‘নেতানিয়াহুর জমানা এখন শেষ'
১৭ মার্চ ২০১৫জার্মানির জাতীয় এফএম বেতার কেন্দ্র ডিএলএফ-এর সাংবাদিক টোবিয়াস আর্মব্র্যুস্টার নির্বাচনের এক দিন আগে ইসরায়েলি সাংবাদিক ও ঐতিহাসিক টম সেগেভ-এর এক সাক্ষাৎকার নিয়েছেন৷ আর্মব্র্যুস্টার প্রথমেই মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, ইসরায়েলের যে কোনো ক্নেসেট বা সংসদ নির্বাচনের প্রতি গোটা বিশ্বের বিশেষ আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়৷ জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী এবার প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর প্রতিপক্ষ ইৎশাক হ্যারৎসগ প্রায় সমান ভোট পেতে চলেছেন৷
এমন প্রেক্ষাপটে এবারের নির্বাচন সত্যি ঐতিহাসিক কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে টম সেগেভ প্রথমেই ঠাট্টা করে বলেন, জার্মানিতে চলমান বিশ্বের বৃহত্তম তথ্য-প্রযুক্তি মেলা সেবিট-এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য ইসরায়েলের নির্বাচনের তুলনায় অনেক বেশি৷ তবে নেতানিয়াহুর জমানা সত্যি শেষ হলে এই নির্বাচনকে ঐতিহাসিক আখ্যা দেওয়া যাবে বলে তিনি মনে করেন৷ সর্বশেষ জনমত সমীক্ষা যাই বলুক না কেন এবং দুই শিবির যতই ভোট পাক না কেন, নির্বাচনের পর দরকষাকষির উপর আগামী সরকারের রূপরেখা নির্ভর করবে বলে টম সেগেভ মনে করেন৷
এ প্রসঙ্গে সেগেভ আরও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, জার্মানি সহ গোটা বিশ্ব যে সব বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, ইসরায়েলের মানুষের কাছে তার থেকে অনেক বেশি জরুরি বিষয় হলো নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকবেন কিনা এবং বাসস্থানের খরচ কমবে কি না৷ মোটকথা, দেশের অর্থনীতি নিয়ে তারা বেশি চিন্তিত৷ ইরানের হুমকি, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সম্পর্কের মতো বিষয় তাদের কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ ফিলিস্তিনি সংকটের সমাধান অদূর ভবিষ্যতেও দূর অস্ত থাকবে৷ প্রশ্ন হলো, কোন রাজনৈতিক শিবির তা ভালোভাবে ‘ম্যানেজ' করতে পারবে৷ এমনকি নেতানিয়াহু নির্বাচনের প্রচারের সময় ইরান, ফিলিস্তিনি সংকট, সন্ত্রাসবাদের মতো বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করলেও নানা কেলেঙ্কারি, নেতানিয়াহুর স্ত্রীর ব্যয়বহুল জীবনযাত্রার মতো বিষয়ই ভোটারদের কাছে প্রাধান্য পেয়েছে৷
গত ডিসেম্বর মাসে নেতানিয়াহু যখন দেশের উপর আগাম নির্বাচন চাপিয়ে দিয়েছিলেন, তখন তাঁর জয়ের সম্ভাবনা ছিল বেশ উজ্জ্বল৷ অথচ গত কয়েক মাসে তিনি অনেক সমর্থন হারিয়েছেন৷ এর কারণ হিসেবে সেগেভ কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছেন৷ প্রথমত মানুষের মনে হয়েছে, নেতানিয়াহুর আর কিছু দেবার নেই৷ তাছাড়া ছোট হলেও তিনি একের পর এক ভুল করে গেছেন৷ ফলে এমনকি তাঁর দলের মধ্যেও নেতানিয়াহুকে ঘিরে হতাশার পরিবেশ দেখা যাচ্ছে৷ সেই সুযোগ নিয়ে অনেক ছোট দল ভোটারদের বোঝানোর চেষ্টা করেছে, যে তারাই রক্ষণশীল লিকুদ দলের প্রকৃত উত্তরসূরি আর লিকুদ এখন শুধু নেতানিয়াহু-পার্টি হয়ে উঠেছে৷
ভোটাররা যদি সত্যি নেতানিয়াহুকে বর্জন করেন, এর অর্থ কি ইসরায়েলের জনগণ বামপন্থি রাজনীতির প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়ে উঠেছেন? টম সেগেভ মোটেই সেটা মনে করেন না৷ তাঁর মতে, মানুষ এখনো দক্ষিণপন্থি ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারার প্রতি বেশি আকৃষ্ট৷ ফলে জনমত সমীক্ষায় লেবার পার্টির ইৎশাক হ্যারৎসগ এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ছোট দক্ষিণপন্থি দলগুলিকে কাছে টেনে নিয়ে নেতানিয়াহু আবার সরকার গড়তে পারেন৷
নির্বাচনের ঠিক আগে নেতানিয়াহু বার বার প্রকাশ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিরুদ্ধে তোপ দেগে কি নিজেরই ক্ষতি করেছেন? সেগেভ এমনটাই মনে করেন৷ ইসরায়েলের মানুষ চিরকাল বলে এসেছে, ‘‘আমাদের অন্য কোনো দেশ নেই৷'' আর এখন তারা বলছে, ‘‘আমাদের অন্য কোনো অ্যামেরিকা নেই৷'' কারণ অ্যামেরিকা ও সে দেশের প্রত্যেক প্রেসিডেন্টের উপর চরম নির্ভরশীলতার কারণে সবার মনে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা কাজ করছে৷