নির্বাচন নিয়ে তাঁদের আশঙ্কা
২৮ ডিসেম্বর ২০১৮প্রতিবেশী দেশের নির্বাচন৷ সংবাদ মাধ্যমে সে নিয়ে যেটুকু যা খবর প্রকাশিত হচ্ছে, তার বাইরে কোনো উৎসাহই নেই পশ্চিমবঙ্গের মানুষের৷ তার একটা কারণ অবশ্য নিজের দেশেই আসন্ন লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি৷ নরেন্দ্র মোদী ফের ভারতে ক্ষমতায় আসেন কিনা, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে৷ অবশ্য শেখ হাসিনা, না বেগম খালেদা জিয়া, বাংলাদেশেকে ক্ষমতায় আসছেন, তার ওপরেও নির্ভর করছে ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের শরণার্থী সমস্যা, সীমান্তপার সন্ত্রাসবাদ থেকে চোরাচালান, অনেক কিছু৷ কারণ, সেসব কিছুই ভারতের সমকালীন রাজনীতিতে প্রভাব ফেলছে৷ আসাম বা ত্রিপুরার সর্বশেষ নির্বাচনের ফলাফলই তার প্রমাণ৷ তবু সেই বৃহত্তর প্রেক্ষিত সম্পর্কে অনেকেই উদাসীন৷ বাংলাদেশের ভোট নিয়ে তাঁদের যেন কোনো মাথাব্যথা থাকারই কারণ নেই৷
এর ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, যা কেবল ওই সাধারণ প্রবণতাকেই প্রমাণ করে৷ কিন্তু যাঁরা ব্যতিক্রম, তাঁরা কিন্তু খুব গভীরভাবে সম্পৃক্ত নির্বাচন প্রক্রিয়াটির সঙ্গে৷ যদিও তাঁরা এদেশে বসেই খবর রাখেন, কিন্তু রাখেন৷ যেমন বিশিষ্ট সাহিত্যিক অমর মিত্র৷ এখনও তাঁর লেখায় বারবার ফিরে আসে দেশভাগ, ছিন্নমূল মানুষের কথা৷ এবারের বাংলাদেশ নির্বাচন নিয়ে তাঁর স্বাভাবিক উৎসাহ রয়েছে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানালেন, ‘‘বাংলাদেশের যে কবিরা (সম্প্রতি) এসেছিলেন, তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম৷ তারা বলল যে, যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, তা হলে বিএনপি আসার সম্ভাবনা বেশি৷ কারণ, একটা সরকার দশ বছর ধরে আছে৷ দশ বছর থাকলে একটা প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা আপনা থেকে তৈরিই হয়ে যায়৷ তারপর বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী, পাকিস্তানপন্থিরা সাঙ্ঘাতিকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠছে৷ সেটাও একটা আছে৷ সেসব মিলিয়ে (বিএনপি জিততে পারে)৷ কিন্তু সেসব হবে না৷ শেখ হাসিনাই আসবেন৷''
সত্তরের দশকের বিশিষ্ট কবি মৃদুল দাশগুপ্ত সাংবাদিক হিসেবে প্রায় চার দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল৷ এর আগে তিনি কলকাতার সংবাদ মাধ্যমের হয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন কভার করেছেন৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া নিজস্ব অভিমতে বাংলাদেশের চলতি রাজনীতি এবং রাজনৈতিক মেরুকরণের দীর্ঘ পর্যালোচনা করেছেন তিনি৷ তাঁর কিন্তু সংশয় এবারের নির্বাচন কতটা শান্তিপূর্ণ হবে, সেই নিয়ে৷ মৃদুল দাশগুপ্ত যদিও বললেন, ‘‘এবারের নির্বাচন খুবই কৌতুহলোদ্দীপক এবং তাৎপর্যপূর্ণ৷ তার কারণ হচ্ছে, দশ বছর পর আওয়ামি লিগ জোট, তার সঙ্গে বিএনপি যে নতুন জোট করেছে, নিজের কুড়ি দলের জোটসহ যে নতুন জোট করেছে,
জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট যেটা, তার মুখোমুখি নির্বাচন৷ কারণ, তার আগে, ২০১৪ সালে যে নির্বাচনটা হয়েছিল, তা একেবারেই বিরোধীহীন, একপাক্ষিক নির্বাচন হয়েছিল, (যেহেতু) বিএনপি বয়কট করেছিল নির্বাচন৷ এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ভোট হতে চলেছে৷ সেই হিসেবে এই ভোট বেশ কৌতুহলের৷'' এবং মৃদুলবাবু বলছেন, ‘‘এই ভোটে আমি যে যে খবর পেয়েছি, বা আমি যা জানি, ইসলামি যে দলগুলি, ইসলামি যে শক্তি, তারাই হবে নির্ণায়ক শক্তি৷''
এর পাশাপাশি বিএনপি নেতা-কর্মীদের ব্যাপক হারে ধরপাকড়ের যে অভিযোগ উঠছে, সে সম্পর্কেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মৃদুল৷ এবং বর্তমানে জেলবন্দি বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, অনেক চেষ্টা সত্বেও যিনি এবার নির্বাচনে অংশ নিতে পারলেন না, তার প্রতি একটা সহানুভূতির হাওয়া উঠতে পারে বলে মৃদুল দাশগুপ্তর ধারণা৷