নিবন্ধিত ইসলামি দলের ৭টি নির্বাচনে, ৪টি বাইরে
২৫ নভেম্বর ২০২৩নিবন্ধিত ইসলামি দলের সংখ্যা বিবেচনা করলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার পাল্লাই এখন ভারি৷ তবে প্রভাব বা ভোটের হিসাবের বিবেচনায় প্রভাবশালী ইসলামী দলগুলো এখনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তেই আছে৷
বাংলাদেশে নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত ইসলামি দল সব মিলিয়ে ৭০টিরও বেশি৷ এর মধ্যে নিবন্ধিত আছে ১১টি ইসলামপন্থি৷ নতুন করে দুইটি দল নিবন্ধন পাওয়ার পর এখন বাংলাদেশে মোট নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৪টি৷
নিবন্ধিত ইসলামি দলগুলো হলো: বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন , ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাকের পার্টি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামিক ফ্রন্ট, খেলাফত আন্দোলন ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি৷ এর মধ্যে সুপ্রিম পার্টি সদ্য নিবন্ধন পাওয়া৷ এর বাইরে বড় ইসলামি দলের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর এখন নিবন্ধন নেই৷
যারা নির্বাচনে যাবে না
নিবন্ধিত ইসলামি দলগুলোর মধ্যে কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক চারটি দল নির্বাচনে যাবে না বলে জানা গেছে৷ সেই দলগুলো হলো: ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিস৷ আর নিবন্ধন না থাকলেও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রভাবশালী ইসলামি দল জামায়াতে ইসলামীও নির্বাচনে যাচ্ছে না৷ তারা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ সরকারবিরোধী আন্দোলনে আছে৷ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২০১৮ সালের নির্বাচনে ২৯৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিলো৷ স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও তারা ভালো ভোট পেয়ে দৃষ্টি কাড়ে৷
ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের অবস্থান স্বতন্ত্র৷ আমরা বিএনপির সঙ্গেও নাই, আওয়ামী লীগের সঙ্গেও নাই৷ আমরা মনে করি দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়৷ আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কিছুটা সম্ভব হলেও পুরোপুরি সম্ভব নয়৷ তাই আমরা জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই৷''
তিনি জাতীয় সরকারের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘‘নিবন্ধিত সব দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই নির্বাচনকালীন সরকার হবে৷ এই সরকারের প্রধান হবেন একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি৷''
গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘‘২০১৮ সালে আমরাই সবার আগে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছিলাম৷ তখন থেকেই আমরা বলেছি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না৷ আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছি, কারণ ওই নির্বাচন দলীয় সরকারের বাইরে করার সুযোগ নেই৷”
যারা নির্বাচনে যাচ্ছে
নিবন্ধন থাকা ১১টি ইসলমি দলের মধ্যে সাতটি দল নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে৷ দলগুলো হলো- বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, জাকের পার্টি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি৷ এর মধ্যে শুধু তরীকত ফেডারেশনের গত দুইটি সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল৷
গত বৃহস্পতিবার রাতে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামী ঐক্যজোটসহ ৯টি ইসলামি দলের নেতা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন৷
সাক্ষাতে অংশ নেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর শাহীনূর পাশা চৌধুরী৷ তিনি ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে হারলেও ২০০৫ সালে সুনামগঞ্জ-৩ আসনের উপনির্বাচনে একই প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷
বৈঠকে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আমিনী ছাড়াও তার দলের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহও ছিলেন৷ আরো ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জী৷ তিনি হেফাজতে ইসলামেরও নায়েবে আমির৷ তার বাবা ‘হাফেজ্জী হুজুর' নামে পরিচিত প্রয়াত মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিয়ে আলোচনায় আসেন৷
বৈঠকে অংশ নেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিসবাহুর রহমান চৌধুরী, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী ও আশেকানে আউলিয়া ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান আলম নূরী৷
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির নেতারাও এই বৈঠকে ছিলেন৷ বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব স উ ম আব্দুস সামাদ বলেন, ‘‘আমরা কোনো চাওয়া পাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করিনি৷ আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি মূলত সাংবিধানিক সংকটের আশঙ্কা থেকে৷ নির্বাচন না হলে সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক সংকট তৈরি হবে৷ সর্বোপরি আন্তর্জাতিক মহলের যে কার্যক্রম তাকে আমরা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত মনে করছি৷ তাই আমরা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷''
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিএনপির দাবির সঙ্গে একমত না৷ তাদের বার বার আমরা বলেছি আপনারা একদফা দাবি ছেড়ে সার্বিক সংকট নিরসনে আলোচনায় বসুন৷ সেখান থেকে যে সমাধান আসে সেটা আমরা দেখি৷ কিন্তু তারা সেটা মানছে না৷ বিএনপি যা করছে তাতে সংলাপ হয় না, সংঘাত হয়৷ আর আমরা মনে করি কোন দল অংশগ্রহণ করল কী না সেটা নয়, জনগণের অংশগ্রহণের ওপরই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নির্ভর করে৷'' এই দলটি এবার কমপক্ষে ২০০ আসনে প্রার্থী দেবে বলে জানান তিনি৷
বাংলাদেশে নিবন্ধিত ইসলামি দল ছাড়াও আরো ৫০টির মতো ইসলামপন্থি দল সক্রিয় রয়েছে৷ তারাও আসলে বড় ইসলামি দল বা জোটের ব্যানারে থাকছে৷ ২০১৮ সালের বিভিন্ন জোটের হিসাব বলছে জাতীয় পার্টির সঙ্গে মোট ৩২টি ইসলামি দল নানাভাবে সম্পৃক্ত আছে৷ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৯টি এবং বিএনপির সঙ্গে আছে পাঁচটি৷ তারাও ভোটের সময় সক্রিয় হয়, ভূমিকা পালন করে৷