ঢাকা-লন্ডন বিমান সার্ভিস জটিলতা
১০ মার্চ ২০১৬মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া এক চিঠিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন জানান,‘৩১শে মার্চের মধ্যে দুই দেশের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী নিরাপত্তা জোরদারের কাজ শুরু না হলে বাংলাদেশ বিমানের যুক্তরাজ্যগামী সরাসরি যাত্রীবাহী ফ্লাইটও নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে৷'
একইদিনে যুক্তরাজ্যের সরকারি ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্রিটেনে সরাসরি পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার খবরটি জানানো হয়৷ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির সাম্প্রতিক মূল্যায়নে দেখা গেছে যে, নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কিছু শর্ত পূরণ করেনি বাংলাদেশ৷ তাই অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত ঢাকা থেকে সরাসরি যুক্তরাজ্যে পণ্য পরিবহন করতে দেওয়া হবে না৷'
জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসে মিশরের শার্ম আল-শেখে রাশিয়ার একটি বিমান বোমা বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হওয়ার পর, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ২০টি দেশের ৩৮টি বিমানবন্দরকে নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলে৷ ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর তার একটি৷ বলা বাহুল্য, এই ৩৮টি বিমানবন্দর থেকে লন্ডনে সরাসরি বিমান যোগাযোগ রয়েছে৷
এরপর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ব্রিটিশ এভিয়েশনের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের লিয়াজোঁ অফিসার জন লাভসে গত নভেম্বরে ও ডিসেম্বরে ঢাকায় আসেন৷ প্রথম দফায় তিনি যাত্রী নিরাপত্তা উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করেন৷ দ্বিতীয় দফায় তাঁর সুপারিশ ছিল কার্গো পরিবহন বিষয়ক নিরপত্তার জোরদার করার ওপর৷
তাঁর রিপোর্টে বলা হয়, ‘ঢাকায় যাত্রীদের সঠিকভাবে স্ক্যানিং করা হয় না এবং মালামাল ট্যাগ করার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় না৷ বিমানবন্দরে যারা স্ক্যান করেন, তারা অন্যদিকে তাকিয়ে থাকেন, বসে বসে টেলিফোনে কথা বলেন, গল্প করেন, তাদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই৷ তাছাড়া বিমানবন্দরে এক্সপ্লোসিভ ট্রেসিং মেশিনও কাজ করে না৷'
সুপারিশে কার্গো রাখার জায়গায় ‘ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার' প্রতিষ্ঠানের বেসরকারি কর্মীদের সরিয়ে নিতে, নিরাপত্তা ট্যাগ লাগানোর মেশিন ব্যবহারের এবং কার্গো ওয়ারহাউসের বাইরের সব পণ্য ভেতরে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়৷
যুক্তরাজ্য এই রিপোর্ট দেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া এককভাবে বাংলাদেশ থেকে সেখানে কার্গো সার্ভিসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷ আর এবার যুক্তরাজ্য নিজেই সরাসরি কর্গো বিমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলো৷ আগামী ৩১শে মার্চ ঢাকা বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি আবারো পর্যালোচনা করবে যুক্তরাজ্য৷
বেসামরিক বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকা-লন্ডন বিমান সার্ভিস এখনো বন্ধ হয়নি৷ শুধুমাত্র সরাসরি কার্গো বিমান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ আমারা বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করছি৷ আমাদের সদিচ্ছার কোনো ঘাটতি নেই৷ কিন্তু আমরা যখন সাধ্যের মধ্যে সব কিছু করার চেষ্টা করছি, সেই মুহূর্তে ব্রিটেন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ আমরা এখন তাদের সঙ্গে বসে আর কী করা যায়, তা দেখছি৷ তাদের বিশেষজ্ঞরা এখনো আমাদের বিমানবন্দরে কাজ করছেন৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আগামী ৩১শে মার্চের পর্যালোচনা বৈঠকে আশা করি আমরা বিষয়টি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে পারবো৷''
প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য অনুরোধ করে আসছিল৷ পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া ঢাকা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য যুক্তরাজ্যকে দায়িত্ব দেয়৷ তাই যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়াকেও প্রভাবিত করতে পারে৷