পঞ্চম দফাতেও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ পশ্চিমবঙ্গে
১৭ এপ্রিল ২০২১পঞ্চম দফার ভোটেও সহিংসতা হলো৷ প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র থেকেই সংঘর্ষ, গোলমালের খবর এসেছে৷ কামারহাটিতে বিজেপি প্রার্থী রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ তার গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর মারা হয়েছে৷ তিনি আহত হয়েছেন৷ বিধাননগর বা সল্ট লেকে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে৷ গোটা দুয়েক জায়গায় গুলি চললেও কেউ মারা যাননি৷
দেগঙ্গায় গুলি
এদিন দেগঙ্গায় গুলি চলে৷ অভিযোগ উঠেছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনীই শূন্যে গুলি চালিয়েছে৷ কিন্তু সংবাদসংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, নির্বাচন কমিশন বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর তরফ থেকে গুলি চালানোর কথা স্বীকার করা হয়নি। ফলে গুলি কে চালিয়েছে তা অস্পষ্ট৷
তবে দিনভর তৃণমূল নেতারা কেন্দ্রীয় বাহিনী সম্পর্কে অভিযোগ করে গেছেন৷ এবিপি আনন্দের টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কামারহাটির তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্র বলছেন, ‘ডোন্ট টাচ মি৷ মাই নেম ইস মদন মিত্র৷’
সল্টলেকে সংঘর্ষ
পঞ্চম দফার ভোটে বিধাননগর কেন্দ্রে দুই প্রাক্তন সতীর্থের লড়াইয়ে সবার নজর ছিল শুরু থেকেই৷ তৃণমূলের সুজিত বসু ও বিজেপির সব্যসাচী দত্ত৷ এই কেন্দ্রে সকাল থেকে ঘুরেছেন ডিডাব্লউর প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ৷ তিনি জানিয়েছেন,‘‘বাইপাসের ধারের শান্তিনগর এলাকায় তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীরা বচসায় জড়িয়ে পড়েন৷ তারপর হাতাহাতি ও এরপর শুরু হয় ইটবৃষ্টি৷ আধঘণ্টার মধ্যে এলাকায় গিয়ে দেখেছি, যথেষ্ট উত্তেজনা ছিল৷ তবে ভোটগ্রহণের কাজ শুরু হয়৷ বিধাননগরের অন্য এলাকাতেও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে৷’’ তবে স্যমন্তকের মতে, ‘‘অন্যবারের তুলনায় সল্ট লেকে সহিংসতার ঘটনা কম৷’’
প্রার্থী আক্রান্ত
কামারহাটির বিজেপি প্রার্থী রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন আক্রান্ত হন৷ ডিডাব্লিউর সঙ্গে ফেসবুক লাইভ করার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে রাজুর গাড়ি লক্ষ্য করে ইট মারা হয়৷ গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ রাজু আহত হন৷ ডিডাব্লিউকে রাজু জানিয়েছেন, তিনি আগের মতোই বুথে বুথে ঘুরবেন৷ তার অভিযোগ, তৃণমূলের কর্মীরাই তাকে আক্রমণ করেছে৷
কামারহাটির তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্রও বিকেলের দিকে একটু অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ তবে তৃণমূল সূত্র ডিডাব্লিউতে জানিয়েছে, গ্যাসট্রিকের কারণে তিনি অসুস্থ হয়েছিলেন৷ এখন তিনি ভালো আছেন৷
বিধাননগরের বিজেপি প্রার্থী সব্যসাচী দত্তকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে এবং কালো পতাকা দেখানো হয়েছে৷ আরেক বিজেপি প্রার্থী সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ও তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন৷
জনতার অভিযোগ
