দুর্গাপূজার নিরাপত্তা পরিকল্পনায় যা আছে, যা নেই
১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে দুর্গাপূজা শুরু৷ পূজার সময়ের নিরাপত্তা পরিকল্পনা জানিয়েছে সরকার৷ সেখানে আয়োজকদের কিছু নির্দেশনাও দেয়া হয়৷ ছবিঘরে থাকছে সেই পরিকল্পনার বিস্তারিত ও তার মূল্যায়ন৷
২৪ ঘণ্টা আনসার ও গোয়েন্দা নজরদারি
এবার ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে৷ সরকার বলছে, এসব মণ্ডপে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ছাড়াও ২৪ ঘণ্টা আনসার বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে৷ প্রায় এক লাখ ৯২ হাজার আনসার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন বলে জানা গেলেও পুলিশের সংখ্যা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি৷ এছাড়া গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরাও নজরদারি করবেন৷
বাজেট কে দেবে?
পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি কাজল দেবনাথ বলেন, ‘‘আনসারের মহাপরিচালক বলেছেন পর্যাপ্ত আনসার আছে, কিন্তু বাজেট লাগবে৷ বাজেট কি আমরা দেবো? সরকার যদি বহন করে তাহলে তো ভালো৷ এটা সরকারেরই দায়িত্ব৷’’
সিসি ক্যামেরা লাগানোর শর্ত
সব পূজামণ্ডপে বাধ্যতামূলকভাবে সিসি ক্যামেরা লাগাতে বলেছে সরকার৷ এ ব্যাপারে পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, ‘‘সব মণ্ডপে কি সিসি ক্যামেরা লাগানো সম্ভব? এখানে খরচের বিষয়ও আছে৷’’
সামাজিক মাধ্যমে নজরদারি
পূজার সময় কোনো ধরনের গুজব ছড়িানো হয় কিনা সে ব্যাপারে সতর্ক নজর রাখা হবে৷ বিশেষ করে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যম মনিটরিং করা হবে৷ কোনো ধরনের গুজব ছড়ানোকে কঠোর হাতে দমন করা করা হবে৷
কন্ট্রোল রুম
পূজার সময় পুলিশ সদরদপ্তর এবং জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে৷ ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করা যাবে৷ এছাড়া থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত৷
আজানের সময় সহনীয় মাত্রা
আজানের সময় পূজামণ্ডপে বাদ্যযন্ত্রের শব্দ সহনীয় রাখতে বলা হয়েছে৷
সুবিধাজনক স্থানে মণ্ডপ
যেখানে গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না সেখানে মণ্ডপ করা যাবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার৷
আর্মব্যান্ড
পূজামণ্ডপের স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে আর্মব্যান্ড পরতে হবে৷
পুলিশ আছে, পূজা আছে?
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলছেন তার মানে হলো পুলিশ আছে, পূজা আছে৷ পুলিশ নেই, পূজাও নেই৷ এইরকম পরিস্থিতি তো আমরা চাই না৷ পুলিশ পাহারা দিয়ে যদি পূজা উদযাপন করতে হয় তাহলে পরিস্থিতি কেমন তা বোঝাই যাচ্ছে৷’’
‘পুলিশী পাহারা দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা কমানো যাবে বলে মনে করি না’
সুলতানা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকারের এসব উদ্যোগে দুর্গাপূজাকে উপলক্ষ্য করে যে সাম্প্রদায়িক হামলা, সেটা হয়ত কিছুটা থামানো যাবে৷ কিন্তু কতদিন এভাবে পাহারা দেবে? হামলা তো শুধু পূজার সময় হচ্ছে না, প্রতিদিনই হচ্ছে৷ মন্দিরে মসজিদের দানবাক্স ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ হিন্দু শব্দটা এখন গালাগালিতে পরিণত করা হয়েছে৷ পুলিশী পাহারা দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা কমানো যাবে এটা আমি মনে করি না৷’’
‘এ তো শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ নয়, রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার’
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তো প্রতি বছরই এমন উদ্যোগের কথা বলে৷ এটা করে যে সাম্প্রদায়িক হামলা সব সময় ঠেকানো যায় না, সেটা তো প্রমাণ হয়েছে৷ সমাজে যে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানো হচ্ছে, সেখানে তো এক ধরনের রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা আমরা দেখছি৷ এখানে শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ না, রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার৷ সেই অঙ্গীকার কি আমরা দেখছি?’’
‘সব তারা করলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ কী?’
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে আমি অবাক হয়েছি৷ তিনি বলেছেন, মণ্ডপ কর্তৃপক্ষকে সিসিটিভি লাগাতে হবে৷ নিজস্ব পাহারার লোকও ঠিক করতে হবে মণ্ডপ কর্তৃপক্ষকে৷ তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজটা কী? হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবে যদি আমরা নিরাপত্তা দিতে না পারি, তাহলে এই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে আমরা কী করবো?’’
‘যেখানে যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার সেটা নেয়া হচ্ছে’
দুর্গাপূজার সময়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পর্কে পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. হায়দার আলী খান বলেন, ‘‘পুজোর সময় যেখানে যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার সেটা নেয়া হচ্ছে৷ গতবছর পুজোর সময় হামলার ঘটনার জন্য ৫২টির মতো মামলা হয়েছিল৷ অধিকাংশ মামলার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে৷ কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন শরীফ রাখার ঘটনায় অভিযুক্ত ইকবাল এখনও কারাগারেই আছে৷’’