নির্বাচন ২০২৪: নৌকা পেলেই এমপি!
২১ নভেম্বর ২০২৩এমনকি যারা জোট করার আশায় আছেন তারাও নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকাই চাইছেন৷
চারদিনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফর্ম বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ৩৬২টি৷ এতে দলটির আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা৷ মঙ্গলবার মনোনয়ন ফর্ম বিক্রি শেষ হয়ছে৷
বিশ্লেষক ও আওয়ামী লীগ নেতা এবং প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের সাথে কথা বলে এর বেশ কয়েকটি কারণ জানা গেছে৷ এরমধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ, ফর্ম ক্রেতারা মনে করছেন, বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে যাচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে তাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে জয়ী হওয়া নিশ্চিতই বলা যায়৷ আর ২০১৪ সালের মতো হলে নির্বাচনে তেমন খরচও থাকবে না৷ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ও জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হবে৷ এর বাইরেও কেউ প্রচার পেতে, কেউ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলেও উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের আরও যে নির্বাচন আছে তাতে মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য অথবা রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে জায়গা পেতে এটাকে ব্যবহার করতে চান৷ আর যিনি মনোনয়ন পাবেন তার সঙ্গে দর কষাকষিরও একটা পথ হবে এই মনোনয়ন চাওয়া৷
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না গেলেবিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার আশঙ্কা আছে এবার৷ কারণ আওয়ামী লীগের অনেক এমপিই এখন এলাকায় জনপ্রিয় নন৷ বিদ্রোহী প্রার্থীরা সেই সুযোগ নিতে চাইবেন৷ আর এর বাইরেও বিএনপিসহ আরো অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আশঙ্কা আছে৷ আর সেটা হলেও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নতুন এক পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারে৷
ঝালকাঠি-১ আসন থেকে এরইমধ্যে ১০-১২ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন৷ তাদের একজন হলেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা মনিরুজ্জামান মনির৷ তার কথা, ‘‘দলের হাইব্রিডরা এবারও তৎপর৷ এইরকম দুই হাজার হাইব্রিডের তালিকা করা হয়েছিলো ব্যবস্থা নেয়ার জন্য৷ তাদের মধ্যে এমপিও আছেন৷ কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ এর বাইরে কেউ প্রচার পেতে, কেউ যদি পেয়ে যাই এই মনোভাব থেকে৷ আবার কেউ মনে করছেন মনোনয়ন পেলেই জিতে যাবেন, শিওর শট৷ তবে আমাদের বিশ্বাস এবার ত্যাগী এবং জনপ্রিয়রাই মনোনয়ন পাবেন৷”
কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়া আসনে এখন পর্যন্ত ১২ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন৷ আরো অনেকে কিনতে পারেন বলে জানান টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বাশার৷ তিনি নিজেও মনোনয়ন ফরম কিনেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এর আগেও দুইবার আমি মনোনয়ন চেয়েছি, পাইনি৷ এবার আশা করি পাবো৷ প্রধানমন্ত্রী যদি চান, আল্লাহ যদি রহমত করে তাহলে পাব৷ এত বছর ধরে রাজনীতি করছি আমাদেরও তো কিছু চাওয়া-পাওয়া আছে৷ এমপি হলে জনগণের সেবা আরো বেশি করতে পারব৷”
