‘নিষ্ঠুর অর্থনৈতিক যুদ্ধে নেমেছে জার্মানি'
২০ জুলাই ২০১৫‘ধনতান্ত্রিক' অ্যামেরিকা থেকে শুরু করে ইউরোপের বামপন্থিরা গ্রিসের প্রতি কড়া অবস্থানের কারণে জার্মানির প্রবল সমালোচনা করে চলেছে৷ জার্মানির ক্ষমতাকেন্দ্রের মধ্যেও অস্থিরতা শুরু হয়েছে৷
গ্রিস সংক্রান্ত নীতির ক্ষেত্রে জার্মান সরকারের কড়া অবস্থানের জোরালো সমালোচনা শোনা যাচ্ছে অনেক মহলে৷ সমালোচকদের অভিযোগ, একদিকে গ্রিস সংকট থেকে জার্মানি, বিশেষ করে জার্মানির ব্যাংকগুলি বহুকাল ধরে ফায়দা তুলে এসেছে৷ অন্যদিকে শুধু ব্যয় সংকোচ ও সংস্কারের দাবি তুলে গ্রিসকে নতজানু করতে বাধ্য করছে জার্মান সরকারের নীতি৷ বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী ভল্ফগাং শয়েবলে ও চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে ব্যক্তিগতভাবে এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে৷ ব্রিটেন, অ্যামেরিকা সহ অনেক দেশে গ্রিসের ঋণভার মকুব করে সেখানে আরও বিনিয়োগের দাবি শোনা যাচ্ছে৷ অর্থাৎ একদিকে জার্মানির ব্যয় সংকোচ ও সংস্কারের কড়া মডেল, অন্যদিকে গ্রিসের প্রতি সহানুভূতির ভিত্তিতে সহায়তার ডাক – এই দুই অবস্থানের মধ্যে চলছে সংঘাত৷
এদিকে জার্মানির রাজনীতি জগতের মধ্যেও চলছে ক্ষমতার লড়াই৷ জার্মান পত্রপত্রিকাগুলিও ম্যার্কেলের অবস্থান নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন তুলছে৷ স্যুডডয়চে সাইটুং সংবাদপত্র মনে করে, নিজের সিডিইউ দলের মধ্যে ম্যার্কেলের প্রায় প্রশ্নাতীত অধিপত্যের অবস্থান গত সপ্তাহে ধাক্কা খেয়েছে৷ এতদিন পর্যন্ত তিনি যখন যা চেয়েছেন, দল নীরবে তা মেনে নিয়েছে৷ দলের মধ্যে শয়েবলের কড়া গ্রিস সংক্রান্ত নীতিই গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে, ম্যার্কেল নরমপন্থি বলে বিবেচিত হচ্ছেন৷ সংসদে এই প্রথম ৬৫ জন দলীয় সাংসদ ম্যার্কেলের সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানানোর সাহস দেখিয়েছেন৷
শয়েবলের বর্ধিত ক্ষমতা সম্পর্কে মন্তব্য করেছে ‘ডেয়ার টাগেসস্পিগেল' সংবাদপত্রও৷ পদত্যাগের হুমকি দিয়ে তিনি জার্মানির রাজনীতি জগতকে নাড়িয়ে দিয়েছেন৷ শুধু চ্যান্সেলর ম্যার্কেল নয়, জোটসঙ্গী এসপিডি দলের প্রধান সিগমার গাব্রিয়েলকেও তিনি নিজের বর্তমান ক্ষমতার জোর দেখিয়ে দিয়েছেন৷ এই অবস্থায় নিজের ক্ষমতার আরও অবক্ষয় রুখতে শয়েবলেকে আরও সমঝে চলবেন ম্যার্কেল – এমনটাই মনে করে ‘ডেয়ার টাগেসস্পিগেল'৷
বামপন্থি বলে পরিচিত সংবাদপত্র ‘নয়েস ডয়েচলান্ড' ইউরোপ তথা গোটা বিশ্বে জার্মানির ভাবমূর্তির ক্ষতি সম্পর্কে মন্তব্য করেছে৷ কমপক্ষে গত ১৩ই জুলাই থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, জার্মানি এক নিষ্ঠুর অর্থনৈতিক যুদ্ধে নেমেছে এবং ইউরোপে তার আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করছে৷ এমনকি মার্কিন পত্রপত্রিকাগুলিও এমন অভিযোগ করছে৷ গ্রিস সংক্রান্ত ইউরোজোন শীর্ষ সম্মেলনের পর ‘ইউএসএ টুডে' যুদ্ধে জার্মানির জয়ের কথা লিখেছে৷ এমনকি ইউরোপে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী ফ্রান্সকেও উপেক্ষা করছে জার্মানি৷ এর পর ইউরোপের কোনো সংকটগ্রস্ত দেশের মানুষ এক বামপন্থি সরকার নির্বাচনের সাহস দেখাবে না, যে সরকার ‘জার্মানির' ইউরো এলাকায় তার অনুশাসন চ্যালেঞ্জ করতে পারে৷ গ্রিসকে দমন করতে জার্মানিকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে ফিনল্যান্ড, যে দেশে দক্ষিণপন্থি পপুলিস্ট দল সরকারের জোট সঙ্গী৷ পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশও তাতে শামিল হয়েছে, যারা এককালে নাৎসিদেরও দোসর ছিল৷ জার্মানির ভূমিকার আরও বিস্তারিত সমালোচনা করেছে ‘নয়েস ডয়েচলান্ড'৷
সংকলন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