নতুন মডেলের অনলাইন ব্যাংক
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪জার্মানির ব্যাংকিং জগত এখনো পর্যন্ত এই প্রবণতা উপেক্ষা করেছে৷ নতুন প্রযুক্তি, নতুন গ্রাহক এবং সেই সঙ্গে নতুন প্রতিযোগিতা৷ ফিডর ব্যাংকের পরিচালকমণ্ডলীর সদস্য মাটিয়াস ক্র্যোনার বলেন, ‘‘আমরা ব্যাংকিং জগতের বোম্বেটে হতে চাই৷ স্বাগতম৷ আপনারাই ব্যাংকিং জগতের বোম্বেটে৷ নতুন ধরনের এই ব্যাংকিং-এর প্রয়োজন রয়েছে, যেমনটা ওয়েব টু পয়েন্ট জিরো-র বিকাশ দেখিয়ে দিচ্ছে৷ এমন এক ‘হাইস্ট্রিট ব্যাংকার' তার মান্ধাতার আমলের ব্যাংক নিয়ে এগিয়ে চলেছে৷ এই পরিস্থিতি তার নিজেরই তৈরি৷''
বড় বড় কথা৷ শুনলে মনে হয় যেন যুদ্ধ শুরু হতে চলেছে৷ ২০০৯ সালে ব্যাংকিং সংকটের মাঝে মাটিয়াস ক্র্যোনার ইন্টারনেট-ভিত্তিক এক পালটা মডেল তৈরি করেন, যার নাম ফিডর ব্যাংক৷ ক্র্যোনার বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যাংকগুলির সমস্যা হচ্ছে৷ গোটা বিশ্বে প্রযুক্তির ব্যাপক অগ্রগতি ঘটে চলেছে, ‘ডিজিটাল নেটিভ'-দের সংখ্যা বাড়ছে৷ তাই বিশ্বব্যাপী নতুন ব্যাংকিং চাই৷''
কনসেপ্ট খুব সহজ৷ বিশাল আকারের ব্যাংক ও মোটা বেতনের কর্মীর প্রয়োজন নেই৷ বাড়ির পিছনের অংশে ব্যাংকার ও ডেভেলপাররা বসে মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করেন৷ ব্যাংকের গ্রাহক নিজের বাড়িতে বসে অন্যান্য গ্রাহকদের সঙ্গে মত বিনিময় করতে পারেন এবং কোনো জটিলতা ছাড়াই নিজের টাকাপয়সার লেনদেন করতে পারেন৷ ক্র্যোনার বলেন, ‘‘আমাদের এখানে আপনি নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে ই-মেল ঠিকানা বা মোবাইল নম্বরে টাকা পাঠাতে পারেন, সঞ্চয়ের বিভিন্ন পথ সম্পর্কে খবর নিতে পারেন ইত্যাদি৷ মোটকথা বিভিন্ন আর্থিক বিষয় সম্পর্কে সহায়তা পাবেন৷ এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত জরুরি৷''
এই ইন্টারনেট-ভিত্তিক ব্যাংকের সাফল্য এখনো সীমিত৷ মাত্র ৬০,০০০ অ্যাকাউন্ট নিয়ে মাটিয়াস ক্র্যোনার এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছেন৷ ভবিষ্যতে গুগল-এর মতো কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু হলে চাপ বাড়বে৷ ক্র্যোনার বলেন, ‘‘ফেসবুক-এর কাছে ব্যাংকিং লাইসেন্স রয়েছে৷ প্রায় ৪০ কোটি ব্যাংকিং প্রোফাইল নিয়ে অ্যাপল এরই মধ্যে সবচেয়ে বড় আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে৷ আমি কখনোই বিশ্বাস করি না যে কোনো রেগুলেশন ব্যাংক হিসেবে আমাকে সুরক্ষা দিতে পারে এবং ইন্টারনেট কোম্পানিকে ব্যাংকিং ক্ষেত্রের বাইরে রাখতে পারে৷ তারাও চটজলদি লাইসেন্স পেয়ে যেতে পারে৷ এখানে প্রশ্ন হলো, গ্রাহকদের সঙ্গে কার যোগাযোগ সবচেয়ে ভালো?''
তবে অনেক সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রের ব্যাংক এবং গ্রাহকের মনে এ বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে – অন্তত জার্মানিতে তো বটেই৷ প্রায় অর্ধেক গ্রাহক ব্যাংকের শাখায় গিয়ে আগের মতোই কাজ সারতে চান৷
জার্মানির দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক ‘কম্যারৎসবাংক' নাকি ইন্টারনেট ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিযোগিতাকে ভয় পায় না৷ আঞ্চলিক শাখার প্রধান উভে ডবরিচ বলেন, ‘‘বাজারের এই সব প্রবণতাদের দিকে আমরা অবশ্যই লক্ষ্য রাখি৷ সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নিতে চাই৷ তবে একদিকে অনলাইন পরিষেবায় আমরা যেমন বিনিয়োগ করছি, অন্যদিকে শাখাগুলিকেও শক্তিশালী করে তুলছি৷ আমাদের ব্যাংকের এই বৈশিষ্ট্য অন্যান্য পরিষেবাদাতারা এভাবে দিতে পারে না বলে আমি মনে করি৷''
ভবিষ্যতের ‘কনসেপ্ট' হলো – শাখার সংখ্যা কমিয়ে তাদের আধুনিক করে তোলা৷ শাখার মধ্যে ভিডিও ক্যাশিয়ার ও নতুন অনলাইন-ব্যাংকিং-এর পাশাপাশি কিছু ডিজিটাল চমকও রয়েছে৷
স্টার্টআপ হিসেবে ফিডর ব্যাংক সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে৷ মস্কো থেকে ডেভেলপার ও বিনিয়োগকারীরা এসেছেন৷ মাটিয়াস ক্র্যোনার রাশিয়ায় একটি সহযোগী কোম্পানি গড়ে তুলছেন৷ বিনিয়োগকারী আলেক্সান্ডার ইভানভ বলেন, ‘‘জার্মানির আর্থিক ক্ষেত্র বড়ই রক্ষণশীল৷ কেনিয়ার মতো আফ্রিকার কিছু দেশেও ব্যাংকিং ক্ষেত্র জার্মানির তুলনায় কয়েক প্রজন্ম এগিয়ে গেছে৷ তবে আমার মতে, নতুন কিছু চমক সৃষ্টি করতে পারলেও টাকা বা ব্যাংকিং-এর প্রশ্নে গ্রাহকেরা অবশ্যই কিছুটা আস্থা চান৷''
ব্যাংকাররা আশাবাদী বয়ে উঠছেন৷ এমনকি ডিজিটালাইজেশন সম্পর্কে সন্দিহান বলে পরিচিত জার্মানরাও ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে উঠছে৷