দোলনায় ডিগবাজি খাওয়ার অভিনব খেলা
২৭ নভেম্বর ২০১৪আরেকবার টেনে ধরে ছেড়ে দিতে হয়৷ একে বলে কিকিং – এস্টোনিয়ার এক এক্সট্রিম স্পোর্ট৷ ব্যাপারটা দোলনার মতো, কিন্তু অনেক উপরে গিয়ে ডিগবাজি খেতে হয়৷ দড়ির বদলে রয়েছে লোহার রড, যা আট মিটার পর্যন্ত লম্বা করা যেতে পারে৷ মিরিয়াম পেডায়া বলেন, ‘‘নেমে এসেই কিছু একটা করার তাড়না আসে৷ মনে হয় শক্তি অনেক বেড়ে গেছে৷ অ্যাড্রেনালিনের এই ধাক্কা বড়ই ভালো৷ মাদক ছাড়াই যেন একটা ‘কিক' পাওয়া যায়৷ সত্যি নেশার মতো৷''
এস্টোনিয়ার রাজধানী টালিন থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে ছোট্ট শহর ইয়েরভাকান্ডি৷ সেখানে চলছে কিকিং প্রতিযোগিতা৷ পুরুষ, নারী, শিশু দুটি ভিন্ন উচ্চতার দোলনায় দোলার চেষ্টা করছে৷ সেগুলি দড়ি দিয়ে ভালো করে মাটির সঙ্গে বাঁধা৷ ১৯৯৬ সালে অদ্ভুত এই খেলা চালু হয়েছিল৷ এস্টোনিয়ারই আডো কস্ক-কে এই খেলার আবিষ্কারক বলা হয়৷ আবিষ্কারক আডো কস্ক বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই দোলনায় দুলেছি৷ যেখানে বড় হয়েছি, সেখানে এমন লোহার মজবুত দোলনা ছিল, ডিগবাজিও খাওয়া যেত৷ এই ঘুরে যাওয়ার ব্যাপারটা আমাকে বেশ অবাক করতো৷ তখন আমার মনে আইডিয়াটা আসে৷ সাধারণ দোলনাই ছিল তার আদর্শ৷''
আসলে এস্টোনিয়ায় দোলনার একটা দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে৷ সেই ঊনবিংশ শতাব্দীর ছবিতেই তা দেখা যায়৷ আগে প্রত্যেকটি গ্রামে একটা করে বড় কাঠের দোলনা থাকতো৷ সেখানেই লোকজনের দেখাসাক্ষাৎ হতো৷ আজও অনেক জায়গায় এমন ‘গণ দোলনা' দেখা যায়৷
আলারি ভাটরে টালিন শহরে থাকেন৷ ২৪ বছর বয়স্ক এই তরুণ বছর চারেক আগে প্রথম কিকিং করে দেখেছিলেন৷ টালিন-এ দোলনার ছড়াছড়ি – শিশুদের প্লেয়িং গ্রাউন্ডে শুরু থেকেই এস্টোনিয়ার এই জনপ্রিয় খেলার ভিত্তি তৈরি হয়৷ কিকিং-অনুরাগী আলারি ভাটরে বলেন, ‘‘এখান থেকেই শুরু হয়৷ শিশুরা হাত-পা ব্যবহারের মৌলিক কায়দা শেখে৷ এটা খুব মজার৷ মজার সঙ্গেই স্পোর্ট আসে৷''
ইয়েরভাকান্ডি-তে ফেরা যাক৷ কিকিং-এর সময় হাত ও পা ভালো করে বেঁধে রাখা জরুরি৷ সেন্ট্রিফুগাল ফোর্সের কারণে কিছু ধরে রাখা বেশ কঠিন৷ দেখলে মাঝেমধ্যে বিপজ্জনক মনে হলেও আয়োজক আন্টস টামে-র জন্য এটা অত্যন্ত নিরাপদ এক খেলা৷ প্রাক্তন কিকিং বিশ্বরেকর্ডধারী আন্টস টামে বলেন, ‘‘শিশু থেকে শুরু করে বাস্কেটবল খেলোয়াড় – সকলেই এটা করতে পারে৷ বয়সটা জরুরি নয়৷ দেখলে সহজ মনে হলেও যা ভাবছেন, তার থেকে অনেক কঠিন৷ তবে প্রথম চেষ্টার জন্য যথেষ্ট নিরাপদ – সবাই এটা পরখ করে দেখতে পারে৷''
দোলনায় চড়ার আগে শরীর গরম করা খুব জরুরি৷ বিশেষ করে পিঠ ও পায়ের থাই খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ নারীদের জন্য লোহার রড ৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা রাখা হয়৷ এর অর্থ, প্রায় ১০ মিটার উচ্চতায় মাথা নীচে রেখে পাক খেতে হয়৷ মিরিয়াম বলেন, ‘‘উচ্চতায় আমার ভয় করে, যদিও কেউ তা বিশ্বাস করে না৷ কিন্তু দোলনায় উঠলে তা ভুলে যেতে হয়৷''
সাত জন খেলোয়াড় এ দিন ৬ মিটারেরও বেশি লম্বা টেলিস্কোপ রড দিয়ে পাক দিতে পেরেছেন৷ এর জন্য চাই শক্তি, সমন্বয়ের ক্ষমতা ও সঠিক টাইমিং৷ প্রতিযোগিতার শেষে এতদিনকার বিশ্বরেকর্ডধারী আন্টস টামে নিজের সেরা পারফরমেন্স দেখিয়েও হেরে গেলেন৷
ভিলইয়ান্ডি শহরের পেশাদারি রোয়িং খেলোয়াড় কাস্পার টাউমসো ৭ দশমিক শূন্য আট মিটার ব্যাসার্ধে ৩৬০ ডিগ্রি পাক খেতে পেরেছেন৷ ২০১২ সালের সেরা পারফরমেন্সের তুলনায় এটা প্রায় ৫ সেন্টিমিটার বেশি৷ অতএব এটাই নতুন কিকিং বিশ্বরেকর্ড৷