1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পঞ্চায়েত ভোট আসে, বোমা সন্ত্রাস বাড়ে!

৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ৷ বোমাবাজি, বিস্ফোরণ, গুলিচালনার ঘটনা ঘটছে বিভিন্ন জায়গায়৷ পরিণামে ঝরছে প্রাণ৷

https://p.dw.com/p/4NBUL
 বীরভূমের রামপুরহাটে গত বছর দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ে যায় গ্রাম
(ফাইল ছবি) বীরভূমের রামপুরহাটে গত বছর দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ে যায় গ্রামছবি: Prabhakar Mani Tewari

চলতি বছরে রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা৷ তাতে হিংসার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মহল৷ পঞ্চায়েত দখলের নির্বাচনি সংগ্রাম দূরের কথা, এখনো ভোট ঘোষণারও দেরি রয়েছে৷ কিন্তু তার আগে স্কুল বা মাদ্রাসার পরিচালন সমিতির দখল ঘিরেই বড়সড় হিংসার ঘটনা ঘটছে৷

বীরভূমের মাড়গ্রামে বোমাবাজিতে মৃত্যু হয়েছে দু'জনের৷ গত মাসে স্কুল পরিচালন সমিতির নির্বাচন ঘিরে অশান্তি হয়৷ প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, তার জেরেই শনিবারের বোমাবাজি৷ এতে মৃত্যু হয়েছে লাল্টু শেখ ও নিউটন শেখের৷ সাবেক কংগ্রেস সমর্থক লাল্টু এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের ভাই৷

এর পরের দিন, রবিবার একটি মাদ্রাসার পরিচালন সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার মালদার রতুয়ায়৷ বাটনা হাই মাদ্রাসার নির্বাচনে যুযুধান তৃণমূলেরই দুটি গোষ্ঠী৷ তাতে বোমা, গুলি চলে বলে অভিযোগ৷ একজনের মুখ ফুঁড়ে গুলি বেরিয়ে যায়৷ স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ের গোষ্ঠী ও তাদের প্রতিপক্ষ শিবির একে অপরের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছে৷

বাম আমল থেকেই হিংসার জন্য কুখ্যাত দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী এবং ক্যানিং৷ আগে বাম শরিকদের মধ্যে লড়াই আর এখন তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল এসব এলাকায়৷ শনিবার বাসন্তীর তিতকুমার গ্রামে বোমা বিস্ফোরণে কয়েকজন আহত হন৷ এতে সামনে আসে শাসক দলের বিবাদ৷ আমঝাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন সেখানকার পঞ্চায়েত সদস্য৷ সেই অভিযোগ খারিজ করেছেন পঞ্চায়েত প্রধান৷ ক্যানিংয়ে ইটখোলা গ্রামপঞ্চায়েতের গোলাবাড়ি এলাকার রাশ নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদে বোমাবাজির ঘটনা সামনে আসে৷

প্রশাসনের কেউ কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে: নীলাদ্রি বন্দোপাধ্যায়

বীরভূমের ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও শাসক দলের নেতৃত্ব কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলেছে৷ যদিও কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, এলাকায় তাদের সংগঠনই নেই৷ তারা কী করে বোমাবাজি করবে! অন্যদিকে মালদা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার চাপানউতোর দেখে বোঝা যাচ্ছে, এখানকার হিংসার নেপথ্যে রয়েছে তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠীর লড়াই৷

শুধু নির্বাচনের মৌসম বলে নয়, গত কয়েক মাসে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটেছে৷ বিস্ফোরণে শিশুরও মৃত্যু হয়েছে, কয়েকজন আহত হয়৷ বীরভূমের বগটুইয়ের ঘরবন্দি মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনা সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছে৷ এরপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, অবিলম্বে বোমা-গুলি-অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে৷ কিন্তু তা সত্ত্বে বোমা বিস্ফোরণ ও মানুষের মৃত্যুতে বিরতি নেই৷ তাতে রেহাই নেই শিশুদেরও৷

সম্প্রতি শাসকদলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেশপুরের জনসভায় দাঁড়িয়ে আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘আগামীদিনে প্রতিটি পঞ্চায়েতে শান্তিপূর্ণ, অবাধ নির্বাচন হবে৷ পঞ্চায়েতে মানুষ ভোট দেবেন৷ বিরোধীরা মনোনয়ন করতে না পারলে আমি করে দেব৷’’

কিন্তু দু'দিনের মধ্যে পরপর কয়েকটি ঘটনা ঘিরে ফের রাজনীতি উত্তপ্ত৷ ফলে আবার পুরনো একটি প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গে আরো একটি নির্বাচন কি সংঘর্ষে রক্তাক্ত হতে চলেছে?