নদিয়ার গয়েশপুরে ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ নিজেদের ভোট দিতে না পারায় স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখান৷ এজন্য অভিযোগের তির ছিল তৃণমূলের দিকে৷ সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, তৃণমূলের দাবি ভোটারদের তারা ভয় দেখায়নি, বিজেপি অপপ্রচার চালিয়েছে৷ এ বিষয়ে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আগের জমানায় দলকেন্দ্রিক কাজে পুলিশকে ব্যবহার করা হতো৷ এখন ব্যক্তিকেন্দ্রিক কাজে পুলিশ ও প্রশাসন ব্যবহৃত হচ্ছে৷ পুলিশ যতদিন স্বাধীনভাবে, আইনের শাসন মাফিক কাজ করতে না পারছে, ততদিন এ তো চলবেই৷’’
বিজেপি আক্রান্ত
নদিয়ার কল্যাণী বিধানসভার কাঁটাগঞ্জে বিজেপি নেতাকে মারধরের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷ সন্দেশখালির দাউদপুরে বিজেপি কর্মী আক্রান্ত৷ পিটিআই জানাচ্ছে, উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁয় বিজেপির পোলিং এজেন্টকে অপহরণের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷ পাশাপাশি মিনাখাঁয় বালিগৌরী এলাকায় বিজেপি সমর্থকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ শাসক দলের বিরুদ্ধে৷ আতঙ্কে ভোট দিতে বেরোলেন না বাসিন্দারা৷
তৃণমূল আক্রান্ত
কেষ্টপুর চঞ্চল কুমারী স্কুলে ২৬৪ নম্বর বুথের তৃণমূলের বুথ এজেন্টকে ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে৷ পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরে ৪০ ও ৪১ নম্বর বুথে তৃণমূল এজেন্টদের বসতে না দেওয়ার অভিযোগ৷ পুলিশ গিয়ে ওই এজেন্টদের ভোটে নিয়ে যায়৷ ভোটযুদ্ধে মন্ত্রী নির্মল মাজি, রবীন্দ্রনাথ ঘোষের পর এবার হেলমেট মাথায় ভোট ময়দানে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী৷ তৃতীয় দফায় হামলার হাত থেকে বাঁচতে হেলমেটে আশ্রয় নিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী নির্মল মাজি৷ টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, তার থেকেই শিক্ষা নিয়ে আগাম সতর্ক হন সতীর্থ রবীন্দ্রনাথ ঘোষ৷ আজ একই পথে হাঁটলেন মন্তেশ্বরের তৃণমূল প্রার্থী সিদ্দিকুল্লা৷
অন্যান্য অভিযোগ
খোলা দরজার পাশেই ইভিএম রাখার অভিযোগ ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি কেন্দ্রের একটি বুথে৷ রাস্তা থেকে দেখা যাচ্ছে ভোটাররা কাকে ভোট দিচ্ছে, অভিযোগ বিজেপি প্রার্থী শিখা চট্টোপাধ্যায়ের৷ সেক্টর অফিসারের পাল্টা দাবি, বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে না ভোট প্রক্রিয়া৷ টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দুষ্কৃতীদের সন্ধান মিলেছে চাকদহ বিধানসভার তালতলা, দাসপাড়ার ৪৪-৪৫ বুথে৷ ভোটারদের আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে৷ পঞ্চম দফার ভোটেও হিংসার চেনা ছবি দেখে যথেষ্টই হতাশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক অমল মুখোপাধ্যায়৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে হিংসা ও অশান্তির ভোট কোনোভাবেই পরিত্যক্ত হয়নি৷ বরং বাকি তিন দফার ভোটেও এই ট্র্যাডিশন চলবে মনে হয়৷ এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক৷”
কোভিড পরিস্থিতিতে ভোট চললেও ভোটারদের মধ্যে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব দেখা গিয়েছে৷ অনেকে মাস্ক পরে এলেও অনেকে পরেননি৷ পাশাপাশি কোনো দূরত্ববিধি মানা হয়নি কোথাও৷ ইতিমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পশ্চিমবঙ্গ বেসামাল৷ নির্বাচনের পর পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়াবে, সেটা ভেবে অনেকে দুশ্চিন্তায়৷
মার্চের ছবিঘর দেখুন...