দেশের সবচেয়ে বড় সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে
সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ও আহত মানুষদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে ৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে৷ এর ফলে প্রকল্প এলাকায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৩০ শতাংশ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
সবচেয়ে বড় সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প
গত জুনে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়৷ চলবে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত৷ খরচ হবে ৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা৷ এর মধ্যে ৩ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা ঋণসহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক৷ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে প্রকল্প এলাকায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৩০ শতাংশ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল্লায়ে সেক প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরুর অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় এটিই বিশ্বব্যাংকের প্রথম নিরাপদ সড়কের প্রকল্প৷
কী করা হবে?
প্রকল্পের জন্য দুটি মহাসড়ক বেছে নেওয়া হয়েছে - গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা এবং নাটোর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ৷ এই দুই মহাসড়কের সংকেত (সাইন) ঠিক করা হবে৷ এছাড়া আশেপাশের হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দুর্ঘটনায় আহত মানুষদের দ্রুত চিকিৎসার লক্ষ্যে বিনা পয়সায় অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হবে৷ ঢাকায় আহত মানুষদের দ্রুত চিকিৎসাসেবা দিতে প্রয়োজনে মোটরসাইকেল অ্যাম্বুলেন্স চালু করা হতে পারে৷
প্রশিক্ষণ
প্রকল্পের আওতায় পেশাদার চালকের প্রশিক্ষণ, দুর্ঘটনার তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে হাইওয়ে পুলিশকে যন্ত্রপাতি দেওয়া, হাইওয়ে পুলিশের জন্য মাদারীপুরে একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করা হবে৷
আর্থিক ক্ষতি জিডিপির ৫ শতাংশ
প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে সড়স ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ১৯৯০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি তিন গুণ বেড়েছে৷ সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের মতো৷
দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার স্থানগুলো পর্যবেক্ষণ করে সারা দেশে ২২৯টি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করেছে বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন৷ এর মধ্যে ১০৮টিকে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ ও ১২১টিকে সাধারণ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করছে তারা৷
অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা
টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দিনাজপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা জেলার প্রতিটির চারটি করে উপজেলা এই তালিকায় আছে৷ ২০১৪ সালে ব্র্যাকের সহযোগিতায় করা গবেষণায় পাঁচটি জেলাকে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ বলা হয়েছিল৷ এগুলো হলো কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ ও ঢাকা৷
নিহতের সংখ্যা
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসেব বলছে, ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় হাজার ৫৪৮ জন মারা গেছেন, যা এর আগের তিন বছরের তুলনায় বেশি৷ আরেক সংস্থা যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে৷
ক্ষতিপূরণ
সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু হচ্ছে ২২ অক্টোবর৷ দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে তার পরিবার পাঁচ লাখ টাকা এবং আহত ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন৷ তবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত টাকা কোথা থেকে আসবে, দরিদ্র মানুষের পক্ষে আবেদন করে ক্ষতিপূরণ পাওয়া সহজ হবে কিনা, এত আবেদন পর্যালোচনা করার মতো সক্ষমতা আছে কিনা, সেসব নিয়ে শঙ্কা রয়েছে৷