নকল করা কি সবসময় অন্যায়?
১১ জুন ২০১১শিল্পীর মন মুক্ত৷ তিনি ঈশ্বরের মতোই তুলির আঁচড়ে সৃষ্টি করে চলেন৷ নকল করা সৃজনশীলতার সেই আদর্শের বিরোধী৷ প্রতীচ্যের সংস্কৃতিতে এককালে এমন নৈতিকতা তৈরি হলেও প্রাচ্যে বলা হতো, যে শিল্পী হতে চায় তাকে সবার আগে তার নিজের আদর্শ শিল্পীর স্তরে পৌঁছতে হবে৷ অর্থাৎ নকল করলে গুরুর সম্মান বাড়ে৷
আজ বাজার নকলে ছেয়ে গেছে৷ ঘড়ি থেকে শুরু করে গাড়ি – বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় ১০ শতাংশের নেপথ্যেই রয়েছে নকল পণ্য৷ আর এই নকল করার সংস্কৃতির মূল হোতা হিসেবে চীনকে কাঠগড়ায় তোলা হয়৷ চীনের ডিজাইন মেলার কর্ণধার আরিক চেন কিন্তু বার্লিনে সমালোচকদের বোঝাবার চেষ্টা করলেন, যে বিষয়টা আসলে অন্যভাবে দেখতে হবে৷ কোনো পণ্যের যতবার নকল হবে, আসলের কদর ততই বাড়বে৷ চীনই কিন্তু পশ্চিমের নামিদামী ব্র্যান্ডের সবচেয়ে বড় বাজার, যদিও সেদেশে তার অসংখ্য নকল পাওয়া যায়৷ আসল ও নকলের দামে বিশাল ফারাক থাকা সত্ত্বেও এত মানুষ চীনে আসল পণ্য কেনে, যে আখেরে কোম্পানির লাভই হয়৷
কপিরাইট বা স্বত্বের ধারণা কিন্তু সবে অষ্টাদশ শতাব্দীতে চালু হয়েছিল৷ তার আগে পশ্চিমা বিশ্বের শিল্পী ও সংগীতজ্ঞরা দিব্যি একে অপরের নকল করেছেন৷ ফলে অনেকে প্রশ্ন করে, নকল করার মধ্যেও তো অনেক সময় উদ্ভাবনী শক্তি কাজ করে, তাই না? চাকা আবিষ্কারের পরেই যদি তা যদি কপিরাইট দিয়ে বেঁধে দেওয়া হতো, তাহলে কি চাকার এত উন্নতি ঘটতো? বাকিরা এই যুক্তি মানতে নারাজ৷ তাদের মতে, অনেক কষ্ট ও পরিশ্রম করে নিজের সৃষ্টিশীল ধারণাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার পর কেউ যদি সহজেই তা নকল করে ফেলে, তা ঘোরতর অন্যায়৷ একদল বলছেন, বিশ্বায়ন ও ইন্টারনেটের এই যুগে সবকিছুই পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত৷ তাই একটি মানুষ কোনো কিছু উদ্ভাবন করে তা কপিরাইটের বন্ধনে বেঁধে দেবে, এটা আজকের যুগে অচল৷ মানুষ সমষ্টিবদ্ধভাবে উদ্ভাবন করবে, তার সুফল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে – এমনটাই হওয়া উচিত৷ ফলে প্রচলিত ধারণা পরিবর্তনের সময় এসে গেছে৷ সংগীতের জগতে ‘রিমিক্স' আজ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যে তা নতুন ধারার সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছে৷ আরেকদল বলছেন, চীন এখনো প্রায় সবকিছু নকল করে চলেছে বটে, কিন্তু একটা সময় আসবে, যখন নকল করা পণ্য থেকে প্রেরণা পেয়ে সেখানেও সৃজনশীলতার নতুন এক ঢেউ উঠবে৷ বার্লিনের ডিজাইন মেলায় কপিরাইট প্রসঙ্গে শোনা গেল এমন আরও অভিনব অভিমত৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক