ক্ষমতায়নের আগে সমতায়ন!
৭ মার্চ ২০১৬৭ এবং ৮ই মার্চ – বাংলাদেশের অন্যতম বক্তৃতামুখর দু'টি দিন৷ রমনার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক এক ভাষণ দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ৷ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর থেকে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে ওই ভাষণ শোনা এবং শোনানোটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ প্রতিবছর ১৫ই আগস্ট, ১৬ই ডিসেম্বর, ৭ই মার্চ এবং ২৬ শে মার্চে নিয়ম করেই আমরা রাজপথে, শহর-গ্রামের অলিগলিতে কালজয়ী ঐ ভাষণ শুনি৷ দিন ফুরোলেই ভুলে যাই সব৷
৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসেও অনেক কথা শুনি৷ শুনি দেশের নারী অনেক এগিয়েছে৷ নারীর ক্ষমতায়নের পথে অগ্রগতির মাপকাঠি হয়ে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পিকারসহ সমাজের অনেক গণমান্য নারী৷ সব বক্তৃতায়, নানা ধরণের লেখায় উঠে আসে তাঁদের প্রশংসা৷
শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিমান বাহিনীর বৈমানিক নাইমা হক এবং তামান্না-ই লুতফী, ট্রেনচালক সালমা খাতুনেরা নিশ্চয়ই নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে নারী উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন৷ তবে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায়, সমাজে নারীর অবস্থান সুদৃঢ়করণে ক্ষমতায়নের এমন দৃষ্টান্ত বাড়ানোর পাশাপাশি পুরুষ আর নারীর সমতায়নের বাড়তি উদ্যোগও খুব দরকার৷
‘সমতায়ন' দরকার পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে৷ তা হচ্ছে কই? কর্মক্ষেত্রে নারীর মজুরি অনেক খাতেই পুরুষের চেয়ে কম৷ আর নারী ও শিশুর সামাজিক নিরাপত্তা তো মাঝে মাঝে ক্রমহ্রাসমানই মনে হয়৷
সমাজে নারীর নিরাপত্তা কমছে এমনটি ভাবার কারণও আছে৷ শুধু সংবাদমাধ্যমে নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ, হত্যার সংবাদের আধিক্য নয়৷ বরং বড় বড় নারী নিপীড়নের ঘটনার দ্রুত বিচার না হওয়াই নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় বাড়ার অন্যতম কারণ৷ ভুরি ভুরি উদাহরণ দিয়ে তা বোঝানো যাবে৷ সব বাদ দিয়ে শুধু পহেলা বৈশাখে টিএসসিতে প্রকাশ্যে ঘটে যাওয়া যৌন হয়রানির বর্বরোচিত ঘটনাটির কথাই বলি৷ কী পেয়েছি আমরা গত এক বছরে? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, পুলিশ এবং কয়েকজন মন্ত্রীর আজেবাজে কথার পরে কাজের কাজ কতটুকু হয়েছে? নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিলের ঘটনাটি আবার তদন্ত করে আগামী ২৩ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে, এইটুকুই তো?
কিছু ঘটনায় আমরা অতি দ্রুত মামলা হতে দেখি৷ তদন্তের আগে গ্রেপ্তার, রিমান্ডও দেখি৷ নারীর বেলায় অপরাধীর প্রতি নিষ্ঠুর হবার দরকার নেই৷ শুধু সহানুভূতিশীল না হলেই হলো৷ ঘটনাবিশেষে তো মনে হয় বিশেষ মহলের সহানুভূতি বা সুদৃষ্টির কারণেই অপরাধীরা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ায় সমাজে৷
নারী দিবসে নারীর ক্ষমতায়নের কিছু দৃষ্টান্ত বক্তৃতায়, লেখায় তুলে ধরলেই নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে না৷ ক্ষমতায়নের পাশাপাশি সমতায়নের বিষয়টিকেও ভাবনায়, কাজে সমান গুরুত্ব দেয়া চাই৷ কিন্তু আমরা তা দিচ্ছি কই?
পরিবারে এখনো পুত্র সন্তানের আদরকদর বেশি৷ রাস্তায় এখনো মেয়েদের নিরাপত্তা কম৷ কর্মস্থলে এখনো নারী আর পুরুষের ব্যবধান অনেক৷ শুধু মন্ত্রীপরিষদে নারী নেতৃত্বের উজ্জ্বল উদাহরণ দেখালে হবে? ইউনিয়ন পরিষদের কী হাল? ব্যানারে-পোস্টারে শুধু দু-একজন শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া থাকলে হবে? সারাদেশে চাই অসংখ্য ‘পোস্টারগার্ল'৷ সর্বস্তরে চাই নারীর সমতায়ন৷
আপনি কি আশীষ চক্রবর্ত্তীর সঙ্গে একমত? নারীর ‘সমতায়ন’ নিয়ে আপনার মতামত জানান নীচের ঘরে৷