‘দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা'
১৮ ডিসেম্বর ২০২০ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিন জানুয়ারিতে পাওয়া যেতে পারে৷ প্রথমে ৫০ লাখ টিকা আসবে যা দুই ডোজ করে ২৫ লাখ মানুষকে দেয়া যাবে৷
ডয়চে ভেলে: এ পর্যন্ত কত ভ্যাকসিন আনার চুক্তি হয়েছে?
ডা. মো. হাবিবুর রহমান: ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ভ্যাকসিন আনার চুক্তি হয়েছে৷ বেক্সিমকোর মাধ্যমে এই চুক্তি হয়েছে৷ এটা দেড় কোটি মানুষকে দেয়া যাবে৷ তাছাড়া গ্যাভির যে কনসোর্টিয়াম কোভ্যাক্স তাদের সাথেও আমরা কথা বলেছি৷ সেখান থেকে আমাদের মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ২০ ভাগের জন্য ভ্যাকসিন পাব৷ তাতে প্রায় তিন কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে৷ তার সংখ্যা হবে ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ৷ এর বাইরেও আমরা বিভিন্ন দেশের সাথে কথা বলছি৷ আমরা দেশের মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ৮০ ভাগকে ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা করছি৷ বাকি ২০ ভাগের হার্ড ইমিউনিটি হয়৷ তাই দেশের সব মানুষকেই ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা আমাদের আছে৷ পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে৷
প্রথম পর্যায়ে কত ভ্যাকসিন আসছে?
সেরাম ইনিস্টিটিউট থেকে যে ভ্যাকসিন আমরা পাব তারা প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ দেবে৷ জানুয়ারি মাসে সেখান থেকে ভ্যাকসিন পাব বলে আশা করছি৷
ভ্যাকসিন আনতে মোট খরচ কত হবে?
মোট খরচের একটা হিসাব আছে৷ তবে সেটা এখন বলা যাচ্ছে না৷ তবে সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রতিডোজ ভ্যাকসিনের জন্য দাম পড়ছে ৪ ডলার৷ এরসঙ্গে পরিবহন খরচ প্রতি ডোজ ১ ডলার৷ সব মিলিয়ে ৫ ডলার৷ আর কোভেক্স থেকে যে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে তা স্বল্পমূল্যে বা কিছু বিনামূল্যে পাওয়া যাবে৷ যেটা স্বল্পমূল্যে পাওয়া যাবে তার প্রতি ডোজের দাম পড়বে ১.৬০ থেকে ২ ডলার৷
আর কোন কোন দেশ থেকে ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে?
আমরা যোগাযোগ রাখছি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে৷ তবে সব দেশের ভ্যাকসিন আমরা আনছি না৷ যেমন মর্ডানা, ফাইজার তাদের ভ্যাকসিন মাইনাস ২০ থেকে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়৷ সেই ব্যবস্থা আমাদের এখানে নেই৷ সেজন্য আমরা যেসব দেশের ভ্যাকসিন মাইনাস ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপামাত্রায় সংরক্ষণ করা যায় তা আনার চেষ্টা করছি৷ কারণ আমাদের এখানে যে ইপিআই সিস্টেম আছে তাতে আমরা এই ধরনের ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করতে পারব৷
সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থাপনা কেমন হবে?
এই ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী৷ এটা করা হচ্ছে ইপিআই'র (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) মাধ্যমে৷ সারাদেরশেই ইপিআই'র টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে৷ কোল্ড চেইন আছে৷ ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী আছে৷ তারপরও আমরা বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি৷
এই ভ্যাকসিন যারা পাবেন তাদের অগ্রাধিকার কীভাবে নির্ধারণ করছেন?
এখানে ফ্রন্ট লাইনাররা আগে পাবেন৷ যারা সরাসরি কোভিড চিকিৎসা বা ব্যবস্থাপনায় যুক্ত৷ স্বাভাবিকভাবে স্বাস্থ্যকর্মীরা সবার আগে পাবেন৷ এরপর পুলিশের সদস্যরা আছেন৷ প্রশাসন ও সংবাদকর্মীরা আছেন৷ যাদের বয়স ষাটোর্ধ তারা আছেন৷ যারা করোনা ঝুঁকিতে আছেন এবং আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় আছেন তারা আছেন৷ এমনকি পরিবহনকর্মীরাও আছেন৷
অগ্রাধিকারের বাইরে কারো এই ভ্যাকসিন পাওয়ার সুযোগ থাকবে কিনা?
