নির্বাচন পরবর্তী সংঘাতের নতুন রূপ
১০ জানুয়ারি ২০২৪আওয়ামী লীগের নৌকা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন পরবর্তী সংঘাত শুরু হয়েছে৷ এদিকে স্বতন্ত্রদের কেউ কেউ স্বতন্ত্ররা মিলে সংসদে বিরোধী দল হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় জাতীয় পার্টির ভয় আরো বেড়ে গেছে৷
বিএনপি এবং তাদের সমমনাবিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল ছাড়াও আরো যেসব ছোট ছোট দল অংশ নিয়েছে তাদেরও ‘বড় আশা’ ছিল৷ কিন্তু তাদের সেই আশা পূরণ হয়নি ৷
আওয়ামী লীগ ছাড়া আর সবার আসন ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় তলানিতে এসে পৌঁছেছে৷ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল৷ তাই প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক আর ১৪ দলীয় জোট শেষ পর্যন্ত থাকবে কিনা৷ জাতীয় পার্টির নির্বাচিতরা প্রথমে শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত তারা বুধবার শপথ নিয়েছেন৷ অন্যদিকে তৃণমূল আওয়ামী লীগে বড় ধরনের ফাটলের আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও স্বতন্ত্রদের মধ্যে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ গত ২৪ ঘন্টায় ঝিনাইদহ সদর, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, শরিয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, মাদারীপুরের কালকিনী, জামালপুরের সরিষাবাড়ী, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে৷
৭ জানুয়ারি নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় নেত্রকোনা ও টাঙ্গাইলে দুইজন জন নিহত হয়েছেন৷ ২০ জেলায় সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে৷ এই সব সংঘাতে দুই শতাধিক আহত হয়েছেন৷ সংঘাত হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে৷
স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র যারা জয়ী হয়েছেন তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নির্বাচনের সময়েই বিভেদ তৈরি হয়৷ আর এবার কোনো স্বতন্ত্রকেই কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়নি৷ শুধু জেলা কমিটি ফরিদপুর সদরের এ কে আজাদকে বহিস্কার করেছে৷ স্থানীয় নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের যারা স্বতন্ত্র হিসেবে জয়ী হয়েছেন তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগেও প্রভাবশালী৷ ফলে সংঘাত ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতিতে বিভাজন আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা৷
এবার স্বতন্ত্রদের কাছে আওয়ামী লীগের অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন৷ তিন প্রতিমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের ১৯ জন এমপি স্বতন্ত্রদের কাছে পরাজিত হয়েছেন৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার মনে করেন, "সংঘাতের যে খবরগুলো আসছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যদি যথাযথ বার্তা পাঠানো যায়, তাহলে সেটা বাড়বে বলে মনে হয় না৷ দলের তৃণমূলে নানা দ্বন্দ্ব, স্বার্থ এগুলো নিয়ে বিভেদ আগেও ছিল এবং থাকবে৷ উপর থেকে বার্তা গেলে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, তবে নির্মূল হবে না৷ আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্মূল করার জন্য কুতথ্য, অর্থশক্তি ও সহিংসতার আশ্রয় নেয় কিনা সেটা দেখার আছে৷”
তার মতে, " ১৪ দলীয় জোটের প্রয়োজনীতা এখনো আছে বলে আমি মনে করি৷ মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িকতা- এই বিষয়গুলো বিবেচনায় তাদের সম্মানের জায়গায় ফিরিয়ে নেয়া উচিত৷ আর জাতীয় পার্টি বিলীয়মান শক্তিতে পরিণত হয়েছে৷”
বুধবার শপথ নেয়ার পর স্বতন্ত্রদের মধ্যে যারা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা জানান, তারা এখনো আওয়ামী লীগের৷ তাদের নৌকা প্রতীক না দেয়া হলেও নির্বাচনে দাঁড়াতে অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ তারা নিজেদের আওয়ামী লীগের এমপিই মনে করেন৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন মনে করেন, "আওয়ামী লীগের তৃণমূলে এই প্রেক্ষাপটে সংঘাত এবং বিভেদ বাড়তে পারে৷ তবে সেটা সব সময়ই ছিল৷ যারা এমপি হন, তাদের একটা গ্রুপ থাকে৷ তাদের বিরোধী আরেকটি গ্রুপ থাকে৷ তবে দল ক্ষমতায় থাকায় এটা খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না৷ স্বতন্ত্ররাও তো আওয়ামী লীগ৷ এই কারণে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রে বিভেদ ও দল ভাঙার কোনো আশঙ্কা আমি দেখছি না৷ তবে নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের ওপরও হামলা হয়েছে, যা দু:খজনক৷”
আর জোটের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘জোট তো আসলে এখন আর নেই৷ ভবিষ্যতে সব দল নির্বাচনে এলে তখন বোঝা যাবে এরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে থাকে কিনা৷ একেকটা প্রেক্ষাপটে জোট তৈরি হয়৷ ২০১৪ সালে তো জোট ছিল না৷’’
তিনি মনে করেন, "এই নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতির নতুন ধারাও সৃষ্টি হতে পারে৷ সেটা কী রকম তা সময়ই বলে দেবে৷”