দুর্নীতির বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধে সামিল আপামর জনসাধারণ
৮ এপ্রিল ২০১১নতুন দিল্লির স্নায়ুকেন্দ্রে ৭২ বছর বয়সী গান্ধীবাদী সমাজসেবি আন্না হাজারের অনশন মঞ্চ ঘিরে প্রতিদিন সর্বস্তরের মানুষের ভিড় যেভাবে বাড়ছে, তা দেখে মনে হচ্ছে তিনি বুঝি এক নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটিয়ে দিচ্ছেন৷ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে৷ বলিউড তারকা থেকে বুদ্ধিজীবি, ছাত্রছাত্রী, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, খেটে খাওয়া মানুষ কেউ বাদ নেই৷ পতাকা ফেস্টুন, ব্যানার নিয়ে দলে দলে মানুষ জড়ো হচ্ছে মঞ্চের চারপাশে৷ ব্যানারে লেখা, ১৮৫৭-এর বিপ্লব, ১৯৪৭-এর স্বাধীনতা, ২০১১-এর লোকপাল বিল৷ নাগরিক সমাজের বক্তব্য, দুর্নীতি কুরে কুরে খাচ্ছে গোটা সমাজ জীবনকে৷
জন লোকপাল বিলের দুটি মূল দাবি সরকার মেনে নিতে অস্বীকার করায় আন্না হাজারে অনশন চালিয়ে যাবার এবং দাবি জোরালো করতে আগামী ১৩ই এপ্রিল থেকে দেশব্যাপী জেল ভরো আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন৷ তবে এই আন্দোলন হবে গান্ধীজীর অহিংস পথে৷ জনতার আওয়াজ সরকারকে শুনতেই হবে বলেন তিনি৷
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, অর্থমন্ত্র প্রণব মুখোপাধ্যায়, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের পর টেলিকম মন্ত্রী কপিল সিব্বাল বলেন, যৌথ খসড়া কমিটিতে নাগরিক সমাজের ৫০% সদস্য থাকতে পারে কিন্তু কমিটির চেয়ারম্যান হবেন কোন শীর্ষমন্ত্রী৷ নাহলে সেই কমিটিতে কোন মন্ত্রী থাকবেন না, সরকারের পক্ষ থেকে থাকবেন আধিকারিকরা৷ আর খসড়া কমিটি গঠনের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা সম্ভব নয়, আইন মন্ত্রণালয়ের চিঠি দেয়া হবে৷ এই ইস্যু নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও একপ্রস্থ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই আন্দোলন কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকারের উচ্ছেদ চায়না৷ চায়না রাজনৈতিক দলগুলির সমর্থন৷ আসল জনশক্তিই আন্না হাজারের মঞ্চের কাছ থেকে সরিয়ে রেখেছে রাজনৈতিক নেতাদের৷ প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে আন্না বলেছেন, এই আন্দোলনকে অপমান করবেন না৷ ফলে অস্বস্তিতে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলি বিশেষ করে বিজেপি৷ সংসদে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের রাশ এই মুহূর্তে চলে গেছে আন্না হাজারের হাতে৷
কে এই আন্না হাজারে ? কিষাণ বাপাট বাবুরাও হাজারের জন্ম মহারাষ্ট্রের এক কৃষক পরিবারে৷ লোকে তাঁকে চেনে আন্না হাজারে নামে৷ যুবক আন্না যোগ দেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ট্রাক ড্রাইভার পদে৷ স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে লেগে পড়েন সমাজ সেবার কাজে৷ গ্রামে যুবকদের মধ্যে মদের নেশা বন্ধ করা, অস্পৃশ্যতা দূর করা, শিক্ষার বিস্তার, দুধের উৎপাদন বাড়ানো, খরচ কমানোর জন্য গণবিবাহ চালু করা সর্বোপরি গ্রামসভা গঠন করে গ্রামের সমস্যা সমাধানে মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রথায় আন্না হাজারের অবদান অনস্বীকার্য৷
প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুনদিল্লি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