নারীর ক্ষমতায়নে এখনো অনেক বাধা
২৭ অক্টোবর ২০১৬বিশ্বের ১৪৪টি দেশের শিক্ষাগত সাফল্য, স্বাস্থ্য, অর্থনেতিক সুযোগ এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন- এ চারটি ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অগ্রগতির ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে লৈঙ্গিক ব্যবধান কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে চলতি বছর বাংলাদেশের ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে৷ তবে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে এখনও বড় ব্যবধান রয়েছে৷
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স-২০১৬ অনুযায়ী, গত বছরে বাংলাদেশ তালিকার ৬৪ তম অবস্থানে থাকলেও এবার সেখান থেকে ৭ ধাপ পিছিয়ে বৈশ্বিক অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৭২ এ। তারপরও দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ অবস্থানটি ধরে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৬ সালে ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯১তম৷ ১০ বছরে বাংলাদেশ ১৯ ধাপ ওপরে উঠে এসেছে৷ দেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে৷ এই ক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে নারীদের ব্যবধান কমে এসেছে৷ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম৷ ২০০৬ সালে ছিল ১৭তম৷
নারীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও গত ১০ বছরে ২০ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ এখন আছে ৯৩তম অবস্থানে। তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে বৈষম্য বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে ২০০৬ সালে ১০৭তম থাকলেও বর্তমানে ১৩৫তম। শিক্ষার সমতার ক্ষেত্রে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ ৯৫তম অবস্থানে ছিল। ২০১৬ সালে ১১৪তম অবস্থানে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে সার্বিক সূচকে ভারত ৮৭, শ্রীলঙ্কা ১০০, নেপাল ১১০, মালদ্বীপ ১১৫ , ভুটান ১২১ এবং পাকিস্তান ১৪৩তম স্থানে রয়েছে৷দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সূচকে সবচেয়ে নিচের অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান৷ শিক্ষাগত সাফল্যের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের কোনো দেশই নারী-পুরুষের ব্যবধান পুরোপুরি ঘুচাতে পারেনি৷ তবে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কেবল শ্রীলঙ্কা এ ব্যবধান পুরোপুরি ঘুচাতে সক্ষম হয়েছে৷
প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে অগ্রগতি হয়েছে৷ তবে অর্থনৈতিক এবং পারিশ্রমিকে বৈষম্য এখনো উল্লেখযোগ্য হারে রয়েছে৷ এতে বলা হয়, যে হারে অগ্রগতি হচ্ছে, এর ফলে বর্তমানে জন্ম নেওয়া একটি মেয়েশিশুর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, রাজনীতি ও অর্থনৈতিক সুযোগের ক্ষেত্রে বৈষম্যহীন অবস্থান দেখতে ৮৩ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷
এ নিয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মী এবং হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘ আমরা নারীর ক্ষতায়ন রাজনীতিতে দেখতে পাচ্ছি৷ কিছু উঁচু পদে তাঁদের অবস্থান আছে৷ কিন্তু এটা কোনো সার্বিক চিত্র নয়৷ জেন্ডার ইকুয়ালিটি বলতে সব ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অংশগ্রহণ, সুবিধা আর অধিকারকে বুঝায়৷ নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রধানত দরকার অর্থনৈতিক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা৷ এই দু'টি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের নারীরা পিছিয়ে আছে৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে নারীদের ইবিাচক অগ্রগতি আছে৷ কিন্ত সেই অগ্রগতি এখনো নারীকে পুরোপুরি স্বাধীন করতে পারেনি৷ নারী এখনো এখানে ঘরের মধ্যে বন্দি৷ বিচার, সহিংসতা, নির্যাতন প্রশ্নে নারী এখনো অবহেলার শিকার৷''
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রগতি বা উন্নয়ন সরল পথে হয় না৷ বাংলাদেশের নারীরা এখনও মজুরি বৈষম্যের শিকার৷ চাকরির ক্ষেত্রে সমতা নাই৷ নাই অর্থনৈতিক সমতা৷ তবে আমরা আশা করি এসব ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের নারীরা এগিয়ে যাবে৷''
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রকাশিত গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স-২০১৬ এর প্রতিবেদনে নারী-পুরুষ সমতা সূচকে সবার শীর্ষে রয়েছে আইসল্যান্ড আর সূচকে সবার শেষে রয়েছে ইয়েমেন৷