লুট করা ছবি
১০ নভেম্বর ২০১৩মঙ্গলবার খবরটা বেরলেও, কর দপ্তরের নাকি গতবছর থেকেই ব্যাপারটা জানা ছিল৷ কর ফাঁকি দেওয়ার ব্যাপারে ঐ ফ্ল্যাটে হানা দেওয়ার সময় তারা আবিষ্কার করেন যে, সেখানে কানালেত্তো, কুর্বে, পিকাসো, তুলুজ-লত্রেক, অঁরি মাতিস, অটো ডিক্সের মতো শিল্পীদের ছবির ছড়াছড়ি৷ কিন্তু যেহেতু কর ফাঁকি দেওয়ার মামলা, সেহেতু কর বিভাগকে পুরো ঘটনাটা এ যাবৎ গোপন রাখতে হয়েছে৷
শুধু তাই নয়, জার্মান কর্তৃপক্ষ এখনও উদ্ধারকৃত শিল্পকর্মগুলির পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করতে রাজি নন৷ এই ছবিগুলি যদি সত্যিই নাৎসি আমলের জবরদখল বা চোরাই সম্পত্তি হয়, তাহলে সেগুলি তাদের আসল মালিক কিংবা উত্তরাধিকারীদের ফেরত দিতে বহু নৈতিক ও আইনগত বাধা পার হতে হবে৷ সেটা কর্তৃপক্ষেরও খুব ভালো করেই জানা৷ তাই তারা চটজলদি কিছু করতে চাইছেন না৷
একশো কোটি ইউরোর শিল্পকর্ম
যার ফ্ল্যাটে এই গুপ্তধন রাখা ছিল, তাঁর নাম কর্নেলিয়াস গুরলিট৷ বয়স ৭০ থেকে ৮০-র মধ্যে৷ বাবা হিল্ডেব্রান্ড গুরলিট ছিলেন আর্ট ডিলার৷ ১৯২০ সাল থেকেই তিনি শিল্পকর্ম সংগ্রহ করতে শুরু করেন, বিশেষ করে বিংশ শতাব্দীর সূচনার মডার্ন আর্ট, যা নাৎসিরা পরে অ-জার্মান এবং ‘‘অধঃপতিত'' বলে ঘোষণা করে ও সব সংগ্রহশালা থেকে সরিয়ে ফেলে৷
নাৎসিদের প্রোপাগান্ডা মন্ত্রী ইওসেফ গোয়েবেল্স বিদেশে সেই সব ‘‘অধঃপতিত'' শিল্পকর্ম বেচে নাৎসি রাষ্ট্রের জন্য অর্থ সংগ্রহ করার কাজে গুরলিটকে নিযুক্ত করেন৷ গুরলিট নিজের জন্যও কিছু ছবি কেনেন, এছাড়া যে সব ইহুদি আর্ট ডিলাররা তাদের সংগ্রহ বেচতে বাধ্য হচ্ছিলেন, তাদের কাছ থেকেও ছবি কেনেন৷ অপর এক সূত্রে প্রকাশ যে, গুরলিট প্যারিসে নাৎসিদের চোরাই শিল্পকর্মের মূল ভাঁড়ারে গিয়ে সেখান থেকেও ছবি কিনেছিলেন৷
গুপ্তধন
যুদ্ধের পর গুরলিট পশ্চিম জার্মানিতে পালান এবং দাবি করেন যে, ড্রেসডেনের উপর মিত্রশক্তিদের বোমা হামলায় তাঁর সব ছবি ও কাগজপত্র বিনষ্ট হয়েছে৷ অথচ সেই ছবির সংগ্রহ তিনি যক্ষের মতো সামলে রেখেছিলেন৷ পরে তাঁর ছেলে কর্নেলিয়াস মাঝেমধ্যে কিছু ছবি বেচে নিজের কাজ চালাতেন৷ এভাবেই কর্নেলিয়াস গুরলিট জুরিখ থেকে মিউনিখ যাওয়ার পথে বহু নগদ টাকা নিয়ে যাবার সময় পুলিশের নজরে পড়েন৷ তার পরেই কর্মকর্তারা গুরলিটের ফ্ল্যাটের উপর হানা দেন এবং এই হারিয়ে যাওয়া ছবির রত্নভাণ্ডার আবিষ্কার করেন৷
ছবিগুলো আপাতত কোনো অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয়েছে৷ সেগুলো নাকি কিছুটা ময়লা হয়ে গেলেও, বেশ ভালো অবস্থাতেই ছিল৷ ছবিগুলোর মধ্যে অটো ডিক্স এবং মার্ক শাগালের দু'টি এ যাবৎ অপরিচিত ছবিও আছে৷ বাঁধানো ও না বাঁধানো ছবি ছাড়া বেশ কিছু পেন্সিল ড্রয়িং ও প্যাস্টেল ছবি পাওয়া গিয়েছে৷ এর মধ্যে বহু ছবির মালিক নাৎসি নিপীড়নে নিহত কিংবা পলাতক ইহুদি বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে৷ কাজেই এই সব ছবি ন্যায্য মালিকদের ফেরৎ দেবার আগে বহু গবেষণার প্রয়োজন পড়বে৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)