নিজের দেশেই বিপাকে মুহাম্মদ ইউনূস
২৩ জানুয়ারি ২০১১গরিব উদ্যোক্তাদের ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের অনন্য কাজের জন্য ইউনূস আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত৷ কিন্তু বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে মানহানির মামলায় আদালতে হাজির হতে হয়েছে তাঁকে, একইসঙ্গে তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধেও শুরু হয়েছে সরকারি তদন্ত৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং ভাষ্যকার এম. এম. আকাশ ইউনূসের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ইউনূসের সমস্যার শুরুটা ২০০৭ সালে, যখন দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছিল৷
তিনি বলেন, ইউনূস রাজনৈতিক দল গড়ার কথা প্রচারের আগ পর্যন্ত হাসিনার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক দৃশ্যত ভালো ছিল৷ দল গড়ার কথা প্রচার করা ছিল তাঁর গুরুতর রাজনৈতিক ভুল, যার খেসারত এখন দিতে হচ্ছে৷
বলাবাহুল্য ২০০৭ সালে ‘নাগরিক শক্তি' নামক একটি রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করেন ইউনূস৷ সপ্ততিপরবৃদ্ধ এই গরিবের ব্যাংকার বাংলাদেশের সংঘাতময় রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন৷
সেসময় ইউনূস বলেন, আমার রাজনীতির লক্ষ্য হবে রাজনীতিতে সততা প্রতিষ্ঠা এবং জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ঐক্য ও শান্তির রাজনীতি৷ কার্যত দুই শীর্ষ রাজনৈতিক দলের বিকল্প হিসেবে একটি দল গড়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি৷
কিন্তু মাত্র কয়েক মাস স্থায়ী হয় ইউনূসের এই রাজনৈতিক পরিকল্পনা৷ ২০০৭ সালের মে মাসেই তিনি রাজনীতির পরিকল্পনা থেকে সরে আসেন৷ এর পরের বছরের ডিসেম্বরে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সালাউদ্দিন আমিনুজ্জামান এএফপিকে বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল তাঁর উপর সন্তুষ্ট নয়৷ তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার চেষ্টা করার অর্থ হলো, তাঁকে এই কথাই বুঝিয়ে দেয়া যে, তিনি অপরিহার্য নন৷
তিনি বলেন, তারা তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাইছেঃ রাজনীতির কথা চিন্তাও করো না৷ বেশিরভাগ বাংলাদেশি মনে করে ইউনূসের এই শোচনীয় অবস্থার পেছনে হাসিনার পুরনো জেদই কাজ করছে৷
গত বছরের নভেম্বরে নরওয়ের একটি প্রামাণ্য চিত্রে অভিযোগ করা হয় যে, ১৯৯৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া নরওয়ের দাতাদের অর্থের অপব্যবহার করেছেন ইউনূস৷ বিষয়টি প্রকাশের পর অসলো তদন্ত করে, এবং ইউনূস নির্দোষ প্রমাণিত হন৷ কিন্তু বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে পৃথক তদন্তের ঘোষণা দেয়৷
এছাড়া, ২০০৭ সালে ইউনূসের একটি সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে দায়ের করা এক রাজনৈতিক নেতার মানহানি মামলাও পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে৷ পরিণতিতে গত মঙ্গলবার আদালতে হাজির হন ইউনূস৷
সরকার অবশ্য বলে আসছে, গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্ত ইউনূসকে লক্ষ্য করে নয় এবং কোন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থেও এটি করা হচ্ছে না৷ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মশিউর রহমান এএফপিকে এই প্রসঙ্গে বলেন, এই তদন্তের পেছনে কোন রাজনীতি নেই৷ ইউনূস একটি দল গড়তে চেয়েছিলেন, কিন্তু কখনো সেটা করেননি৷ আমরা শুধু গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমে কোন ত্রুটি আছে কিনা তা তদন্ত করবো৷ ইউনূস নিজে আমাদের তদন্তের প্রাথমিক লক্ষ্য নন৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই