জার্মানিতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা
২০ নভেম্বর ২০১৭জার্মানিতে এমন রাজনৈতিক সংকট অত্যন্ত বিরল ঘটনা৷ নির্বাচনের পর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সাধারণত একাধিক দলের জোট সরকার গঠিত হয়৷ যে সব বিষয়ে মতৈক্য সম্ভব হয় না, সেগুলি সাধারণ কর্মসূচির বাইরেই থেকে যায়৷ কিন্তু গত ২৪শে সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের অস্পষ্ট ফলাফলের কারণে যে চারটি দল মিলে জোট সরকার গঠনের জন্য প্রায় চার সপ্তাহ ধরে আলোচনা চালিয়েছে, তাদের মধ্যে একাধিক বিষয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থান দেখা গেছে৷ তবে আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর ইউনিয়ন শিবিরের দুই দল এবং সবুজ দল জানিয়েছে, রবিবার গভীর রাতে সব পক্ষ ঐকমত্য অর্জনের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল৷ কিন্তু উদারপন্থি এফডিপি দল এককভাবে আলোচনা ছেড়ে বেরিয়ে আসে৷ ফলে ‘জামাইকা' জোট সরকার গঠনের প্রক্রিয়া বানচাল হয়ে গেল৷
এই অবস্থায় নানা সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে৷ এসপিডি দল যদি গোঁ ছেড়ে আবার মহাজোট গঠনে সম্মত হয়, সে ক্ষেত্রে স্থিতিশীল সরকার গঠন করা সম্ভব হবে - এমন একটা ক্ষীণ আশা দেখা দিয়েছিল৷ কিন্তু এসপিডি সভাপতি মার্টিন শুলৎস আবার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, যে তাঁর দল জনগণের রায় মেনে কোনো মহাজোট সরকারে যোগ দেবে না৷ যারা সরকার গড়ার দায়িত্ব পেয়েছিল, তাদের ব্যর্থতার উল্লেখ করেন তিনি৷ নতুন করে নির্বাচন হলে এসপিডি আবার মাঠে নামতে প্রস্তুত, বলেন শুলৎস৷
নতুন নির্বাচনের বিকল্প হিসেবে সংখ্যালঘু সরকার গঠনের সম্ভাবনাও রয়েছে৷ সে ক্ষেত্রে ম্যার্কেল-এর ইউনিয়ন শিবির হয় এফডিপি কিংবা সবুজ দলের সঙ্গে জোট সরকার গঠন করতে পারে৷ তবে এমন সরকার চালু রাখতে বিরোধী পক্ষের কিছু সমর্থনের প্রয়োজন হবে৷ সংবিধান অনুযায়ী নতুন করে নির্বাচন ডাকতে হলে জার্মান প্রেসিডেন্টকে আগে চ্যান্সেলরের নাম প্রস্তাব করতে হবে৷ তিনি যদি ম্যার্কেল হন, তাঁকে সংসদে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে৷ অথবা প্রেসিডেন্ট সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচনের ঘোষণা করতে পারেন৷ সে ক্ষেত্রে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷
তবে নতুন নির্বাচন এড়াতে চান জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ তিনি সেই লক্ষ্যে সব দলের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়েছেন৷ তাঁর মতে, নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোটারদের কাছে নিজেদের রাজনৈতিক দায়িত্বজ্ঞান তুলে ধরার পর সেই দায়িত্ব পালন করতে হয়৷ তাই জামাইকা জোট ব্যর্থ হলেও তিনি সরকার গঠনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে চান৷
এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার সকালে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে৷ তবে সব চেয়ে বেশি চাপের মুখে পড়েছেন এফডিপি দলের শীর্ষ নেতা ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার৷ আলোচনা ভেঙে দেবার ফলে তাঁকে নিজের আচরণের ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে৷
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জার্মানিতে বিভিন্ন দলের মধ্যে বর্তমানে যে নেতৃত্বের সংকট চলছে, সেই পরিস্থিতিতে তারা আবার ভোটারদের মুখোমুখি হবার জন্য প্রস্তুত নয়৷ বাভেরিয়ার সিএসইউ দলের শীর্ষে রদবদলের সম্ভাবনা যথেষ্ট রয়েছে৷ ম্যার্কেল স্বয়ং নিজের সিডিইউ দলের মধ্যে আগের মতো সমর্থন পাচ্ছেন না, যদিও তাঁর দল সোমবারই আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর প্রতি আস্থা দেখিয়েছে৷ তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে৷ সোমবার সন্ধ্যায় ম্যার্কেল নতুন নির্বাচনের ক্ষেত্রে আবার চ্যান্সেলর হিসেবে নিজেকে তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন৷ সবুজ, বাম ও উদারপন্থি শিবিরেও নেতৃত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে৷
নতুন নির্বাচন ঘোষণা করলেই কি ভোটাররা মাত্র দুই মাসের মধ্যে তাঁদের মত বদলে অন্যভাবে ভোট দেবেন? তাঁদের মধ্যে কি আদৌ ভোট দেবার আগ্রহ থাকবে? নির্বাচনে মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলির সমর্থকরা হতাশ হয়ে ভোট নাও দিতে পারেন এবং এএফডি-র মতো উগ্রপন্থি দলের সমর্থকরা নিজেদের শক্তি বাড়াতে প্রবল উৎসাহে মাঠে নামতে পারেন৷
এসবি/ডিজি (ডিপিএ, রয়টার্স)