নিত্যপণ্য চড়া, অল্প কমেছে সবজির দাম
৮ নভেম্বর ২০২৩বুধবার ঢাকার চারটি বাজার ঘুরে দেখা যায় আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, তেল, চিনি, ডিম এবং মাছ ও মাংসের দাম আগের মতোই চড়া। কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিতে পাঁচ টাকা করে বেড়েছে চালের দাম। বাজারভেদে সব্জির দামে পার্থক্য রয়েছে।
খাবারের জন্য প্রতিদিনই বেশিরভাগ মানুষকে যেসব পণ্য কিনতে হয়, সেসবের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, বিভিন্ন পর্যায়ে মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমত দাম বাড়িয়ে দেয়। বেশি দামে কেনা পণ্য চড়া দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা।
ঢাকার মহাখালী কাঁচা বাজারে বুধবার দেশি পেঁয়াজ ১৪০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আলু ৫৫ টাকা, ফুলকপি ৫০-৭০ টাকা, সিম ৮০ টাকা, লাউ ৪০-৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, করলা ৫০-৬০ টাকা, মূলা ৫০ টাকা, বেগুন ৬০-১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর আকারভেদে শাকের আঁটি ১৫ থেকে ৩০ টাকা এবং এক ডজন ডিম ১৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মহাখালীতে খাসির মাংস ১১০০ টাকা, ভেড়ার মাংস ৯৫০ টাকা এবং গরুর মাংস ৭৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারে আজমেরি মাংস স্টোরের বিক্রেতা রবিউল আলম বলেন, মাংসের দাম কমার কোনো সম্ভবনা নেই। কারণ বাজার থেকে বেশি দামে তাদের গরু-খাসি কিনতে হচ্ছে।
মহাখালী, সেগুন বাগিচা এবং হাতিরপুর বাজারের থেকে কারওয়ান বাজারে সবজির দাম কম। এই বাজারে একেকটি ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা, বাধা কপি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর নতুন আলু ১০০-১১০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, করলা ৪০-৬০ টাকা, সিম ৬০-৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মূলা ৪০-৫০ টাকা, আদা ২৪০ টাকা, দেশি রসুন ১৮০ টাকা এবং ভারতীয় রসুন ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে সব্জির দাম কম হওয়ায় বনানী থেকে এই বাজারে বাজার করতে এসেছেন প্রাইভেট গাড়ির চালক মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, বনানীতে সব্জির দাম অনেক বেশি। তাই মাঝেমধ্যেই কারওয়ান বাজারে এসে বাজার করি। শীতের সব্জি বাজারে আসায় দাম কমলেও আরেকটু কমা উচিত ছিল।
কারওয়ান বাজারে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন রাকিবুল হাসান। লাঞ্চ ব্রেকে বাজার করতে এসেছেন তিনি। রাকিবুল বলেন, সব জিনিপত্রেরই দাম বেশি, এসব দেখার আসলে কেউ নেই। সরকার যদি ঠিকমত নজরদারি করত তাহলে আমাদের এত কষ্ট হতো না। আমরা মধ্যবিত্তরা খুব অসুবিধায় আছি।
কারওয়ান বাজারের সবজির বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, শীতের সব্জি বাজারে আসায় প্রায় সব সবজির দাম কমেছে। তবে অন্য বছরের তুলনায় সব্জির দাম বেশি। কিছুদিন পর আরও শীতের সব্জি বাজারে এলে দাম আরেকটু কমবে।
কারওয়ান বাজারে এক পাল্লা (৫ কেজি) আলু ২১০ টাকা, ৫ কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারে আলু, শসার মতো অন্য সব্জিও পাল্লা হিসেবে কেনার সুযোগ রয়েছে, তাতে দামও বেশ কম পড়ে।
কারওয়ান বাজারে মায়ের দোয়া জেনারেল স্টোরের মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, ৫ লিটার সায়ানি তেল ৮০০ টাকা বিক্রি করছি, বোতলের গায়ে দাম আছে ৮৪০ টাকা। পাইকারি বাজার হওয়ায় এখানে দাম কিছুটা কম রাখার সুযোগ আছে।
