নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতা পরিবর্তন চায় বিএনপি
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০গত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি থেকে সাত জন নির্বাচিত হন৷ সে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিল দলটি৷ কিন্তু মহাসচিব ছাড়া বাকি ছয়জন ‘দলীয় সিদ্ধান্তে' শপথ নিয়ে সংসদে গেছেন৷ পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনগুলোতেও অংশ নিয়েছে দলটি৷
সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় এমন কথা বলে আসলেও নির্বাচনে কেন অংশ নিচ্ছে বিএনপি?
বিএনপির সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদ বলেন, ‘‘বাইরে আন্দোলন সংগ্রামের চেয়ে সংসদে কথা বলার গুরুত্ব অনেক বেশি৷ যদিও করোনাকালীন সময়ে সংসদে কথা বলার সুযোগ কম, আমরা মাত্র কয়েকজন সংসদে আছি৷ তারপরও এর প্রভাব আছে৷’’
তিনি বলেন ‘‘নির্বাচন তো একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া৷ এর মাধ্যমেই ক্ষমতার বদল হয়৷ নির্বাচনের মাধ্যমেই একদিন বাংলাদেশে ক্ষমতার বদল হবে৷ সেই নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ধংস করে দেয়া হচ্ছে৷ এটা রক্ষা করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের, প্রশাসনের৷ সরকার চায় না ভোটাররা ভোট দিতে যাক৷ ভোটাররাও ভোটের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন৷ তারপরও আমরা ভোটের অধিকারের জন্যই নির্বাচনে যাচ্ছি৷’’
আগামী ১৭ অক্টোবর ঢাকা-৫ এবং নওগাঁ-৬ আসনের উপ-নির্বাচন৷ এতে অংশ নিচ্ছে বিএনপি৷ এরপর আরো দুইটি আসন ঢাকা-১৮ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপ-নির্বাচন হবে৷ এর জন্যও প্রস্তুত দলটি৷
আওয়ামী লীগের সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে ঢাকা-৫, ইসরাফিল আলমের মৃত্যুতে নওগাঁ-৬, মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে সিরাজগঞ্জ-১ এবং সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে ঢাকা-১৮ আসন শূন্য হয়৷
বিএনপি এই চারটি আসনের জন্যই দলীয় মনোনায়নপত্র বিক্রি শেষ করেছে৷ দুই-এক দিনের মধ্যে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে দলটি৷ দলের নেতা-কর্মীরা চান বিএনপি যেন সামনের সব নির্বাচনেই ভালোভাবে অংশ নেয়৷ করোনার কারণে যেন নামমাত্র অংশগ্রহণ না হয়৷
সংরক্ষিত আসনে বিএনপির মনোনীত এমপি ও দলটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘‘সংসদদের একটি কথার ওজন বাইরের অনেক কথার চেয়ে বেশি৷ সেটা আমি নিজেই বুঝতে পারছি৷ যদিও আমাদের তেমন কথা বলতে দেয়া হয় না৷ তারপরও যেটুকু পারছি জনগণের জন্য কথা বলছি৷ এই সুযোগ তো অন্য কোথাও নেই৷’’
নির্বাচনে যাওয়ায় দলেরও লাভ আছে বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘এতে নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হয়, সক্রিয় হবার সুযোগ পায় আর তাতে দলের গতি বাড়ে,’’ বলেন তিনি৷
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন ‘‘নির্বাচন হলো শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা পরিবর্তনের একমাত্র পথ৷ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে এই নির্বাচনগুলোতে আমরা অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷’’
মির্জা ফখরুল অবশ্য আশা করেন না যে নির্বাচন তেমন সুষ্ঠু হবে৷ তারপরও কেন নির্বাচনে যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি৷ আমরা আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে তুলে ধরার সুযোগ পাব যে এই ধরনের নির্বাচন বাংলাদেশে হচ্ছে৷''
করোনার মধ্যে নির্বাচন হলেও নেতা-কর্মীদের মাঠে সক্রিয় থাকতে বলেছে দলটি৷ প্রচার শুরু হলে তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সর্বাত্মক নির্বাচনি প্রচারও চালাতে চায়৷ শক্তিশালী অবস্থানের মাধ্যমে নামে মাত্র নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এমন ধারণাও দূর করতে চায় তারা৷ এর মাধ্যমে দলে একটি ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে চায় আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও বার্তা দিতে চায়৷
এর আগে বগুড়া, যশোর ও ঢাকার উপ-নির্বাচনেও অংশ নিয়েছে বিএনপি৷ অংশ নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও৷