মুসলমানেরা কি মোদীর আমলে নিরাপদ?

বাম আমলে পরিবর্তনের দাবিতে পথে নেমেছিলেন চিত্রশিল্পী সমীর আইচের মতো গুণীজন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নেতারা যখন বলেন এবার শান্তিপূর্ণ ভোট হবে, তখন বোঝা যায় আগেরটা হয়নি৷ যে কালেই অন্যায় হোক, সেটা অন্যায়৷’’

মাড়গ্রামে এই ঘটনার পরই পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠিকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়৷ প্রশাসন সূত্রে খবর, রুটিন মেনেই এই বদলির নির্দেশ৷ এমনকি নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠি পুলিশ সুপার থাকার সময়েই বগটুইয়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে৷ এবার ফের তার সময়েই মাড়গ্রামের ঘটনা৷

বিরোধীদের অভিযোগ, পুলিশ শাসক দলের নির্দেশে হাত গুটিয়ে রয়েছে৷ তাই বড় ঘটনা ঘটলেও ধরপাকড় করার ক্ষেত্রে তাদের তৎপরতা কম৷ এ জন্য সরকারকে

দায়ী করেছেন রাজ্যের সাবেক পুলিশ কর্তা নজরুল ইসলাম৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শাসক দলের একাধিক শিবিরের মধ্যে পঞ্চায়েত দখলে রাখার লড়াই চলছে৷ ঘটনায় তৃণমূল নেতারা জড়িত থাকলে তাদের পুলিশ ধরছে না৷ এটা পুলিশমন্ত্রীর ব্যর্থতা৷’’

যদিও রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম কোনো ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের যোগ মানতে চাননি৷ বীরভূমের ঘটনায় তিনি মাওবাদীদের জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ বিস্ফোরণ নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় মন্ত্রী প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন৷

ফিরহাদের মন্তব্য, ‘‘বিজেপি পশ্চিমবঙ্গকে অশান্ত করার জন্য অন্য রাজ্য থেকে বোমার মশলা সরবরাহ করছে৷ এই ধরনের মশলা বা রাসায়নিক ডিফেন্সের গুদামে থাকে, বাজারে পাওয়া যায় না৷’’ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের পাল্টা তীর, ‘‘মন্ত্রীর বাড়িতে তল্লাশি চালালে বোমার মশলা পাওয়া যেতে পারে!”

ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি)-র সাবেক আধিকারিক দীপাঞ্জন চক্রবর্তী এমন কোনো সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তার প্রতিক্রিয়া, ‘‘রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে মন্ত্রী এমন কথা বলে থাকতে পারেন৷ কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের গুদাম থেকে বিস্ফোরক পাচার হওয়া সম্ভব নয়৷’’

মাওবাদী অনুপ্রবেশ কিংবা অস্ত্র-বোমা-বারুদ পাচার, কারণ যাই হোক, রাজ্যের গণ্ডির মধ্যে বেআইনি কাজকর্ম রোখার দায়িত্ব পুলিশেরই৷ এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের৷ তাদের বক্তব্য, শাসক বদলালেও পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা বদলায় না!

হিংসার পরম্পরা কয়েক দশক ধরেই পশ্চিমবঙ্গে বহমান৷ এতে রক্ত ঝরে যে সাধারণ মানুষের, তাদের অপরাধী ভাবেন না প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে চাকরি কম৷ তাই হিংসায় লিপ্ত হওয়ার জন্য অনেক মানুষকে পাওয়া যায়৷ এর বিনিময়ে তারা রোজগার করেন৷ বেকারি দূর না করলে এই হিংসা থামবে না, ক্ষমতায় যে দলই আসুক’’

এর থেকে মুক্তির উপায় কী? নজরুল ইসলামের মতে, ‘‘দুর্নীতি থাকলে অপরাধ ও হিংসা থাকবেই৷ আবাস যোজনা, ১০০ দিনের কাজ ইত্যাদি প্রকল্পের টাকা হাতানোর লক্ষ্যে পঞ্চায়েত দখলে রাখার চেষ্টা৷ তাকে ঘিরে এত অশান্তি৷ এই দুর্নীতির ছক না থাকলে হিংসার প্রয়োজন হত না৷’’

পরিস্থিতি বদলাতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন জরুরি বলে মনে করেন পর্যবেক্ষক নীলাদ্রি বন্দোপাধ্যায়৷ অভিষেকের মন্তব্যের বিশ্লেষণে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দলের তরফে শান্তিপূর্ণ ভোটের কথা বলেছেন৷ কিন্তু প্রশাসনের কেউ কি এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন?’’

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য