নিজের হাতে নিজের স্কি তৈরি
২৫ জানুয়ারি ২০১৮রেডি, স্টেডি – স্কি! জায়গাটার নাম সুগস্পিৎসে, জার্মানির সবচেয়ে উঁচু পাহাড়৷ অস্ট্রিয়ার সীমান্তের কাছে ২,০০০ থেকে ২,৭২০ মিটার উচ্চতায় এই পাহাড়ের ঢালগুলো বছরে ছ'মাস বরফে ঢাকা থাকে৷ স্কি খেলার এই ঢালগুলোকে সব ভাষাতেই বলে ‘পিস্টে'৷ স্কি খেলোয়াড় আর স্নোবোর্ডারদের জন্য এখানে মোট ২০ কিলোমিটার ‘পিস্টে' আছে৷ কিন্তু এখানে আরো একটা সুযোগ আছে: সেটা হলো নিজের স্কি বোর্ড বা স্নোবোর্ড নিজেই তৈরি করে নেওয়ার বিরল সুযোগ৷ বাভেরিয়ার গার্মিশ-পাটেনকির্শেনের কাছে ফার্শান্ট-এ এই ধরনের একটি স্কি বোর্ড তৈরির দু'দিনের ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়া যায়৷
সোফিয়া গেফেকে এই ওয়ার্কশপে অংশ নিচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘দোকানে সবসময় ঠিক যা চাই, তা পাওয়া যায় না৷ আমি আবার একটু ছোট৷ ছোটদের স্কি পায়ে দিতে পারি না, কেননা আমার পাগুলো বড়৷ ওয়ার্কশপে পায়ের আর শরীরের মাপ অনুযায়ী বোর্ড তৈরি করা হয়, যা আমার জন্য খুব ভালো৷''
নিজের তৈরি স্কি শুরু হয় একটা বুনিয়াদ থেকে, যার আকার অনুযায়ী ধাতুর পাত গড়ে নিতে হয়৷ তার উপর কাঠের পাতটা বসানো হয় ও কাঠের স্ক্রু দিয়ে বেঁধে রাখা হয়, যাতে স্কি বোর্ড তার টান-টান ভাবটা পায়৷ স্কি বোর্ডের মাঝের কাঠের অংশটার জন্য প্রধানত অ্যাশ গাছের কাঠ ব্যবহার করেন ওয়ার্কশপের দুই পরিচালক মিশায়েল আইডেনশিঙ্ক ও আক্সেল ফোরেলে৷ অ্যাশ কাঠের আঁশ খুব লম্বা, কাজেই অ্যাশ কাঠ সহজে ভাঙে না৷
স্কি তৈরির খুঁটিনাটি
‘বিল্ডটুরাইড' ওয়ার্কশপের এক পরিচালক আক্সেল ফোরেলে বোঝালেন, ‘‘কাঠ খুব সুন্দরভাবে ব্যাঁকানো যায়৷ কাঠের আদত আকারে ফিরে আসার ক্ষমতা অসাধারণ, যে কারণে স্কি বোর্ডেও এই রেস্টোরিং ফোর্স খুব সুন্দর টান-টান ভাব আনে ও আমরা স্কিটাকে খদ্দেরের পছন্দমতো যে কোনো দিকে ব্যাঁকাতে পারি৷''
প্রতি দুই স্তরের মাঝখানে একটি গ্লাস ফাইবারের জাল পেতে তা তরল রজন দিয়ে এঁটে দেওয়া হয় – এ কাজটাও করেন ওয়ার্কশপের অংশগ্রহণকারীরা৷ স্কি বোর্ডের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, সেটা কতোটা পুরু বা কতটা টান-টান, এ সবই এখানে খদ্দেরের মাপ, প্রয়োজন ও মর্জি অনুযায়ী তৈরি করা হয়৷ সবশেষে আসে অলংকরণ, যা পুরোপুরি খদ্দেরের মর্জি: বিয়ারের গ্লাসের ছবি কিংবা বন্ধুবান্ধবদের ছবি৷ এরপর স্কি আর স্নোবোর্ডগুলোকে বায়ুশূন্য অবস্থায় ওভেনে ঢোকানো হয়; সেখানে তারা ৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় শক্ত হবে৷
ওয়ার্কশপের অপর পরিচালক মিশায়েল আইডেনশিঙ্ক বললেন, ‘‘দোকানে কেনা স্কিয়ের তুলনায় আমাদের একটা সুবিধা এই যে, যে মানুষই আসুন না কেন, আমরা তাঁর ব্যক্তিগত প্রয়োজন-অপ্রয়োজনের খেয়াল রাখতে পারি৷ দেহের মাপ, ওজন, তিনি কতটা ভালো বা কাঁচা স্কি খেলোয়াড়, তিনি কোথায় স্কি করতে চান – এ সব জানবার পর আমরা স্ত্রু বসিয়ে বসিয়ে তাঁর স্কিটিকে ঠিক সেই আকার ও আকৃতি দিতে পারি৷''
বাকি থাকে...
স্কি বা স্নোবোর্ড শক্ত হতে মোট ১৪ ঘণ্টা সময় লাগে৷ করাত দিয়ে ফর্ম থেকে বোর্ডটাকে কেটে বার করার দায়িত্ব স্কিয়ের মালিকের নিজের৷ এর পরে ঘষে পালিশ করার পালা৷ বাকি থাকে স্কি বোর্ডের ওপর স্কি খেলার জুতো পরা পা রাখার জায়গাটা স্ক্রু দিয়ে বোর্ডের সঙ্গে এঁটে দেওয়া৷ সে কি আর শক্ত!
সোফিয়া গেফেকের অভিজ্ঞতা হল, ‘‘বোর্ডের আগার দিকটা ব্যাঁকাতে প্রাণ বেরিয়ে গিয়েছে, তারপর আবার এই মিলিং! ওভেন থেকে বেরনোর পর আমাদের বোর্ডটা পালিশ করার কথা, কিন্তু আমি আমার জীবনে এই প্রথম একটা যান্ত্রিক করাত হাতে নিলাম৷ সে তুলনায় আশা করি কাজটা খুব খারাপ করিনি৷''
পায়ের নীচে ‘টেইলর মেড' স্কি বা স্নোবোর্ড লাগিয়ে শীতের মরশুমে পিস্টে দিয়ে সাঁ সাঁ করে নামার যে কি আনন্দ, তা স্কিমোদী মাত্রেই জানেন – আপনারাও একবার পরখ করে দেখতে পারেন৷
ডানিয়েলা স্পেট/এসি