তার কথা, ‘‘একেক জনের মনোনয়ন ফর্ম কেনার একেক কারণ৷ কেউ কিনছেন ভবিষ্যতের আশায়৷ এবার না পেলেও ভবিষ্যতে পাবেন ৷ কেউ কিনছেন প্রচার পাওয়ার আশায়৷ আবার কেউ কিনছেন এখানে মনোনয়ন না পেলেও উপজেলা বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন সেই আশায়৷”
টাঙ্গাইল -২ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি তানভীর হাসান ( ছোট মনির) মনে করেন, ‘‘দেশের সেবা করার আগ্রহ থেকেই হয়তো অনেকে এবার মনোনয়ন চাইছেন৷ তবে তাদেরই মনোনয়ন চাওয়া উচিত যাদের দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা এবং অভিজ্ঞতা আছে৷ আমি ১৫ বছর জার্মানি ছিলাম৷ দেশে ফিরে মানুষের জন্য কাজ করতে রাজনীতি করছি৷”
তার কথা, ‘‘স্বাধীন দেশ সবাই মনোনয়ন চাইতে পারেন৷ অভিনেতা, খেলোয়াড়, সাংবাদিক সবাই চাইছেন৷ কিন্তু মনোনয়ন নির্ভর করছে শেখ হাসিনার ওপর৷”
চার দিনে ঢাকা বিভাগে ৭৩০টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৫৯টি, সিলেট বিভাগ ১৭২টি, ময়মনসিংহ বিভাগ ২৯৫টি, বরিশাল বিভাগে ২৫৮টি, খুলনা বিভাগে ৪১৬টি, রংপুর বিভাগে ৩০২টি ও রাজশাহী বিভাগে ৪০৯টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে৷
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন মনে করেন, ‘‘আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল৷ অনেক নেতা৷ অনেকই এমপি হতে চান৷ তাই মনোনয়ন চাইছেন৷ এতে দোষের কিছু নাই৷ তবে মনোনয়ন তো দেবেন শেখ হাসিনা৷ এটা নিয়ে তিনি হোম ওয়ার্ক করেছেন৷ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ নিজস্ব প্রার্থীদের ব্যাপারে নিজস্ব জরিপ আছে তার কাছে৷ তিনি জনপ্রিয়তা ও যোগ্যতা দেখে মনোনয়ন দেবেন৷”
এস এম কামাল হোসেন খুলনার একটি আসনের জন্য নিজেও মনোনয়ন ফরম কিনেছেন৷ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘কেউ কেউ শিওর শট চিন্তা করে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন৷ কিন্তু এবার সেরকম হবে না৷ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাাচত হওয়ার সুযোগও থাকবে বলে মনে হয় না৷”
২৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডেও বৈঠক বসবে৷ ওই বৈঠকে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে৷ নির্বাচনের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে৷ জানা গেছে বিএনপির শেষ অবস্থান দেখে মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে৷ জোটের মধ্য থেকে কাদের নৌকা প্রতীক দেয়া হবে তাও বিএনপির অবস্থানের ওপর নির্ভর করছে৷
বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগ ‘পপুলার’ প্রার্থীদের বেছে নেবে৷ তা না হলে বর্তমান এমপিদেরই প্রাধান্য থাকবে৷ তবে নির্বাচন জমাতে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে দলটি নমনীয় থাকবে বলে জানা গেছে৷
এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘‘ক্রিকেটার, অভিনেতা-অভিনেত্রী, সাংবাদিক অনেকেই মনোনয়ন চাইলেও তারা পাবেন বলে মনে হয় না৷ রাজনৈতিক প্রার্থীদেরই প্রাধান্য থাকবে৷ আর মনোনয়ন চূড়ান্ত হবার পর বিভিন্ন আসনে কোন্দল না হলেও মান অভিমান থাকবে৷”রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার মনে করেন, ‘‘নামহীন, গন্ধহীন এলেবেলে অনেকেই এবার মনোনায়ন ফরম কিনছেন৷ আমার মনে হয় তাদের বড় একটি অংশ কিনছেন প্রচারের আশায়৷ আর একটা কারণ হলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে জয় লাভের সমূহ সম্ভাবনা দেখছেন তারা৷ আর এর আগে শিওর শটের চিন্তা ছিলো৷ এবারও বিএনপি না থাকায় সেরকম না হলেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে জয়ী হওয়ার বেশ একটা সম্ভাবনা আছে৷ এবার শিওর শট নাও হতে পারে৷ কারণ অন্যান্য দল থাকবে৷ আরও কিছু বিষয় আছে৷”