অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে কোনো কথাই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, তাই দুই দলকেই পরিষ্কার করতে হবে এই দুই ব্যক্তির অবস্থান দলেরও অবস্থান কিনা৷
নীল রঙয়ের একজন শিক্ষক বলেছেন, নির্বাচন ছাড়াই সংসদের মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়া যায়… নির্বাচন সম্পূর্ণ অনুৎপাদনশীল একটি খাত ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন ভালো কথাই বলেছেন ৷ আসুন আমরা তার কথা মেনে নিয়ে তার কাছে জানতে চাই ঠিক কোন বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা উৎপাদন খাতের মধ্যে পড়ে?
এদিকে ২০ মে সরকারের পদত্যাগ, গায়েবি মামলা ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ, সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদ ও ১০ দফা দাবিতে রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশ হয়। সমাবেশে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, ‘‘আর ২৭ দফা, ১০ দফা নাই। এক দফা- শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে এবং শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে যা যা করার দরকার, আমরা তা করবো।'' বিএনপিকেই এখন পরিষ্কার করতে হবে যে, তারা রাজশাহীর নেতার এক দফার সঙ্গে একমত কিনা৷
ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক জামাল উদ্দীন বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন আয়োজনে এক হাজার কোটি টাকা খরচ করে, প্রার্থীদের খরচও তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার কম হবে না। তার কথায় একমত হলে পুরো নির্বাচন কমিশনের ভোট পরিচালনাই প্রশ্নের মুখে পড়ে৷ কমিশনের বিধি অনুযায়ী একজন প্রার্থী জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা খরচ করতে পারেন ৷ একটি আসনে চারজন প্রাথী সর্বোচ্চ ব্যয় করলে এক কোটি টাকা আসনপ্রতি ব্যয় হওয়ার কথা৷ তার মানে ৩০০ আসনে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়৷ দ্বিগুণ বা তিন গুণ করলেও এক হাজার কোটি টাকার মধ্যে প্রার্থী ব্যয় সীমাবদ্ধ থাকার কথা৷ প্রাথীদের তিন থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয় মহোদয় পেলেন কোথায়?
অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মানববন্ধনে 'নির্বাচন ছাড়াই বর্তমান সংসদের মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়ার' কথা বলেছিলেন ৷ তাকে নিয়ে অনেক আলোচনায় জানলাম, তিনি আওয়ামী লীগপন্থি নীল দলের প্যানেল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাজমুল করিম স্টাডি সেন্টারের পরিচালক। 'মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ'-এর একাংশের সভাপতি ও মুখপাত্র। ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও পরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ৷
অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন ডেইলি স্টারকে তার মানববন্ধনে বলা কথার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এইভাবে যে, ‘‘২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আমরা আওয়ামী লীগ ৫ বছরের জন্য সংসদ গঠন করেছি, সরকার গঠন করেছি। করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে সরকার, সংসদ, বাংলাদেশের কোনো সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়-কেউই ঠিকভাবে কাজ করতে পারিনি। সংসদও যেহেতু সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি, সেইক্ষেত্রে সংসদের মেয়াদ ইচ্ছা করলে পাঁচ বছর বাড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে করোনা দুর্যোগের বিবেচনায়। আমি মনে করি, অন্তত দুই বছর তো বাড়ানোই যায়। কারণ, দুই বছর তো সমস্ত কিছুই একেবারে প্যারালাইজড ছিল।''
তিনি আরো বলেছেন, ‘‘নির্বাচন সম্পূর্ণ অনুৎপাদনশীল একটি খাত। তারপরও নির্বাচন করলে আমরা কী পাবো, আর কী পাবো না, তা নিয়ে একটা শঙ্কা আছেই।'' নির্বাচন থেকে আপনি কী পেতে চান জনাব?
এদিকে যা নিয়ে শিক্ষকদের মানববন্ধন সেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের নামে মামলা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটনের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন অর রশীদ মঙ্গলবার জানিয়েছেন, জনাব চাঁদ আত্মগোপনে আছেন, তাকে গ্রেপ্তারে কাজ করছে মহানগর পুলিশ৷
আমাদের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কবরে পাঠানোর এই বক্তব্যের সঙ্গে কি বিএনপি একমত? যদি না হয় তবে দল থেকে কী বার্তা দেওয়া হলো তাকে? আর অনুৎপাদনশীল খাত বিবেচনা করে নির্বচন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য নীল শিক্ষকের দাবির সঙ্গে আওয়ামী নেতৃত্ব কি একমত? যদি না হন, তবে গণতন্ত্রকে আইসিইউতে পাঠানোর প্রস্তাব করে সেই শিক্ষক অপরাধ করেছেন কিনা?
দুটি বিষয় নিয়েই আমাদের এত বিচলিত হওয়ার কথা ছিল না৷ কিন্তু আগের জাতীয় নির্বাচনগুলো মনে রাখলে আর ১৫ আর ২১ আগস্ট ভুলে না গেলে কথাগুলো নিছক কথার কথা ভাবার সুযোগ নেই৷