নবায়নযোগ্য জ্বালানি
৭ ডিসেম্বর ২০১২দু'বছর আগে কানকুনে'র জলবায়ু সম্মেলনে স্থির করা হয়েছিল, বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখা হবে৷ কিন্তু বর্তমানে যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে ছাড়া হচ্ছে, তাতে শতাব্দীর শেষ হতে হতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ছয় ডিগ্রিও ছাড়াতে পারে৷
বিশেষজ্ঞদের মতে এই পরিস্থিতিতে খনিজ জ্বালানি ব্যবহার না করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করাই হলো কার্বন নির্গমন হ্রাসের এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধের একমাত্র পন্থা, কেন না কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনের মূল উৎস হলো কয়লা, খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস৷
বিশ্ব জলবায়ু পরিষদ আইপিসিসি সারা বিশ্বের ১২০ জন বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের সম্ভাবনা বিচার করে দেখতে বলেছিল৷ বিজ্ঞানীরা হাজার পৃষ্ঠার যে রিপোর্ট দেন, তার মূল বক্তব্য ছিল: ‘২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জ্বালানি সরবরাহের প্রায় ৮০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসা সম্ভব, যদি সঠিক রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়৷'
গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনাল পরিবেশ সংরক্ষণ সংগঠনের সোয়েন টেস্কে স্বয়ং আইপিসিসি'র ঐ রিপোর্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন৷ বিগত পাঁচ বছর ধরে তিনি গ্রিনপিসের হয়ে জার্মান বায়ু ও মহাকাশ যাত্রা সংস্থা ডিএলআর'এর বিজ্ঞানীদের দিয়ে বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের সম্ভাবনা যাচাই করাচ্ছেন৷ পরে এই সমীক্ষাগুলি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হচ্ছে৷ বিশ্বের দশটি এলাকার ৪০টি দেশ এই সমীক্ষাগুলি ব্যবহার করে থাকে:
‘‘আমরা যে জ্বালানি শক্তি সংক্রান্ত ভবিষ্যতের ছক তৈরি করি, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অনেক ছোট ছোট সংগঠন সেগুলি ব্যবহার করে৷ অনেক দেশের জন্য আমরাই সর্বপ্রথম এ ধরণের কোনো ছক তৈরি করেছি৷ যেমন তুরস্কের তার ভবিষ্যত জ্বালানির প্রয়োজন সম্পর্কে কোনো নকশাই ছিল না৷ এখন তারা আমাদের তৈরি ছকটা ব্যবহার করছে৷ নিউজিল্যান্ড'ও আমাদের তৈরি ছকটাই ব্যবহার করছে৷ অন্যান্য বড় বড় দেশ তাদের নিজেদের পরিকল্পনা যাচাই করার জন্য আমাদের ছক ব্যবহার করে৷''
২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৯০০ কোটির উপর৷ গ্রিনপিসের হয়ে বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞরা যে সিনারিও বা দৃশ্যপটটি এঁকেছেন, তাতে শুধু নবায়নযোগ্য জ্বালানিই নয়, সেই সঙ্গে জ্বালানি সাশ্রয়ের একটা বিশেষ ভূমিকা থাকবে৷ জ্বালানির ব্যবহারে ৬০ শতাংশ সাশ্রয়ের সম্ভাবনা দেখে গ্রিনপিস:
‘‘আমরা জ্বালানি-সাশ্রয়ী বাড়ি, জেনারেটর এবং বিদ্যুৎ কি গ্যাস পরিবহণের আরো সাশ্রয়ী পন্থা বার করে জ্বালানির চাহিদা সীমিত করার চেষ্টা করি৷ যেমন আমরা শিল্পোন্নত দেশগুলিতে জ্বালানির ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করছি৷ আমাদের হিসেব অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জ্বালানির চাহিদা বেড়ে দ্বিগুণ, তিনগুণ কিংবা চারগুণ হবে৷ একই সময়ে এই দেশগুলো সাশ্রয়ের পন্থা অবলম্বন করে তাদের প্রাইমারি এনার্জি বা কাঁচা জ্বালানির চাহিদা কমিয়ে অর্ধেক করতে পারবে৷''
তবে বিভিন্ন ধরণের নবায়নযোগ্য জ্বালানির একটা সংমিশ্রণ চাই৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথমেই থাকবে সৌরশক্তি – ২৮ শতাংশ৷ তারপরে আসবে জিওথার্মি, বা ভূপৃষ্ঠে সঞ্চিত তাপের ব্যবহার – এটা হবে প্রায় ২৪ শতাংশ৷ সেই সঙ্গে বায়োমাস বা যে কোনো ধরণের জৈব পদার্থ থেকে অর্জিত জ্বালানি শক্তি, যা হবে ১৫ শতাংশ; বায়ু থেকে ১০ শতাংশ এবং পানি থেকে ৪ শতাংশ৷
মজার কথা এই যে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বস্তুত কয়লা, তেল কিংবা গ্যাসের চেয়ে অনেক কম খরচার হবে৷ এবং সেটাই সম্ভবত বিভিন্ন দেশের দৃষ্টিকোণ থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের সপক্ষে সবচেয়ে বড় যুক্তি৷ তবে অন্যান্য প্রশ্ন থেকে যায়৷ আন্তর্জাতিক জ্বালানি শক্তি সংস্থা ইরেনা'র ডল্ফ গিলেন বলেন:
‘‘আমাদের সদস্যদেশরা জানতে চায়, জ্বালানি ক্ষেত্রে নীতি পরিবর্তনের অর্থনৈতিক প্রভাবটা কি হতে পারে৷ যেমন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে, কিংবা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দৃষ্টিকোণ থেকে৷ দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ক্ষেত্রেই বা তার কি প্রভাব পড়বে৷''