না অগ্রাধিকারের বাইরে সাধারণ মানুষের জন্য এই ভ্যাকসিন পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকছে না৷ তবে আমরা পর্যায়ক্রমে সবাইকেই টিকা দেব৷ এখন যেহেতু সব টিকা এক সঙ্গে পাচ্ছি না৷ ফেস বাই ফেস আসছে৷ আবার সবাইকে একসঙ্গে টিকা দেয়া সম্ভবও না৷ তাই যারা সবচেয়ে বেশি করোনা ঝুঁকিতে আছেন তাদেরকেই আগে রক্ষা করতে চাই৷ তারপর পর্যায়ক্রমে সবাই পাবেন৷
প্রথম যে ৫০ লাখ ডোজ আসছে তা দিয়ে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত সবাইকে তো আর টিকা দেয়া যাবে না৷ তাদের মধ্যে তাহলে কারা আগে পাবেন?
আমরা সিভিল সার্জনদের কাছে তালিকা চেয়েছি ৷ তারা সব জেলা থেকেই অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সব গ্রুপেরই তালিকা পাঠাবেন৷ সেই তালিকা থেকেই প্রথম ৫০ লাখ কাকে দেব কীভাবে দেব তা ঠিক করব৷
এই তালিকা চূড়ান্ত হতে কতদিন লাগবে?
ডিসেম্বরের মধ্যে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আমরা তালিকা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছি৷
এভাবে ধাপে ধাপে ভ্যাকসিন আসলে কবে নাগাদ দেশের সব মানুষ ভ্যাকসিন পেতে পারে?
শেষ করার বিষয়েতো বলা যাবে না৷ আমরা তো এখনো শুরুই করতে পারি নাই৷ আমরা এখন পর্যন্ত যে ভ্যাকসিনের নিশ্চয়তা পেয়েছি তাতো বললাম৷ ৮০ ভাগ জনগোষ্ঠীকে দিতে হলে আমাদের আরো অনেক ভ্যাকসিন লাগবে৷ সেগুলো আমরা কত দিনে সংগ্রহ করতে পারব৷ আর সংগ্রহ করতে পারলে কত দিনে দেয়া যাবে তাতো এখনো নিশ্চিত নয়৷ আমাদের দেশে ১৭ কোটি মানুষ আছে৷ তার ৮০ ভাগ হলে ১৩-১৪ কোটি মানুষকে তো ভ্যাকসিন দিতে হবে৷ এটা তো সময় সাপেক্ষ ব্যাপার৷
ভ্যাকসিন কি কেউ একবার নিলেই হবে? একবার নিলেই স্থায়ীভাবে ইমিউনিটি গ্রো করবে?
আমরা দেখছি যারা করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন তারা আবার সেকেন্ড এবং থার্ড টাইমও আক্রান্ত হচ্ছেন৷ একবার আক্রান্ত হলে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়৷ কিন্তু সেই অ্যান্টিবডি আবার বিলীন হয়ে যাচ্ছে৷ সে কারণেই তারা সেকেন্ড, থার্ড টাইম আক্রান্ত হচ্ছেন৷ ভ্যাকসিনের ব্যাপারে একই ঘটনা ঘটতে পারে৷ এখন একজন মানুষকে আমরা দুইটি ডোজ দেব৷ প্রথমটি নেয়ার পর একমাস (২৮ দিন) পর আরেকটি৷ এরপর আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে যে কারুর থার্ড বা ফোর্থ ভ্যাকসিন লাগবে কিনা৷ এটা জানা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার৷ গবেষণার ব্যাপার৷
এখন তো সরকার এনে বিনামূল্যে দিচ্ছে৷ কিন্তু বেসরকারি পর্যায়ে ভ্যাকসিন এনে বিক্রির কোনো নীতিমালা করছেন কিনা?
একটা সময়ে হয়তো বেসরকারি পর্যায়ে চলেও আসতে পারে৷ তবে এ ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হবে৷ তবে বেসরকারি খাতে এই টিকা সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিতরণের মত অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা আছে কিনা? তা না থাকলে তো আর সরকার অনুমোদন দেবে না৷
সেরাম ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিন কে আগে পাবে? বাংলাদেশ না ভারত?
আমাদের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তাতে দুই দেশ একই সঙ্গে পাওয়ার কথা৷ তারা টিকা উৎপাদন করে একইসঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতকে দেবে৷ চুক্তিতে সেরকমই লেখা আছে৷