নজরদারি সম্পর্কে আমরা কতটা সচেতন?
২৪ এপ্রিল ২০১৭নজরদারি আজ সর্বত্র৷ রাষ্ট্র তথা গোয়েন্দা সংস্থার কার্যকলাপ থেকে শুরু করে মোবাইল, ইন্টারনেটসহ অনেক পরিষেবার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে নজরদারির বীজ৷ এক প্রদর্শনীতে নজরদারির বিবর্তনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে৷
বাড়িঘর থেকে শুরু করে প্রকাশ্য স্থান – নানা স্তরে নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে৷ মোবাইল ফোন আমাদের অবস্থান জানিয়ে দেয়, গুগল ব্যবহার করলেই আমাদের ডিজিটাল পরিচয়ের ‘প্রোফাইল'-এ তা যোগ হয়৷ সাধারণ মানুষ থেকে রাজনীতিক, সবাই নিজেদের সম্পর্কে তথ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে৷
বার্লিনে এক ছবি প্রদর্শনীর বিষয় – কে, কার উপর, কেন নজরদারি চালাচ্ছে? সত্তরের দশকে দেখা যেত, একজন লোক অসংখ্য মনিটারের সামনে বসে আছে৷ কিন্তু একসঙ্গে এত ছবির উপর নজর রাখা কি সম্ভব? কোনো অপরাধ চোখে পড়লেও ততক্ষণে যা হবার তা হয়ে যায়৷ নজরদারি ক্যামেরার চোখে ব্যাংক ডাকাতির কিছু দৃশ্যও শোভা পাচ্ছে৷ এর মধ্যে প্রযুক্তির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে৷
ইউরোপীয় সীমা সুরক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রন্টেক্স' ভূমধ্যসাগর এলাকায় আকাশপথে টহল দেয়৷ শক্তিশালী এইচডি ক্যামেরার সাহায্যে শরণার্থীদের নৌকা শনাক্ত করে সেগুলিকে দৃশ্যমান করে তোলার ব্যবস্থা আছে এসব বিমানে৷ এই প্রযুক্তি অবশ্য সীমা সুরক্ষা কর্মীদের সঙ্গে পলাতক মানুষদের মধ্যে একটা দূরত্ব সৃষ্টি করে৷ ইয়ুলিয়ান ব়্যোডার তাঁর ছবিতে এই বিষয়টিকেই তুলে ধরতে চেয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘কোনো সীমান্তরক্ষী যখন সরাসরি কোনো ব্যক্তির মুখোমুখি হন, সেই বিষয়টি সে সময়ে আমার সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছিল৷ কারণ, তাদের মধ্যে দূরত্ব ভীষণভাবে বাড়িয়ে রাখা হয়েছে৷ এত বেশি প্রযুক্তি ও ব্যবধান রয়েছে, যা ক্যামেরার মাধ্যমে ঘোচানোর চেষ্টা হয়৷''
নজরদারি চিরকালই চলে আসছে৷ আদি যুগে শুধু ঈশ্বরের কথাই বলা হতো৷ কোনো প্রযুক্তি ছাড়াই তিনি নাকি সবকিছু দেখে চলেছেন৷ প্রকৃতির কোলেও মানুষকে সতর্ক থাকতে হয়৷ ষোড়শ শতাব্দীর ডাচ ভাষার এক প্রবাদ বলে, ‘মাঠের চোখ আছে, জঙ্গলের কান আছে'৷ একদল নজরদারির শিকার হবার ভয়ে থাকেন, অন্যরা আবার ভয় পেয়ে নিজেরাই নজরদারি চালান৷
এক কাউন্ট কাল্পনিক নজরদারি যন্ত্র তৈরি করিয়েছিলেন৷ অথচ তার সঙ্গে আজকের সিস্টেমের অবিশ্বাস্য মিল রয়েছে৷ নজরদারির ক্ষেত্রে এই বিশালাকার রাডার স্টেশন আরও এক পদক্ষেপ৷ ফটোগ্রাফি মিউজিয়ামের কিউরেটর ইয়ুকিকো ইয়ামাগাটা বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সরকারি সংস্খাগুলির নজরদারির ক্ষমতা বেড়ে চলায় বিষয়টি ক্রমশ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে৷ সন্ত্রাসবাদ ও চরম হিংসার কারণে সাধারণ মানুষের মনে যে ভয় ও আতঙ্ক জন্মাচ্ছে, তার ফলে এমন নজরদারি সবাই মেনেও নিচ্ছে৷''
সে কারণে নিউ ইয়র্ক শহরে মুসলিমদের উপর বছরের পর বছর ধরে নজরদারি চালানো হয়েছিল৷ সংবাদ সংস্থা এপি ২০১১ সালে পুলিশের এক গোপন বিশেষ ইউনিটের নথিপত্র প্রকাশ করে৷ বাজার করা, নামাজ পড়া, খেলাধুলার মতো সাধারণ কার্যকলাপও সেই ব্যবস্থার নজর এড়ায়নি৷ এর ফলে ভয় ও সন্দেহের একটা কঠিন পরিবেশ তৈরি হয়েছিল৷
কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানি ছিল এক নজরদারি-কেন্দ্রিক রাষ্ট্র৷ ‘স্টাসি' বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের সংগ্রহশালা এমন দৈনন্দিন কার্যকলাপের নথিপত্রে ভরা৷ সেই জমানায় চিঠিপত্র পেলে যে কেউ সন্দেহের পাত্র হয়ে উঠতো৷
আন্দ্রেয়া কাসিকে/এসবি