হাতিরপুরের সব্জি বিক্রেতা মো. আব্দুল বশির বলেন, ''সবজির দাম কম থাকলেও বেচাকেনা নেই। মানুষের অবস্থা ভালো না, মানুষ এখন হিসাব করে চলে। আগে দিনে ১০ হাজার টাকার সব্জি বিক্রি করতাম, এখন চার হাজার টাকা বিক্রি করতে পারছি না। মানুষের কোনোরকম করে চলতেই এখন কষ্ট হচ্ছে।''
সব বাজারে কাছাকাছি দামে মাছ-মাংস বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৭৫ টাকা, পাকিস্তানি মুরগি ২৭০-২৮০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকা, এবং গরুর মাংস ৭৪০-৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সব বাজারেই মাছের দাম বেশ চড়া। আকারভেদে ৩৪০-৫০০ টাকা কেজিতে রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে। ৮০০-৯০০ গ্রাম আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকা কেজি।
হাতিরপুলে মাংস বিক্রেতা বাবুল মিয়া বলেন, ৭৫০-৮০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করছি। দেশি গরুর মাংসের দাম আর কমবে না। ৫৮০-৬০০ টাকা কেজিতে যেসব গরুর মাংস বিক্রি হয় সেগুলোর মান ভালো না। অস্ট্রেলিয়ান ক্রস গরু এবং অনেক গরু রিজেক্ট হয়ে যায় সেগুলো কম দামে বিক্রি হয়। ওইসব মাংসে চর্বির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।
"দুই মণ আকারের একটি দেশি গরু ৬০ হাজার টাকায় কিনতে হয়। ভালো গরুর মাংস বিক্রি করি বলে অনেক দুর থেকেও অনেকে এখানে এসে মাংস নিয়ে যায়। অবরোধ থাকলে মাংস খুব একটা বেশি বিক্রি হয় না।”
এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজিতে ৫ টাকা করে বেড়েছে। এখন মিনিকেট চাল ৬৫-৭০ টাকা, নাজিরশাইল ৬৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মহাখালীর মানিক স্টোরের চাল বিক্রেতা মানিক লাল বলেন, সামনে আমন ধান উঠবে, এরপরেও চালের দাম বাড়ছে। মিল মালিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিলে চালের দাম আরও বাড়বে।
দেশের ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বর্তমানে প্রতি মণ চিনি চার হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েক দিন আগেও এর দাম ছিল চার হাজার ৬৭০ টাকা।
নতুন পণ্যের দিকে তাকিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী
আলু ও ডিম ছাড়াও নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের বাজারে অস্বস্তি কাটছে না কেন, বুধবার সচিবালয়ে এ প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, সরবরাহ যদি ভালো থাকে তাহলে সমস্যা হয় না। আবার আলু যদি অতিরিক্ত থেকে যায়, তখন উল্টো প্রশ্ন শুনতে হয় কৃষকরা আলুর দাম পাচ্ছেন না আপনি কী ব্যবস্থা করেছেন? এটা দুই দিকের সমস্যা। এ নিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে।
জিনিসপত্রের দাম কবে কমবে, এই জিজ্ঞাসায় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কিছু জিনিস আমাদের দেশে উৎপাদন হয়, কিছু আমদানি করতে হয়। নতুন পেঁয়াজ যখন বাজারে উঠবে তখন পেঁয়াজের দাম কমবে। আগামী মাসে মুড়িকাটা পেঁয়াজটা উঠবে তখন দাম হয়ত কমবে। আলু ডিসেম্বরের শেষের দিকে উঠতে শুরু করবে তখন দাম কমবে। তেল ও চিনির দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কি আছে তার ওপর নির্ভর করে। প্রেক্ষাপট অনুযায়ী দাম বাড়বে বা কমবে।
প্রয়োজনের থেকে দেশে ২০ শতাংশ কম পেঁয়াজ আছে জানিয়ে টিপু মনশি বলেন, ভারত থেকে এই পেঁয়াজ আমদানি করি, ভারতেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির দর নির্ধারণ করে দিয়েছে, আমাদের টাকায় ৯৫ টাকার কমে তারা পেঁয়াজ রপ্তানি করতে পারবে না। আলু আমদানি করতে শুরু করেছি তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আমদানির ডিমের প্রথম চালান এসেছে, তার প্রভাব আমরা বাজারে দেখছি৷