপর্য আছে৷ কেননা, প্রায় এক বছর আগে এই দুর্গের ফটকেই এক জনসমাবেশে তৎকালে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ওবামা পরমাণু অস্ত্র মুক্ত বিশ্ব গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন৷
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ এই চুক্তি স্বাক্ষরকে একটি নৈতিক বিজয় হিসেবে উল্লেখ করে জানিয়েছেন, এই চুক্তি স্বাক্ষরের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং তাঁর মধ্যে ‘‘ব্যক্তিগত সম্পর্কের রসায়ন খুবই ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷'' রুশ কর্মকর্তারা এই চুক্তি স্বাক্ষরকে স্নায়ুযুদ্ধকালীন শত্রু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সমমর্যদায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার গৌরবের দিন হিসেবে দেখছেন৷
চুক্তি অনুসারে দুই দেশের শতকরা ৩০ ভাগ পরমাণু অস্ত্র হ্রাস হবে, অর্থাৎ দুই দেশ নিজ নিজ দেশের ১৫৫০টি পরমাণু যুদ্ধাস্ত্রবাহী ক্ষেপনাস্ত্র হ্রাস করবে৷ অবশ্য স্বাক্ষরিত এই চুক্তি মার্কিন সেনেট এবং রুশ সংসদের অনুমোদন পেলে তা পূর্ববর্তী স্টার্ট চুক্তির স্থলাভিষিক্ত হবে৷ উল্লেখ্য বিশ্বের মোট পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারের ৯০ শতাংশই যৌথভাবে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের৷
এদিকে, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পরমাণু নীতি ঘোষণা এবং আগামী ১২ ও ১৩ই এপ্রিল ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ওবামার আয়োজনে আন্তর্জাতিক পরমাণু নিরাপত্তা সম্মেলনের মাঝে এই রুশ-মার্কিন নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি স্বাক্ষরকে পরমাণু রাজনীতিতে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে৷
ওবামা এবং মেদভেদেভও সে ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ ওবামা বলেন, ‘‘সন্ত্রাসীদের হাতে পরমাণু অস্ত্র চলে যাওয়া মস্কো থেকে নিউ ইয়র্ক, ইউরোপের নগরীগুলো থেকে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত সবার জন্যই অত্যন্ত বিপজ্জনক৷ এবং আরও দেশে পরমাণু অস্ত্রের বিস্তারও বিশ্ব নিরাপত্তার বিবেচনায় একটি অগ্রহনযোগ্য ঝুঁকি৷''
অন্যদিকে, ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে মেদভেদেভ বলেছেন, দেশটিকে পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ বা ‘এনপিটি' মেন চলতে কার্যকরভাবে বাধ্য করতে জাতিসংঘের একটি ‘যুৎসই' নিষেধাজ্ঞার পক্ষে রাশিয়া৷
প্রতিবেদক : মুনীর উদ্দিন আহমেদ
সম্পদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক