1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নিউমার্কেটে সংঘর্ষ : সঠিক তদন্ত চান ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থীরা

সমীর কুমার দে ঢাকা
২২ এপ্রিল ২০২২

নিউমার্কেটে ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগে ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ৷ ২৪ জনই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ এছাড়া অজ্ঞাত আসামী এক হাজার ৪০০ জন৷

https://p.dw.com/p/4AIna
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের দাবি, কোনো রাজনৈতিক তদন্ত নয়, সঠিক তদন্ত করে অপরাধীদের বের করতে হবে৷

নিউমার্কেট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শ ম কাইয়ুম ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেছেন, ‘‘গোয়েন্দা তথ্য এবং তদন্তের মাধ্যমে এই ২৪ জনের নাম উঠে এসেছে৷ এখনও তদন্ত চলছে৷ পুরোপুরি তদন্ত হলে নিশ্চিত করে বলা যাবে এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত৷’’ আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে ওসি আরো দাবি করেন, তারা সঠিকভাবেই তদন্ত করছেন৷ ওসির দাবি, মামলায় যাদের আসামী করা হয়েছে, তাদের মধ্যে যাদের কারণে এই ঘটনা, তাদের নামও আছে৷

এই সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে৷ এ দুই মামলায় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ মোট ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে৷ এছাড়াও সংঘর্ষে নিহত নাহিদের বাবা মো. নাদিম হোসেন বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন৷ মামলায় তিনি অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করেন৷ এই তিন মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনকে৷ তবে তিনটি মামলার মধ্যে শুধু পুলিশের করা একটি মামলাতে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে৷ মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তারা হলেন, অ্যাডভোকেট মকবুল, আমির হোসেন আলমগীর, মিজান, টিপু, হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু, হারুন হাওলাদার, শাহ আলম শন্টু, শহিদুল ইসলাম শহিদ, জাপানি ফারুক, মিজান বেপারী, আসিফ, রহমত, সুমন, জসিম, বিল্লাল, হারুন, তোহা, মনির, বাচ্চু, জুলহাস, মিঠু, মিন্টু ও বাবুল৷

আমরা কোনো রাজনৈতিক তদন্ত দেখতে চাই না: হেলাল উদ্দিন

তবে এজাহারে নাম থাকা ওই আসামিদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক নম্বর আসামি অ্যাডভোকেট মকবুলের পুরো নাম অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন সর্দার৷ তিনি নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি৷ বর্তমানে তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য৷ যে দুটি দোকানের কর্মচারীদের নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত, ক্যাপিটেল ফাস্ট ফুড ও ওয়েলকাম ফাস্ট ফুড নামের দোকান দুটির মালিক তিনি৷ যদিও তার দুই চাচাতো ভাই দোকানগুলো চালান৷ দুই নম্বর আসামি আমীর হোসেন আলমগীর নিউমার্কেট থানা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক, মিজান ওই থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, টিপু ছাত্রদলের নেতা, জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী নিউমার্কেট বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে মহানগর বিএনপির সদস্য, হারুন হাওলাদার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, জাহাঙ্গীর মিঠু সহসাংগঠনিক সম্পাদক, শন্টু ওরফে নান্টু সহ-সভাপতি, শহীদ ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও নিউমার্কেট বিএনপির সহ-সভাপতি, জাপানি ফারুক প্রচার সম্পাদক, মিজান ব্যাপারী যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য সচিব এবং নিউমার্কেট ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক৷

সরাসরি আসামি করা ব্যক্তিদের মধ্যে রহমত ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক, সুমন ওয়ার্ড কমিটির সদস্য, জসিম থানা কমিটির সদস্য, বিল্লাল ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক, হারুন যুবদলের ওয়ার্ড নেতা, তোহা নিউমার্কেট থানা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক, মনির স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি, বাচ্চু ও জুলহাস ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য, মিঠু, মিন্টু ও বাবুল ওয়ার্ড যুবদলের পদধারী নেতা৷ এজাহারে থাকা আসামিদের মধ্যে টিপু দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে রয়েছেন৷ এছাড়া জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী ওই এলাকায় এখন আর ব্যবসা করেন না৷

আমরা কোনোভাবে পুলিশের দায়সারা তদন্ত মেনে নেব না: ইসমাইল সম্রাট

মামলায় প্রধান আসামি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন সর্দার সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি নিউমার্কেট এলাকায় সাত মাস ধরে যান না৷ ঘটনার সময় তো সেখানে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না৷ নিজে দু'টি দোকানের মালিক হলেও তা পরিচালনা করেন তার দুই চাচাতো ভাই৷ রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্যই পুলিশ তাকে মামলায় জড়িয়েছে বলে দাবি তার৷

ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থীদের সমঝোতার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনো রাজনৈতিক তদন্ত দেখতে চাই না৷ আমরা চাই সঠিক তদন্ত হোক, অপরাধী যে-ই হোক সে আইনের আওতায় আসুক৷ বাংলাদেশে কিন্তু এসব কারণে বিচারের প্রতি মানুষের আস্থা উঠে যাচ্ছে৷ নিউমার্কেটের এই ঘটনায় এমনভাবে তদন্ত হোক মানুষ যেন বলতে পারে, পুলিশ একটি সঠিক তদন্ত করেছে৷ যা দৃষ্টান্ত হবে৷’’

ছাত্রদের পক্ষে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া প্রধান সমন্বয়ক ইসমাইল সম্রাট ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মামলার এজাহার যদি এই হয়, তাহলে বলতেই হবে, পুলিশ অন্য ১০টি মামলার মতো এটাও রাজনৈতিক দিকে নিয়ে গেছে৷ আমরা কোনোভাবে পুলিশের দায়সারা তদন্ত মেনে নেবো না৷ আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি, যদি সঠিক তদন্ত না হয় এবং অপরাধীরা গ্রেপ্তার না হয়, তাহলে আমরা আবারও আন্দোলনে যাবো৷ আমরা চাই কারা এই ঘটনার জন্য দায়ী তা খুঁজে বের করা হোক৷ কারা সাংবাদিকদের পেটালো, কারা অ্যাম্বুলেন্স ভাংচুর করলো পুলিশ তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনুক৷ সে যদি ব্যবসায়ী হয় বা শিক্ষার্থী হয় তাহলে তাদের ধরতে হবে৷ তারা আমাদের কাছে অপরাধী৷’’