নারী জার্মান মহাকাশচারীর গবেষণায় বাংলাদেশ
৫ জানুয়ারি ২০২২চূড়ান্ত বাছাইয়ে টিকে গেলে তিনিই হবেন মহাকাশে পা রাখা ইউরোপের দেশটির প্রথম নারী মহাকাশচারী৷
চলছে কঠোর প্রশিক্ষণ, লক্ষ্য আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র বা আইএসএস৷ জার্মানির দুই নারীকে প্রস্তুত করা হচ্ছে মহাকাশে পাঠানোর জন্য৷ তাদের একজন ড. ইনসা টিলে-আইশ৷ গত কয়েক বছর ধরে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক নানা ধরনের প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন তারা৷
ইনসার সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেয়া অন্য নারী ড. সুসানা রানডাল৷ তিনি একজন জ্যোতির্পদার্থবিদ৷
‘‘আইএসএস-এ আমাদের দুই সপ্তাহের সায়েন্টিফিক মিশনে মানবদেহ, বিশেষ করে নারীদেহের উপর ওজনশূণ্যতার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা হবে৷ এটা মঙ্গলযাত্রার মতো দীর্ঘ মিশনের প্রস্তুতির জন্য জরুরি৷ মহাকাশে নারীদেহ কেমন আচরণ করবে তা নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য এখনো আমরা পাইনি,'' বলেন ইনসা৷
ইনসা ইতোমধ্যে প্যারাবোলিক ফ্লাইট সম্পন্ন করেছেন৷ পাইলট হিসেবে লাইন্সেসও করা হয়ে গেছে তার৷ পাশাপাশি গুহার মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে থেকেছেন, পানির নীচেও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন৷
মহাকাশে যাওয়ার জন্য এসব প্রশিক্ষণ, যাত্রা এবং সেখানে অবস্থান – সবই বেশ ব্যয়বহুল ব্যাপার৷ তাই মহাকাশে মানুষ পাঠানোর আদৌ কোনো দরকার আছে কিনা তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক৷
তার ভাষায়, ‘‘অবশ্যই বলতে পারেন যে মহাকাশে মানুষ পাঠানো অনেক ব্যয়বহুল৷ বরং এই টাকা পৃথিবীর অন্য সমস্যা সমাধানে ব্যয় করা উচিত৷ আসলে এই প্রশ্নের সহজ উত্তর নেই৷ কথা হচ্ছে, মহাকাশ গবেষণার টাকা অন্য কাজে খরচ হবে না৷ পৃথিবীর সব মানুষকে ক্ষুধামুক্ত রাখার এবং বিশুদ্ধ পানি দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা এবং সম্পদ আমাদের এমনিতেই রয়েছে৷ কিন্তু রাজনৈতিক বা অন্য কোনো কারণে আমরা সেটা পারছি না৷''
ইনসা টিলে-আইশ বাংলাদেশের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে পিএইডি করেছেন৷ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের পানি বাড়তে থাকায় দেশটির অনেক এলাকা পানির নীচে তলিয়ে যাচ্ছে৷ পাশাপাশি নদীর পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদী ভাঙ্গন, ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস বেড়ে যাওয়ায় অনেক মানুষ বিপদে পড়েছেন, যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে তাদের হাত নেই৷
ইনসা বলেন, ‘‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের এখনকার অনেক সমস্যা আরো বাড়িয়ে দেবে৷ যেমন অনেক মানুষ এখনই বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না৷ জলবায়ু পরিবর্তন এই সমস্যা আরো বাড়াবে, বিশেষ করে সে সব অঞ্চলে, যেখানে নদীর উপর বিভিন্ন দেশের হিস্যা রয়েছে৷''
বিশ্বব্যাংকের হিসাব জানাচ্ছে, বাংলাদেশে প্রতিদিন দুই হাজারের মতো মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যাচ্ছেন৷ তাদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ জলবায়ু উদ্বাস্তু৷ তবে, এখনো অনেকে চেষ্টা করছেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে৷ ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ ব্যক্তি পর্যায়েও নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে৷
ইনসা মনে করেন, আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত বাংলাদেশকে সহায়তা করা৷ ‘‘বাংলাদেশের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কী করছেন তা নিয়েও আমরা গবেষণা করেছি৷ আমরা দেখেছি অনেক মানুষের সামাজিক পুঁজি রয়েছে৷ অর্থাৎ তাদের সামাজিক বন্ধন মজবুত এবং তারা একে অপরের সহায়তায় এগিয়ে আসেন৷ এটা অত্যন্ত ইতিবাচক ব্যাপার৷ আর্থিক মূলধন আরেকটি বিষয়৷ এক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তা নেয়া উচিত,'' বলেন তিনি৷
ইনসা বা সুসানার মধ্য থেকে যে কোনো একজন মহাকাশযাত্রার জন্য চূড়ান্তভাবে বিবেচিত হবেন৷ সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর মহাকাশে পাড়ি জমাবেন প্রথম কোনো জার্মান নারী৷ তবে ইনসা জানিয়েছেন, এই যাত্রা প্রায়ই নানা কারণে পেছানো হয়৷ তাই একেবারে সঠিক সময় বলা কঠিন৷